Sunday 25 September 2016

মুনাজাতের জন্য জরুরী আরবী দুয়া সমূহঃ



সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। আল্লাহ দরূদ ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর; আর তাঁর বংশধর, তাঁর সাহাবীগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা সুন্দরভাবে তাঁদের অনুসরণ করবে তাদের উপর (আমিন)।
দুয়া মানেই যে ওযু করে নামায পড়ে দুই হাত তুলে চাইতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। হ্যা, দুই হাত তুলে দুয়া করা ভালো। তবে আপনি যেকোনো সময় ওঠতে বসতে, কোথাও যেতে যেতে দুয়া করতে পারেন। এইভাবে দুয়া ও যিকিরের মাধ্যমে আমাদের অবসর সময়গুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করা উচিত। আল্লাহ আমাদের তোওফিক দান করুন, আমিন।
নিচের এই দুয়াগুলো হাত তুলে বা হাত না তুলে, যেকোন মুনাজাতে, ফরয, সুন্নত বা নফল যেকোন নামাযের যেকোন সিজদাতে, নামাযের শেষ অংশে অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাতু ও দুরুদ পড়ার পরে সালাম ফেরানোর আগে দুয়া মাসুরা হিসেবে, বিতিরের কুনুতে, উঠতে বসতে যেকোনো সময়ই পড়া যাবে। দুয়াগুলো নামাযের ভেতরে আরবীতে পড়তে হবে, নামাযের বাইরে হলে আরবী বা বাংলা যেকোন ভাষাতেই করা যাবে।
১. সবচাইতে কম কথায় সবচাইতে বেশি কল্যান প্রার্থনা করার দুয়াঃ
এই দুয়াটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব বেশি বেশি করতেন।
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অধিকাংশ দো‘আ হতঃ
رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْاٰخِرَةِ حَسَـنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণঃ রব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হা’সানাতাওঁ-ওয়াফিল আ-খিরাতি হা’সানাতাওঁ ওয়া-ক্বিনা আ’যাবান্নার।
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ দান করো এবং পরকালের জীবনেও কল্যাণ দান করো। আর তুমি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে বাঁচাও।
সুরা আল-বাক্বারাহঃ ।
২. পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য দুয়াঃ
আমাদের আদিপিতা আদম (আঃ) ও মা হা’ওয়্যা (আঃ) আল্লাহর নিষেধ অমান্য করলে ক্ষমা প্রার্থনা ও তোওবা করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ তাআ’লা তাদের দুইজনকে এই দুয়াটি শিখিয়ে দেন। এই দুয়ার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআ’লা তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। আমাদের উচিত তাদের মতো আমাদের পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য নিয়মিত এই দুয়া করা।
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
উচ্চারণঃ রাব্বানা যোয়ালামনা আন-ফুসানা ওয়া-ইল্লাম তাগ-ফিরলানা ওয়াতার্ হা’মনা লানা কুনান্না মিনাল খাসিরিন।
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছি, অতএব আপনি যদি আমদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন তাহলে নিশ্চয়ই আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হব।
