Friday 10 October 2014

দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে ইসলামের বিধান


রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

flower-game-screenshot-2
শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ
প্রশ্নঃ কারও আগমনের সাথে উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি?
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে
কারও আগমনের সাথে উঠে দাঁড়ানোর ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ একটি বিস্তারিত উত্তর প্রদান করেছেন, শরীয়াহর দলীলের উপর ভিত্তি করে, তাঁর এ মতামত উল্লেখ করা হলঃ

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা খোলাফায়ে রাশেদীনের সমকালীন সালাফগণের কারোরই এই রীতি বা অভ্যাস ছিল না যে তাঁরা প্রতিবার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) দেখামাত্রই উঠে দাঁড়িয়ে যেতেন, যেটা অনেক মানুষ করে থাকে । বরং আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “সাহাবায়ে কিরামের নিকট রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপেক্ষা কোন ব্যক্তিই অধিক প্রিয় ছিলো না। অথচ তাঁরা যখন তাঁকে দেখিতেন তখন দাঁড়াতেন না। কেননা, তাঁরা জানতেন যে, তিনি ইহা পছন্দ করেন না”। ( তিরমিযি ২৭৫৪, সহীহ তিরমিযিতে হাদীসটি আলবানী কর্তৃক সহীহ) কিন্তু তাঁরা তাঁর জন্যে দাঁড়াতে পারতেন যে বাইরে থেকে ফিরত, তাকে স্বাগত জানানোর জন্যে, যেমন বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইকরিমা’র জন্য উঠে দাঁড়ান, এবং তিনি আনসারগণকে বলেছিলেন যখন সা’দ বিন মুয়াজ এসেছিলেন, “তোমরা তোমাদের সর্দারের জন্য উঠে দাঁড়াও”; (বুখারী ৩০৪৩, মুসলিম ১৭৬৮)। আর এই ঘটনাটি ছিল যখন তিনি বনু কুরাইজার ব্যাপারে বিচারের রায় প্রদান করতে এসেছিলেন কারণ তারা বলেছিল যে তাঁর রায় তারা গ্রহণ করবে।
মানুষের যা করা উচিত তা হল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সমকালীন সালাফগণের রীতি-পদ্ধতি অনুসরণ করা, কারণ তারা হলেন সর্বোত্তম প্রজন্ম এবং সর্বোত্তম বাণী হল আল্লাহর বাণী, এবং সর্বোত্তম পথ নির্দেশনা হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পথ নির্দেশনা। কেউ যেন মানব জাতির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির পথ নির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেয়, কিংবা শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের পথ নির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এর থেকে নিকৃষ্ট কিছু অনুসরণ করে। এবং নেতা কিংবা প্রধানগণ যেন সাধারণের মাঝে এমন কোন কিছুর অনুমোদন প্রদান না করেন যে তাকে দেখামাত্রই সাধারণ লোকদের উঠে দাঁড়াতে হবে, বরং মানুষের উচিত হল সহজ-সাধারণ আচরণের দ্বারা তাকে স্বাগত জানানো।
আর দূর থেকে ভ্রমণ করে ফিরে এসেছে এমন লোকের ব্যাপারে উঠে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য যদি হয় তাকে স্বাগত জানানো তাহলে তা সুন্দর আচরণ। আর জনসাধারণের রীতিনীতি যদি এমন হয় যে, উঠে দাঁড়ানোর মাধ্যমে আগত ব্যক্তিকে সম্মান দেখানো হয় এবং যদি তারা উঠে না দাঁড়ায় তাহলে সে ব্যক্তি অপমানিত বোধ করে কিংবা সে ব্যক্তি সুন্নাহ অনুসারে আচরণ জানে না, সেক্ষেত্রে আগত ব্যক্তির জন্যে উঠে দাঁড়ানোই অপেক্ষাকৃত ভালো আচরণ, কারণ এর দ্বারা তাদের মধ্যে একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি হতে পারে এবং তাদের অন্তর থেকে ঘৃণা ও বিদ্বেষ দূর করে দিবে। কিন্তু লোকটি যদি সুন্নাহ অনুসারে আচরণ সম্পর্কে অভ্যস্ত থাকে তাহলে উঠে না দাঁড়ানো তাকে অপমানিত করবে না।
