Tuesday, 1 April 2025

মুসলমানদের উত্থান-পতনের ইতিহাস


৭১১ খৃষ্টাব্দে বীরসেনা তারেক্ব বিন যিয়াদের সেনাপতিত্বে মুসলিমগণ ইউরোপের 'স্পেন'  জয়লাভ করেন। ১৪৯২ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত এটি মুসলিম শাসনাধীন রাষ্ট্র ছিল। এই দীর্ঘ আটশত বছরে মুসলিমগণ ইউরোপকে ঢেলে সাজালেন। জ্ঞান-বিজ্ঞান, কলেজ, ইউনিভার্সিটি ইত্যাদিতে দেশকে নূতন রূপ দিয়েছিলেন।

মুসলমানদের যখন লক্ষ লক্ষ গ্রন্থরাজি, তখন রানী ইথাবিলার গ্রন্থাগারে মাত্র ২০১ খানা বই। ফ্রান্সের শাহী কুতুব-খানায় ৯০০ খানা বই ছিল। মুসলমানদের যেখানে বহু বিষয়ের বই ছিল, সেখানে খৃষ্টানদের কেবল ইনজীল ও তওরাতের বিভিন্ন সংস্করণ। (তথ্য সংগ্রহ, উর্দু তরজুমান, ১লা নভেম্বর ১৯৮২ খৃঃ সংখ্যা থেকে)

 এরপর পতনঃ

বিলাসিতা ও আপোষ-দ্বন্দ্বের জন্য খৃষ্টানরা মওকা পেয়ে গেল। রানী ইথাবিলা ও রাজা ফার্ডিন্যান্ড বৈবাহিকসূত্রে আবদ্ধ হয়ে মুসলিম নিধনে উঠে পড়ে লাগলেন। মুসলিমগণ পরাজিত হতে লাগলেন। শেষে তদানীন্তন স্পেনের রাজধানী গ্রানাডায় আশ্রয় নিলেন। রাজা ফার্ডিন্যান্ড বললেন, মুসলিম বাহিনী যদি নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে মসজিদে অবস্থান করে, তবে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হবে। মুসলমানরা আল্লাহর উপর 'তাওয়াক্কুল' হারিয়ে রাজার কথায় বিশ্বাস করে মসজিদে মসজিদে নিরস্ত্র অবস্থায় প্রবেশ করলেন। অমনি রাজা নিজের সেনাদেরকে আদেশ করলেন যে, মসজিদগুলোতে শিকল তুলে আগুন ধরিয়ে দাও।

যেমনি আদেশ তেমনি কাজ। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল। মুসলিমদেরকে নির্মমভাবে মাছ পোড়া করে দিল। পতনোত্তর কালে বিদ্রোহীর নির্দেশে গ্রানাডায় ৮০ হাজার গ্রন্থ পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হল। আর সারা দেশ থেকে আরাবী ক্লাসের লক্ষাধিক গ্রন্থ পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করা হল!

এর দুঃখ কেবল মুসলমানদেরই নয় বরং ঐতিহাসিক 'স্কট' বলেছেন, 'এ এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা, এমন এক মুসীবত যার উপর শুধু বর্তমান যুগ নয়, বরং আগামী দিনের প্রত্যেক জ্ঞান-পিপাসু ব্যক্তিকে অশ্রু বিসর্জন করতে হবে। স্পেনের পতনের মত অত বড় পতন বুঝি মুসলিমদের আর হয়নি। এই পতনের তারীখ, ১৪৯২ খৃষ্টাব্দের ১লা এপ্রিল।

এই দিনে রাজা ফার্ডিন্যান্ড ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, হে মুসলিম! তোমরা 'এপ্রিল ফুল' Fool অর্থে বোকা। বোকা মুসলমান আজও পয়লা এপ্রিলে সেই রসিকতার খেলা খেলে থাকে। এই খেলাতে যে, মুসলমানদের অভিশাপ ও পতন লুকিয়ে আছে তা মুসলমানদের জানা নেই। এ ইতিহাস কান্নার ইতিহাস। এপ্রিল ফুলের রসিকতা খেলা খৃষ্টানদের পক্ষেই শোভা পায়। মুসলমানদের জন্য এটা মোটেই শোভা পায় না।