আল-আ’রাফঃ ২৩।
৩. গুনাহ মাফ করার ও নেককার ঈমানদার হিসেবে মৃত্যুর জন্য দুয়াঃ
رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
উচ্চারণঃ রাব্বানা ফাগফির লানা যুনুবানা ওয়া-কাফফির আ’ন্না সাইয়্যিআ-তিনা ওয়া তাওয়াফ্ফানা মাআ’ল আবরা-র।
অর্থঃ হে আমাদের পালনর্তা! আপনি আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন, আমাদের মন্দ কাজগুলো দূর করে দিন আর আমাদেরকে নেককার হিসেবে মৃত্যু দান করুন।
সুরা আলে ইমরানঃ ১৯৩।
৪. পিতা-মাতার জন্য দুয়াঃ
জীবিত বা মৃত পিতা মাতা দুইজনের জন্য এই দুয়া বেশি করতে হবেঃ
رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
উচ্চারণঃ রাব্বির হা’ম-হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা।
অর্থঃ হে আমাদের পালনর্তা! আপনি আমার পিতা-মাতার প্রতি তেমনি দয়া করুন যেইরকম দয়া তারা আমাকে শিশু অবস্থায় করেছিল।
৫. ছোট্ট কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দুয়াঃ
আল্লাহ যখন কারো ভালো করতে চান তখন তাকে অনেক টাকা পয়সা, ভালো স্বামী বা স্ত্রী, দামী গাড়ি দেননা। যদিও আমরা এইগুলোকেই কল্যানের বিষয় বলে মনে করি। পার্থিব সুখ স্বাচ্ছন্দ কখনো আল্লার নেয়ামত হতে পারে, কখনোবা আল্লাহর পরীক্ষা হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ যখন কারো কল্যান করতে চান, তখন তাকে “ফিকহ” বা দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন।
আর সেই জ্ঞান চাওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর শেখানো সুন্দর ছোট্ট একটা দুয়া আছে, আপনারা মুখস্থ করে নিতে পারেন।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْماً نَافِعاً، وَرِزْقاً طَيِّباً، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস-আলুকা ই’লমান নাফিআ’ন, ওয়া রিযক্বান ত্বাইয়্যিবান, ওয়া আ’মালাম মুতাক্বাববালান।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র জীবিকা ও গ্রহণযোগ্য আমল প্রার্থনা করছি।
ইবনে মাজাহ, হিসনুল মুসলিম পৃষ্ঠা ১১৩।
এই দুয়াটা আমার প্রিয় কারণ, এর সাথে আরো দুইটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চাওয়া হয়েছে – রিযকান ত্বাইয়্যিবান বা পবিত্র জীবিকা – এর দ্বারা দুনিয়াবি চাহিদার পূরণের জন্যও দুয়া করা হলো আর, আ’মালান মুতাক্বাব্বালান বা – এমন আমল যা আল্লাহর কাছে কবুল হয়, পরকালের জন্য যা প্রয়োজন তাও প্রার্থনা করা হলো। এতো গুরুত্বপূর্ণ তিনটা বিষয় একসাথে ছোট্ট একটা দুয়ার মধ্যে থাকায় আমাদের সবার শিখে নেওয়া উচিত।
এই দুয়া প্রত্যেকদিন ফযরের ফরয নামাযের সালাম ফেরানোর পর একবার পড়া সুন্নত। এছাড়া সিজদাতে, সালাম ফিরানোর আগেসহ যেকোনো সময় করা যাবে। আরবীতে না পারলে বাংলাতেও করা যাবে, যতদিন না মুখস্থ হচ্ছে। দুয়াটা পাওয়া যাবে হিসনুল মুসলিম বইয়ের ১১৩ নাম্বার পৃষ্ঠায়।
৬. হেদায়েতের উপর থাকা, অন্তর যেন দ্বীনের উপরে থাকে তার জন্য দুয়াঃ
