Saturday 12 September 2015

হজ্জ বা উমরাতে নিয়ত উচ্চারণ



প্রশ্ন: নিয়ত উচ্চারণ করা বিদআত হলে হজ্জ ও উমরার ক্ষেত্রে নিয়ত উচ্চারণ করার গূঢ় রহস্য কি?
উত্তর:
আলহামদুলিল্লাহ।
নিয়তের স্থান হচ্ছে- কলব বা অন্তর। নিয়ত উচ্চারণ করা বিদআত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীবর্গ থেকে সাব্যস্ত হয়নি যে, তারা কোন ইবাদতের পূর্বে নিয়ত উচ্চারণ করেছেন। হজ্জ ও উমরার তালবিয়া নিয়ত নয়।
শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন:
নিয়ত উচ্চারণ করা বিদআত। সজোরে নিয়ত পড়া কঠিন গুনাহ। সুন্নাহ হচ্ছে- মনে মনে নিয়ত করা। কারণ আল্লাহ তাআলা গোপন ও সঙ্গোপনের সবকিছু জানেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “বলুনঃ তোমরা কি তোমাদের ধার্মিকতা আল্লাহকে অবহিত করছ? অথচ ভূমণ্ডলে ও নভোমণ্ডলে যা কিছু আছে সব আল্লাহ জানেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।”[সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১৬]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, কিংবা তাঁর সাহাবীবর্গ কিংবা অনুসরণযোগ্য ইমামদের থেকে ‘নিয়ত উচ্চারণ করা’ সাব্যস্ত হয়নি। সুতরাং জানা গেল যে, এটি শরিয়তে সিদ্ধ নয়। বরং নবপ্রচলিত বিদআত। আল্লাহই তাওফিকদাতা।[ইসলামী ফতোয়াসমগ্র (২/৩১৫)]
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে নামায, তাহারাত (পবিত্রতা), রোজা কিংবা অন্য কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে নিয়ত উচ্চারণ করা বর্ণিত হয়নি। এমনকি হজ্জ-উমরার ক্ষেত্রেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন না যে, ‘আল্লাহু্ম্মা ইন্নি উরিদু কাযা ওয়া কাযা...’ (অর্থ- হে আল্লাহ, আমি অমুক অমুক আমল করার সংকল্প করেছি...)।

আল্লাহই ভাল জানেন। এটি না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল থেকে সাব্যস্ত হয়েছে; আর না তিনি তাঁর কোন সাহাবীকে এটা উচ্চারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু এতটুকু পাওয়া যায় যে, দুবাআ বিনতে যুবাইর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালেন যে, তিনি হজ্জ করতে চান; তবে তিনি অসুস্থ। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি হজ্জ শুরু কর এবং এ শর্ত করে নাও যে, ‘মাহিল্লি হাইছু হাবাসতানি’ (অর্থ- আপনি যেখানে আমাকে আটকে রাখেন আমি সেখানে হালাল হয়ে যাব)। তখন তুমি তোমার রবের সাথে যে শর্ত করেছেন সে শর্ত মোতাবেক হালাল হতে পারবে। এখানে মৌখিক উচ্চারণের বিষয়টি এসেছে যেহেতু হজ্জটা মানতের মত। মানত মৌখিক উচ্চারণের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। কেননা কোন লোক যদি মনে মনে মানতের নিয়ত করে তাহলে সে মানত সংঘটিত হবে না। যেহেতু হজ্জ পরিপূর্ণ করার দিক থেকে মানতের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্জ শুরু করার সময় এই বাক্য বলে মৌখিকভাবে শর্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন: “ইন হাবাসানি হাবেস ফা মাহিল্লি হাইছু হাবাসতানি” (অর্থ- যদি কোন প্রতিবন্ধকতা দ্বারা আমি আটকে পড়ি তাহলে যেখানে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছি সেখানে হালাল হয়ে যাব)।
পক্ষান্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে যে এসেছে, “আমার নিকটে জিব্রাইল এসে বলেন: আপনি এই মোবারকময় উপত্যকায় নামায আদায় করুন এবং বলুন: “উমরাতান ফি হাজ্জা” (অর্থ- উমরাসহ হজ্জ) কিংবা “উমরাতান ওয়া হাজ্জা” (অর্থ- হজ্জ ও উমরা)। এর মানে এ নয় যে, তিনি নিয়ত উচ্চারণ করেছেন। বরং এর অর্থ হচ্ছে- তিনি তাঁর তালবিয়ার মধ্যে হজ্জের প্রকারটি উল্লেখ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়ত উচ্চারণ করেননি।[ইসলামী ফতোয়াসমগ্র (২/২১৬)]
আল্লাহই ভাল জানেন।
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...