খৃষ্টানবাহিনী রাজত্ব করায়ত্ব করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং তারা মুসলমানদের রচিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধন ভান্ডার মূল্যবান গ্রন্থগুলি না পুড়িয়ে যত্ন করে গচ্ছিত করে নিজেদের করায়ত্ত করেছে। পরবর্তী কালে ল্যাটিন ইত্যাদি ভাষাতে অনুবাদ করে মুসলমানদের নাম উচ্ছেদ করে নিজেদের নাম বসিয়ে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। আরবী কবি এরই শোক-কাহিনী বড় ব্যাথাতুর মনে গেয়েছেন। তার বাংলা অনুবাদটি এই রকমঃ-

                  রাজ্য গেছে, তাতে কান্না কেন?  সে তো ক্ষণেকের বস্তু!

                                  শাশ্বত আইন মেনে নিতে হয়

                                     নিষ্কৃতি নেই তা হতে;

                              কিন্তু ঐ বিদ্যাধন, মতিসম গ্রন্থরাজী

                                  নিয়ে গেছে ইংরেজ জাতি,

                                     দেখিলে কান্না আসে

                                      হৃদয় দগ্ধ হয় ক্ষতে।

(বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, 'এপ্রিল ফুলের বেড়াজালে মুসলিম সমাজ' থেকে সংগৃহীত)

বইঃ বক্তৃতাসম্ভার

উস্তায মওলানা আব্দুর রঊফ শামীম (রাহিমাহুল্লাহ)

(মতান্তরে এই প্রেক্ষাপট ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত নয়। উক্ত করুণ ইতিহাসের সাথে ১লা এপ্রিলের যোগসূত্র নেই। আমি নিজে মদীনা ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ উস্তাযকে সরাসরি এপ্রিল ফুলের ইতিহাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি মুসলিমদের দুর্ভাগ্যের ঐ ইতিহাসের সাথে ১লা এপ্রিলের কোন যোগ থাকার কথা পড়েননি বলে মন্তব্য করেছিলেন। আর আল্লাহই ভালো জানেন।)

---আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী

Friday, 7 March 2025

হিজবুত তাহরীর এর ভয়ংকর আক্বীদাহ!



প্রতিষ্ঠাতা:

এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম আমীর হচ্ছেন তকীউদ্দীন নাবাহানী। তিনি ১৯০৯ সালে বর্তমান ইসরাঈলের হাইফা শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৮ সালে বাইরুতে হিজবুত তাহরীর প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি বাইরুতে ইন্তকাল করেন।

.

দলটির মূলনীতি:

এ দলের মূলনীতি ও মতাদর্শ 

'মু'তাযিলা ও আশআরী সম্প্রদায়ের সাথে মিলে যায়। তারা শরীয়তের দলীলের উপর মানবীয় বিবেক বুদ্ধিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

.

এই দলের কার্যকলাপ সম্পর্কে যতদূর জানা যায়:

তাদের একমাত্র দাবী হচ্ছে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। এই দিকেই তারা আহবান করে। ঈমান, নামায, রোজা ও ইসলামের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে তাদের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না। তাদের অনেক নেতাই নিজ নিজ দেশ ছেড়ে পাশ্চাত্য দেশে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। তারা খেলাফত পুনরুদ্ধার করতে চায়। কিন্তু শির্ক, বিদআত, সুফীবাদ ও পাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে যে উছমানী খেলাফতের পতন ঘটেছে, তা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন ছাড়াই আল্লাহর কাছে ভাগ্যের পরিবর্তন চায়। তারা সবসময় রাজনীতি নিয়েই ভাষণ ও বক্তৃতা দেয়। ইসলামের অন্যান্য মৌলিক শিক্ষার দিকে কোন গুরুত্ব নেই। মুসলিম দেশের সেনাপতি অমুসলিম হলেও তাদের কোন অসুবিধা নেই। 

--- [ দেখুনঃ ৫/৬/১৯৭০ তারিখে এ দলের আমীর নাবহানী কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রশ্নোত্তর সম্বলিত লিফলেট ]

.