আরবীতে হৃদয়কে বলা হয় ‘ক্বালব’, যার একটা অর্থ হচ্ছে - যেই জিনিস খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায়। অর্থাৎ, মানুষের হৃদয় খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায়, একারণে মানুষ আজকে যাকে ভালোবাসে, কাল তাকে ঘৃণা করে।
কেয়ামতের আগে এমন হবে মানুষ সকালে ঈমানদার থাকবে, সন্ধ্যা সময় কাফের হয়ে যাবে। আবার মানুষ সন্ধ্যা সময় ঈমানদার থাকবে, সকালে কাফের হয়ে যাবে। এইজন্য হৃদয় যাতে পরিবর্তন না হয়ে যায়, পাপাচার, কুফুরী, আল্লাহর নাফরমানির দিকে ঝুকে না পড়ে সেই জন্য আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বেশি করে এই দুয়া করতেনঃ
يَـا مُـقَـلِّـبَ الْـقُـلُـوْبِ ثَـبِّـتْ قَـلْـبِـىْ عَـلَـى دِيْـنِـكَ
উচ্চারণঃ ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুব! সাব্বিত ক্বালবী আ’লা দ্বীনিক।
অর্থঃ হে হৃদয় সমূহের পরিবর্তন করার মালিক! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর অবিচলভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখো।
সুনানে তিরমিযী।
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
উচ্চারণঃ রব্বানা লা তুযিগ ক্বুলুবানা বাআ’দা ইয হাদাইতানা ওয়াহাব লানা মিল্লাদুনকা রাহ’মাহ, ইন্নাকা আনতাল ওহহাব।
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে হেদায়েত করার পর তুমি আমাদের অন্তরকে বাঁকা করে দিয়োনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদেরকে রহমন্ত দান কর। নিশ্চয়ই তুমি অত্যন্ত দয়ালু।
সুরা আলে ইমরানঃ ৮।
* অন্তরকে বাঁকা অর্থ হচ্ছে অন্তরে মুনাফেকী, কুফুরী, পাপাচার বা আল্লাহর অবাধ্যতা প্রবেশ করা।
৭. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্দর একটি দুয়াঃ
মুখস্ত করে নিতে পারেন ও মুনাজাতে বেশি বেশি করে আর বিশেষ করে সিজদাতে এই দুয়া করতে পারেন।
اَللهم إِنِّي أَسْأَلُكَ الهُدَى، وَالتُّقَى، وَالعَفَافَ، وَالغِنَى
আল্লা-হুম্মা ইন্নি আস-আলুকাল হুদা ওয়াত-তুকা ওয়াল আ'ফাফা ওয়াল গি’না।
অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া, সুস্থতা ও সম্পদ প্রার্থনা করছি।
মুসলিম ২৭২১, তিরমিযী ৩৪৮৯, ইবনু মাজাহ ৩৮৩২, আহমাদ ৩৬৮৪।
৮. ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেকোনো শিরক থেকে বাঁচার দুয়াঃ
কেউ ৪০ বছর আল্লাহর ইবাদত করলো, কতযে নফল সুন্নত নামায পড়লো, রোযা রাখলো - কিন্তু মরণের আগে শিরক করে তোওবা না করেই মারা গেলো... একটা মাত্র শিরক তার সমস্ত আমল নষ্ট করে দেবে (নাউযুবিল্লাহ)!
কেয়ামতের দিন তার আমলগুলোর কোনো ওযন আল্লাহ তাকে দেবেন না, এইগুলোকে ধূলো বালিতে রূপান্তরিত করে দেবেন।
আর জেনে হোক বা না জেনেই হোক যেকেউ, যেকোনো সময় শিরকে লিপ্ত হতে পারে, যে যত বড় নেককারই হোক না কেনো (মা যা' আল্লাহ)।
এইজন্য শিরক করা অথবা অনিচ্ছায় শিরকে লিপ্ত হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হয়।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শেখানো একটা দুয়া আছে, কেউ যদি প্রতিদিন সকাল বিকাল একবার করে পড়েন, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাকে শিরক থেকে হেফাজত করবেন।
আপনি কি জানেন, সেই দুয়াটা কি?
