Wednesday 10 December 2014

জান্নাতী রমণীর জন্য কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া



একজন রমণী জীবন চলার পথে নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখিন হয়। কখনো শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে ইসলাম বিরোধী কাজ করে ফেলে। কখনো অলসতা বশতঃ ইবাদত-বন্দেগীতে গাফলতি করেবসে। সুবুদ্ধি হলে নিজের ভুল বুঝতে পারলে তখন ফিরে আসতে চায় সৎ  সত্য পথে। তাই নিম্নে কতিপয় সমস্যার উল্লেখ করে তার সমাধান দেয়া হল যাতে করে মুসলিম বোন তা থেকে উপকৃত হতেপারেন।

প্রশ্নঃ প্রায় দশ বছর আগে বালেগ হওয়ার নির্দিষ্ট আলামতের মাধ্যমে আমি বালেগা (প্রাপ্ত বয়স্কা) হই। কিন্তু যে বছর বালেগা হই সে বছর রামাযান পাওয়া সত্বেও তার ছিয়াম আমি আদায় করি নি। এখন কিআমাকে সেই বছরের ছিয়াম আদায় করতে হবে? এবং সেই সাথে কি কাফ্‌ফারাও দিতে হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ উক্ত মাসের ছিয়াম ক্বাযা আদায় করা তোমার উপর আবশ্যক। সেই সাথে তওবা করবে, আল্লাহর কাছে  অন্যায়ের ক্ষমা চাইবে এবং কাফ্‌ফারা আদায় করবে। আর তা হল, প্রতি দিনেরবিনিময়ে একজন মিসকিনকে এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য যেমন চাউল বা খেজুর বা গম ইত্যাদী থেকে অর্ধ ছা তথা প্রায় সোয়া এক কেজি পরিমাণ খাদ্য। (-শাইখ ইবনু বায (রহঃ)।)

প্রশ্নঃ অপবিত্রাবস্থায় বা মাসিক অবস্থায় কি দ্বীনী বই পুস্তক যেমন কুরআনের তাফসীর ইত্যাদি পড়তে পারব?
উত্তরঃ নাপাক ব্যক্তি এবং ঋতুবতীর জন্য দ্বীনী কিতাব যেমন তাফসীর, ফিকাহ্‌, হাদীছ, তাওহীদ, ইসলামী সাহিত্য প্রভৃতি বই পুস্তক পড়া জায়েয। তার জন্য শুধু নিষেধ হল কুরআন তেলাওয়াত করা।কিন্তু কুরআনের কোন দু বা দলীল পেশ করার জন্য কোন আয়াত উচ্চারণ করা  নিষেধের অন্তর্ভূক্ত নয়। (-শাইখ ইবনু বায (রঃ)।)

প্রশ্নঃ পরবর্তী রামাযানের পর পর্যন্ত দেরী করে ক্বাযা ছিয়াম আদায় করার হুকুম কি?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি রামাযান মাসে সফর, অসুস্থতা, হায়েয-নেফাস প্রভৃতি কোন কারণে ছিয়াম ক্বাযা করবে, তার উপর আবশ্যক হল পরবর্তী রামাযান আসার আগেই উক্ত ছিয়াম আদায় করে নেয়া। কেননা দুরামাযানের মাঝে আল্লাহ্‌ তাআলা অনেক প্রশস্থ সময় দিয়েছেন। তবে যদি পরবর্তী রামাযান পর্যন্ত তা আদায় করা পিছিয়ে দেয়, তবে তার উপর ওয়াজিব হল, উহা ক্বাযা আদায় করার সাথে সাথে প্রতিদিনের বিনিময়ে একজন করে মিসকিনকে খাদ্য প্রদান করা। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)এর ছাহাবীদের একটি জামাআত এভাবেই ফতোয়া দিয়েছেন। মিসকিনকে প্রদত্ব খাদ্যের পরিমাণ হল,এলাকার লোকদের প্রধান খাদ্য- যেমন চাউল বা খেজুর বা গম ইত্যাদী থেকে- অর্ধ ছা তথা প্রায় সোয়া এক কেজি পরিমাণ। আর যদি পরবর্তী রামাযানের আগেই ক্বাযা আদায় করে নেয় তবে কোন খাদ্যপ্রদান করতে  হবে না। (-শাইখ ইবনু বায (রহঃ)।)