নবাগত ব্যক্তির জন্যে উঠে দাঁড়ানোর ব্যাপারে সেই কথা বলা হয়নি যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইহাতে আনন্দ পায় যে, লোকজন তাহার জন্য দাঁড়ানো অবস্থায় স্থির হয়ে থাকুক, তবে সে যেন নিজের জন্য জাহান্নামে বাসস্থান নির্ধারণ করে নেয়”। (আবু দাউদ,তিরমিযি ২৭৫৫, আলবানী কর্তৃক সহীহ তিরমিযি)। এর মানে হল (একথা বলা হয়েছে সেই ব্যক্তির জন্যে) কারও জন্য উঠে দাঁড়ানো হল অথচ সেই ব্যক্তি নিজে বসে আছে, নবাগত ব্যক্তিকে স্বাগত জানানোর জন্য উঠে দাঁড়ানোর ব্যাপারে এই কথা বলা হয়নি। একারণেই উলামাগণ এই দুই ধরণের উঠে দাঁড়ানোর মধ্যে পৃথকীকরণ করেছে্‌ন, কারণ যারা নবাগত ব্যক্তিকে স্বাগত জানানোর জন্যে উঠে দাঁড়ায় তারা তার সাথে একইভাবে (দাঁড়ানো) অবস্থায় আছে কিন্তু কোন ব্যক্তি নিজে বসে আছে অথচ লোকেরা তার জন্যে উঠে দাঁড়ায় উভয় ঘটনা এক নয়।
সহীহ মুসলিমে প্রমাণিত আছে, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থতার দরুণ বসা অবস্থায় সালাতের ইমামতি করলেন, তাঁরা দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন, তিনি তাঁদের বসতে বললেন এবং বললেন, “পারসিরা যেভাবে একে অপরকে সম্মান দেখায় সেভাবে আমাকে সম্মান প্রদর্শন করো না” [১]। আর তিনি নিজে বসা অবস্থায় তাদেরকে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে নিষেধ করলেন, যেন সাহাবাগণের সাথে এতটুকু সাদৃশ্যও না থাকে যেভাবে পারস্য দেশের লোকেরা তাদের নেতাদের জন্য দাঁড়িয়ে অথচ তাদের নেতারা বসে থাকে।
পরিশেষে, যত বেশি সম্ভব সালাফগণের আচরণ ও রীতিনীতি অনুসরণ করাই হল সর্বোত্তম আচরণ।
যদি কোন ব্যক্তি এতে বিশ্বাস স্থাপন না করে এবং এই ধরণের আচরণে অভ্যস্ত না হয়, এবং যেভাবে (প্রচলিত পদ্ধতিতে) লোকেরা তাকে সম্মান দেখায় সেভাবে সম্মান প্রদর্শন না করাতে যদি সে আরও মন্দ কোন পরিণতির দিকে নিয়ে যায় তবে সেক্ষেত্রে আমরা কম ক্ষতির কাজটি করে বেশি ক্ষতির থেকে নিজেদের রক্ষা করব এবং তাই করব যা ছোট উপকারের চেয়ে বড় উপকার করে থাকে ”।
- ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ’র উক্তি সমাপ্ত।
যে বিষয়টি এই আলোচনা আরও স্পষ্ট করে তুলতে পারে তা হল, সহীহাইনে আলোচিত কা’ব ইবন মালিকের ঘটনাটি, যখন আল্লাহ্‌ তাঁর এবং তাঁর দুইজন সঙ্গীর তাওবা কবুল করলেন, যেখানে বর্ণিত আছে, যখন কা’ব মসজিদে প্রবেশ করলেন, তালহা ইবন উবাইদাল্লাহ উঠে দাঁড়ালেন, তাঁর দিকে দৌড়ে গেলেন এবং স্বাগত জানালেন অভিনন্দিত করলেন আল্লাহর ক্ষমার কারণে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ঘটনাকে প্রত্যাখান করেননি। এই ঘটনা নির্দেশ করে যে, আগত ব্যক্তির জন্যে উঠে দাঁড়ানো, তার সাথে হাত মিলানো এবং স্বাগত জানানো অনুমোদিত। এই বর্ণণাটিও অনুরূপ যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কন্যা ফাতিমার ঘরে প্রবেশ করলেন তিনি তাঁর জন্যে উঠে দাঁড়ালেন এবং তাঁর হাত ধরলেন এবং তার নিজের বসার স্থানে তাকে বসালেন। এবং যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ফাতিমা রদিয়াল্লাহু আনহা আসতেন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত ধরতেন এবং তাঁর নিজের বসার স্থানে তাকে বসাতেন। তিরমিযিতে সহীহ রূপে চিহ্নিত।
আল্লাহ্‌ সবচেয়ে ভালো জানেন।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...