দুয়াটা হচ্ছেঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আ’লাম, ওয়া আস-তাগফিরুকা লিমা লা আ’লাম।
অনুবাদঃ হে আল্লাহ! আমার জানা অবস্থায় তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর আমার অজানা অবস্থায় কোনো শিরক হয়ে গেলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
আহমাদ ৪/৪০৩, হাদীসটি সহীহ, সহীহ আল-জামে ৩/২৩৩।
হিসনুল মুসলিমঃ পৃষ্ঠা ২৪৬।
৯. বিপদ বা দুঃশ্চিন্তার জন্য এই দুয়াটা সবাই মুখস্থ করে নিনঃ
তিমি মাছের পেটে থাকা অবস্থায় ইউনুস (আঃ) এই দোয়া করেছিলেন এবং কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছিলেন।
لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظّالِمِينَ
উচ্চারণঃ লা ইলা-হা ইল্লা-আনতা, সুবহা’-নাকা ইন্নি কুনতুম-মিনায-যোয়ালিমিন।
অর্থঃ "(হে আল্লাহ) তুমি ছাড়া আর কোনো মা’বুদ নাই, তুমি পবিত্র ও মহান! নিশ্চয় আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত।"
কুরানুল কারীমে এই দুয়া বর্ণিত হয়েছে সুরা আল-আম্বিয়া: আয়াত নাম্বার ৮৭ তে। সঠিক আরবীর জন্য ছবিটা দেখুন।
এই দুয়ার উপকারীতাঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “কোনো মুসলিম যদি এই দুয়া পড়ে, তার দুয়া কবুল করা হবে। অন্য হাদীস অনুযায়ী, এই দুয়া পড়লে আল্লাহ তার দুঃশ্চিন্তা দূর করে দিবেন।”
সুনানে আত-তিরমিযী।
দুয়া কিভাবে পড়তে হবেঃ বিপদ আপদ বা দুঃশ্চিন্তার সময় এই দুয়া বেশি বেশি করে পড়তে হয়। যতবার ইচ্ছা ও যতবার সম্ভব হয় ততবার পড়বেন। এক লক্ষ পঁচিশ হাজার পড়ে যে “খতম ইউনুস” পড়ানো হয় হুজুর বা মাদ্রাসা ছাত্রদেরকে টাকা দিয়ে ভাড়া করে, বা দুয়া কেনাবেচা করা হয় – এইগুলো বেদাত – এই রকম খতম করানোর কোনো দলীল নেই শরীয়তে।
আপনার যতবার সম্ভব হয় ততবার পড়বেন – এত এত বার পড়তে হবে, এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আপনি নিজের জন্য নিজে দুয়া করবেন - আল্লাহর কাছে সেটাই বেশি পছন্দনীয়।
সর্বোত্তম হচ্ছে – ফরয/নফল/সুন্নত যেকোনো নামাযের সিজদাতে এই দুয়া পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।
আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর অতুলনীয় রহমতের ছায়ার মধ্যে আশ্রয় দিন, আমীন।
১০. আল্লাহর যিকর, শুকিরিয়া ও সুন্দরভাবে তাঁর ইবাদত করার জন্য সাহায্য চাওয়ার দুয়াঃ
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبادَتِكَ
“আল্লাহুম্মা আ ই’ন্নী আ’লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হু’সনি ইবাদাতিকা”।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার স্মরণ, তোমার কৃতজ্ঞতা এবং তোমার সুন্দর ইবাদত করার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য কর”।
এই দুয়া ইচ্ছা করলে নামাযের ভেতরে সিজদাতে বা সালাম ফেরানোর আগে দুয়া মাসুরার সময়ও করা যায়।
এই দুয়াটা এতো গুরুত্বপূর্ণ যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এক সাহাবীকে এই দুয়া পড়ার জন্য বিশেষভাবে ওয়াসীয়ত করে যান। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) এর হাত ধরে বলেছিলেনঃ ‘‘হে মুয়াজ! আল্লাহর কসম আমি তোমাকে ভালোবাসি। অতঃপর তিনি বললেন, হে মুয়াজ! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে তুমি প্রত্যেক সালাতের পর এই দুয়া করা ত্যাগ করবেনা, “আল্লাহুম্মা আ ই’ন্নী আ’লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হু’সনি ইবাদাতিকা।”
আবু দাউদ ১/২১৩, নাসায়ী, ইবেন হিব্বান, হাদীস সহীহ।
১১. জান্নাত প্রার্থনা করা ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাওয়ার দুয়াঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্নার।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জান্নাত প্রার্থনা করে, জান্নাত আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করো। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, জাহান্নাম আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও”।