তাদের মতে, হারাম পথ অবলম্বন করে লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে পৌঁছাতে কোন অসুবিধা নেই। আমরা যে অর্থে তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস করি, তারা তা অস্বীকার করে। 

---- [ দেখুনঃ আদ্-দাওসীয়া, পৃষ্ঠা নং-১৮ ]

.

আক্বল তথা মানবীয় বিবেক হচ্ছে দ্বীনের অন্যতম মূলনীতি। তাদের এ নীতিটি মুতাযেলাদের কথার সাথে মিলে যায়। কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের একত্রিত হওয়া এবং পরস্পর সহযোগিতা করা জরুরী।

শিয়া ও সুন্নীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

---- [ দেখুনঃ আল-ওয়াঈ আত্ তাহরীরিয়া, সংখ্য ৭৫, বর্ষ-১৯৯৩ ]

.

Sunday, 2 March 2025

আল্লামা বিন বায রাহ. কর্তৃক প্রদত্ব ছোট ছোট প্রশ্নের গুরুত্বপূর্ণ উত্তর (৫৪টি)

 


আল্লামা ইমাম আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ.  রমজান, সিয়াম, তারাবিহ, কিয়ামুল্লায়, ইতিকাফ, সফর, কুরআন তিলাওয়াত, দুআ, উমরা ইত্যা বিষয়ে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত চমৎকার কিছু প্রশ্নোত্তর যেগুলো তিনি ‘ওয়াযায়েফে রমজান’ শীর্ষক কিতাবের ব্যাখ্যা কালীন তাঁর ছাত্রদের পক্ষ থেকে প্রদত্ব বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন।

নিম্নে পাঠকদের উপকার হবে এ আশায় মূল ব্যাখ্যা বাদ দিয়ে সেখান থেকে কেবল সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরগুলোর অনুবাদ পেশ করা হলো। আল্লাহ তওফিক দাতা।

 মোট ৭টি পর্বে ৫৪টি প্রশ্নোত্তর পেশ করা হয়েছে।

❑ প্রশ্নোত্তর: পর্ব-১

১. প্রশ্ন: যে ব্যক্তি রমজান মাসে সুদ খায় তার রোজা গ্রহণযোগ্য হবে কি?

শাইখ: সুদ হারাম, তা রমজান হোক বা অন্য সময়। রমজানসহ সব সময় সুদ খাওয়া নিষিদ্ধ।

২. প্রশ্ন: তাহলে তার রোজা কবুল হবে?

শাইখ: তার রোজা কবুল হওয়ার আশা করা যায়। তবে সে গুনাহের ঝুঁকিতে থাকবে।

৩. প্রশ্ন: ইউরোপের কিছু দোকানে মুসলিম মালিকরা রমজানে মদ ও শুকরের মাংস বিক্রি করে। এ ব্যাপারে কী বলা যাবে?

শাইখ: তাদের সতর্ক করা উচিত এবং বোঝানো দরকার যে, এটি হারাম ও নিন্দনীয় কাজ যেন তারা শিখে ও সংশোধন হয়ে যায় এবং এসব কাজ ছেড়ে দেয়।

৪. প্রশ্ন: কিন্তু এতে কি তাদের রোজার কোনও প্রভাব পড়ে?