তিরমিযিঃ ২৫৭২, ইবনে মাজাহ ৪৩৪০, শায়খ আলবানি এই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামি ৬২৭৫।
***উল্লেখ্য – সকাল সন্ধ্যায় ৭ বার “আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার” পড়ার হাদীসটা জয়ীফ বা দুর্বল, শায়খ আলবানী সিলসিলা জয়ীফাহঃ ১৬২৪।
সুতরাং সেটা না পড়ে এই দুয়া পড়বেন, কারণ এটাতে জান্নাত চাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া দুইটা দোয়া আছে আর এটা সহীহ। ঐটা থেকে এইদুয়াটা ভালো ও সহীহ।
১২. কেয়ামতের দিন হিসাব সহজ করার জন্য দুয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেকের হিসাব নেওয়া হবে আর আল্লাহ যার হিসাব নেবেন তাকে শাস্তি দেবেন। এই কথা শুনে সাহাবীরা ভয় পেলো, কারণ কে এমন আছে যে নিষ্পাপ? সুতরাং সকলেই শাস্তি পাবে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মুমিনদের জন্য হিসাব সহজ করা হবে। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাঁর ঈমানদার বান্দাদেরকে রহমতের চাদরে ঢেকে নেবেন, অন্যদের থেকে আলাদা করে দেবেন। এরপরে গোপনে তাকে তার পাপকাজগুলো দেখানো হবে। বান্দা তার পাপকাজগুলো দেখে ভয় পেয়ে যাবে, আর চিন্তা করতে থাকবে তাহলেতো আমার বাঁচার কোনো পথ নাই! তখন আল্লাহ তাকে বলবেন তুমি পাপ করেছো কিন্তু অমুক সময় তোওবা করেছো আর আমি তোমার তোওবা কবুল করেছি। আর শুধু কবুলই করিনাই – তোওবা করেছো এইজন্য পাপ কাজগুলোকে এখন নেকীতে পরিবর্তন করে দিলাম। এইকথা শুনে বান্দা খুব খুশি হয়ে বলবে, হে আল্লাহ আমারতো আরো অনেক পাপ আছে – সেইগুলোতো দেখতে পাচ্ছিনা (পাপের পরিবর্তে নেকী পাওয়ার আশায় সে এই কথা বলবে)।
এর পরে বান্দাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে। এই হচ্ছে হিসাব সহজ করার পদ্ধতি। এরকম যেন হিসাব গ্রহণ সহজ করা হয়, এই জন্য এই দুয়া করতে হয়ঃ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্ম হা’সিবনি হি’সাবাই-য়্যাসিরা।
অর্থঃ হে আল্লাহ তুমি আমার হিসাব সহজ করো।
ইমাম হাকিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, শায়খ আলবানীর মতে দুয়াটি হাসান সহীহ।
১৩. ছাত্রদের স্মৃতি শক্তি বাড়ানো, বুদ্ধির প্রখরতা, জিহবার জড়তা বা তোতলামি দূর করার জন্য, ও দাওয়াতী কাজে সাহায্য লাভের জন্য দুয়াঃ
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي
وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي
وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي
يَفْقَهُوا قَوْلِي
উচ্চারণঃ রাব্বিশ-রাহ’লী সাদরী। ওয়া ইয়াসসিরলী আমরী। ওয়াহ’লুল উ’ক্বদাতাম-মিলাসানি। ইয়াফক্বাহু ক্বাওলী।
অর্থঃ হে আমার পালনকর্তা! আমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দিন। এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। আর আমার জিহবা থেকে জড়তা দূর করে দিন, যাতে করে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।
সুরা ত্বা হাঃ
১৪. দুঃখ ও দুশ্চিন্তার সময় পড়ার দো‘আঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘ঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালা‘ইদ দ্বাইনে ওয়া গালাবাতির রিজা-লি
হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।
বুখারী, ৭/১৫৮, নং ২৮৯৩; সেখানে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দো‘আটি বেশি বেশি করতেন। আরও দেখুন, বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১৭৩; আরও দেখুন যা পৃষ্ঠায় ১৩৭ নং এ বর্ণিত হবে।
১৫. দুই সিজদার মাঝখানে বসাঃ
এখানে নিজের পছন্দমতো যেকোনো দুয়া করা যায়না, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই দুয়াগুলো করেছেন শুধুমাত্র সেই দুয়াগুলোই করা যাবে। আর এইখানে দুয়া আরবীতেই করতে হবে। দুই সিজদার মাঝখানে এই দুয়াগুলো করার সময় তাশাহুদের মতো আংগুন দিয়ে ইশারা করা সুন্নত। যেই দুয়া করতে হবেঃ ছোট্ট এই দুয়াটা কি মুখস্থ করা যায়না?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয, সুন্নত, নফল যে কোনো সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায় এই দুআটি করতেনঃ
رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي
উচ্চারণঃ রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ ফিরলি।
অর্থঃ হে আমার রব আমাকে ক্ষমা করা, হে আমার রব আমাকে ক্ষমা কর।
আবু দাউদ ১/৩১, ইবনে মাজাহ, দুয়াটা সহীহ।
এই ছোট্ট দুয়াটা পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ মিস করা ঠিকনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে ৭০ থেকে ১০০ বার তোওবা করতেন। আপনি যদি সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে এই দুয়াটা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন তাহলে দিনে যত রাকাত করে সালাত পড়বেন, তত বারই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া হবে। আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার একটা উপায় হচ্ছে বেশি বেশি করে নিয়মিত তোওবা ও ইস্তিগফার করা (ক্ষমা চাওয়ার দুয়া করা)। এছাড়া দুই সিজদার মাঝখানে আরেকটা ছোট্ট সুন্দর দুয়াঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي، وَارْفَعْنِي
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাগফিরলী, ওয়ারহা’মনী, ওয়াহদিনী, ওয়াজবুরনী, ওয়াআ’ফিনি, ওয়ারযুক্বনী, ওয়ারফা‘নী।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন, আমাকে রিযিক দান করুন এবং আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন”।
হাদীসটি ইমাম নাসাঈ ব্যতীত সুনান গ্রন্থগারগণ সবাই সংকলন করেছেন। আবূ দাউদঃ ৮৫০, তিরমিযীঃ ২৮৪, ২৮৫, ইবন মাজাহঃ ৮৯৮। শায়খ আলবানির মতে হাদীস সহীহ।
বিঃদ্রঃ এই দুয়াটা কম-বেশি বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা আছে, সবগুলো সহীহ – তবে এখানে যেটা দেওয়া আছে এটা সবচাইতে বড় যেখানে সবগুলো দুয়া একসাথে আছে। এটা করলে সবগুলো দুয়াই করা হলো।
১৬. নেককার স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানের জন্য দুয়াঃ
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণঃ রব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা ক্বুররাতা আ’ইয়ুন, ওয়াজআ’লনা মুত্তাক্বীনা ইমামা।
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর।
দিনে রাতে যে কোনো সময় আমল করার জন্য এই বইয়ের সবগুলো দুয়াই সহীহ, আর দাম মাত্র ৫০ টাকা। ছোট্ট এই বইটা পকেটে রেখে দেওয়া যায়, রাস্তায়, জার্নিতে, বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষায় বা যে কোনো অবসব সময়ে বের করে দুয়াগুলো শিখে বা পড়ে সময়টা নষ্ট না করে কাজে লাগানোর জন্য।
বিঃদ্রঃ - যারা অলসতা বশত বা ইমানের দুর্বলতার কারণে আরবী মুখস্থ করতে চান না বা পারেন না, তারা অন্তত বাংলাটা মুখস্থ করে রাখতে পারেন এবং মুনাজাতের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো গুরুত্বপূর্ণ এই জিনিসগুলো আল্লাহর কাছে চাইতে পারেন।
وَصَلَّى اللَّهُ وَسَلَّمَ وَبَارَكَ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ أَجْمَعِينَ.
আল্লাহ্ দরূদ ও সালাম এবং বরকত বর্ষণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর বংশধর ও তাঁর সকল সাহাবীগণের উপর।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “হে মানুষ, তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে তাওবা কর, নিশ্চয় আমি আল্লাহ্‌র কাছে দৈনিক একশত বার তাওবা করি।

সংগ্রহঃ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...