শাইখ: না, রোজা নষ্ট হয় না। তবে এতে দাগ পড়ে। রোজা শুধু তার ভঙ্গকারী বিষয়গুলো দ্বারা বাতিল হয়। কিন্তু গুনাহ করলে রোজার পূর্ণতা কমে যায়-সওয়াব ও প্রতিদান হ্রাস পায়।

৫. প্রশ্ন: কোনও নারী যদি মসজিদের কাছাকাছি বাস করে তাহলে কি সে ইমামের সাথে নামাজ পড়তে পারবে যদি সে ইমামের কণ্ঠ শুনতে পায়?

শাইখ: না, সে মসজিদে গিয়ে পড়বে অথবা একা বাসায় পড়বে। যদি সে মসজিদে না থাকে বা ইমাম ও জামাতকে না দেখে তাহলে সে তাদের অনুসরণ করতে পারবে না। তবে যদি সে মসজিদের ভেতরে থাকে বা ইমাম ও জামাতকে দেখতে পায় তাহলে কোনও সমস্যা নেই।

৬. প্রশ্ন: যদি বাড়িটি মসজিদের সাথে সংযুক্ত হয় যেমন মুয়াজ্জিন বা ইমামের বাসা?

শাইখ: তবুও, যদি সে ইমাম বা জামাতকে না দেখে তাহলে সে অনুসরণ করতে পারবে না। বরং একা নামাজ পড়বে।

৭. প্রশ্ন: নারীদের জন্য ঘরে নামাজ পড়াই কি উত্তম?

শাইখ: হ্যাঁ, নারীদের জন্য ঘরে নামাজ পড়াই উত্তম।

Tuesday, 4 February 2025

অদৃশ্য জগতের কথা

 অদৃশ্য জগতের কথা (পর্ব-১, ২)



(১) আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা এবং ফেরেশতাগণকে করেছেন বার্তা বাহক। তারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার ডানা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা তা যোগ করেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সক্ষম।” 

আল্লাহ তাআ’লা তাঁর নিজের ও নবী-রসুলদের মাঝে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেরেশতাদেরকে বার্তাবাহক বা ‘দূত’ বানিয়েছেন। ফেরেশতাদের ডানা রয়েছে, যার সাহায্যে তাঁরা উড়তে পারেন, যাতে তাঁরা দ্রুত আল্লাহর বাণী নবী-রসুলদের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। তাঁদের মাঝে কারো দুইটি ডানা রয়েছে, কারো তিন তিনটি, কারো চার চারটি করে ডানা রয়েছে। কারো কারো এর চাইতে বেশি ডানা রয়েছে। যেমন মেরাজের রাতে আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জিব্রাঈল আ’লাইহিস সালামকে দেখেছিলেন, এ সময় তাঁর ছয়শত ডানা ছিলো। তাঁর ডানাগুলো এতো বড় ছিলো যে, দুইটি ডানার মাঝখানে পূর্ব দিক ও পশ্চিম দিকের সমান দূরত্ব ছিলো। সুরা ফাতির, আয়াত ১-এর তর্জমা ও তাফসীর।

(২) কোন ব্যক্তি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে কাপড় খুললে শয়তান আর তার লজ্জাস্থানের মাঝে আল্লাহ তাআ’লা একটা পর্দা‬ সৃষ্টি করে দেন, যে কারণে শয়তান তার লজ্জাস্থানের দিকে দৃষ্টিপাত করতে পারেনা। সুনানে তিরমিযীঃ ২/৫০৫, ইরওয়াউল গালীলঃ ৪৯, সহিহ আল-জামিঃ ৩/২০৩। 

(৩) নারীদের সম্পূর্ণ শরীর হচ্ছে ‘আওড়াহ’। আওড়াহ অর্থ হচ্ছেঃ গোপনীয় জিনিস, যা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা ফরয। একারণে, নারীরা ঘর থেকে বের হলে শয়তান তাদের দিকে ‪‎চোখ তুলে তাকায়। তিরমিযীঃ ১১৭৩, সহীহ, শায়খ আলবানী, সহীহ তিরমিযীঃ ৯৩৬।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...