প্রশ্নঃ নেফাসযুক্ত মহিলার যদি ৪০ দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই নেফাস বা রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যায় তাহলে কি সে ছালাত ছিয়াম আদায় করবে? আর যদি ৪০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ঋতু স্রাব শুরু হয় তবেকি ছালাত ছিয়াম পরত্যিাগ করবে?
উত্তরঃ নেফাসযুক্ত মহিলা ৪০ দিন পার হওয়ার আগেই যদি পবিত্র হয়ে যায়, তবে তার উপর ওয়াজেব হল, ফরয গোসল করা এবং ছালাত ছিয়াম আদায় করা।  অবস্থায় তার স্বামী তার সাথে সহবাসেওলিপ্ত হতে পারে। কিন্তু যদি ৪০ দিনের মধ্যে আবার রক্ত দেখা যায় তবে তার উপর ছালাত ছিয়াম পরিত্যাগ করা ওয়াজিব হয়ে যাবে এবং আলেমদের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী স্বামী সহবাসও হারাম হয়ে যাবে।আর  অবস্থায় পবিত্র হওয়া পর্যন্ত বা ৪০ দিন পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত সে নেফাসযুক্ত মহিলাদের মত গণ্য হবে। যদি ৪০ দিন শেষ হওয়ার আগেই পবিত্র  হয়ে যায় বা নির্দিষ্ট ৪০ দিন পূর্ণ হয়ে যায় তবে সে গোসলকরবে এবং ছালাত ছিয়াম আদায় করবে, তার জন্য স্বামী সহবাসে লিপ্ত হওয়া হালাল হয়ে যাবে। আর ৪০ দিন পার হওয়ার পরও যদি রক্ত প্রবাহিত হতেই থাকে তাহলে তা ইস্তেহাযা (বা অসুস্থতা) হিসেবেগণ্য হবে।  জন্য  ছালাত ছিয়াম পরিত্যাগ করবে না স্বামী সহবাসও হারাম হবে না। তবে তার উপর আবশ্যক হল প্রত্যেক ছালাতের পূর্বে লজ্জাস্থান ধৌত করা এবং রক্ত প্রবাহ হালকা হয় এজন্য তুলা বাএজাতীয় কিছু ব্যবহার করা। তারপর ছালাতের সময় হলে অযু করা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ইস্তেহাযায় আক্রান্ত মহিলাকে এরূপই আদেশ করেছিলেন। তবে যদি উক্ত মহিলার হায়েযতথা মাসিক ঋতু স্রাব শুরু হয়ে যায় তাহলে ছালাত ইত্যাদি পরিত্যাগ করবে। (-শাইখ ইবনু বায (রহঃ)।)

প্রশ্নঃ ফরয গোসল কি ফজর পর্যন্ত বিলম্বিত করা জায়েয আছে? মহিলাদের কি হায়েয এবং নেফাস থেকে পবিত্র হওয়ার গোসলকে ফজর পর্যন্ত দেরী করে করা জায়েয আছে?
উত্তরঃ কোন নারী যদি ফজরের পূর্বে পবিত্রতা দেখতে পায় (তার হায়েয বা নেফাস বন্ধ হয়ে যায়) তবে তার উপর ছিয়াম আদায় করা আবশ্যক। ফজরের পর পর্যন্ত দেরী করে গোসল করতেও কোন বাধানেই। তবে সুর্যাস্ত পর্যন্ত দেরী করা কোন অবস্থাতেই বৈধ নয়। কেননা তাকে ফজর ছালাত আদায় করতে হবে। আর পুরুষের উপর ওয়াজিব হল দ্রুত ফরয গোসল সেরে নেয়া যাতে করে সে ফজর ছালাতেরজামাআতে শরীক হতে পারে। (-শাইখ বিন বায (রহঃ)।)

প্রশ্নঃ গর্ভবতী বা দুগ্ধবতী মহিলা যদি রামাযান মাসে রোযা না রাখে তবে তার উপর কি করা আবশ্যক?
উত্তরঃ কোন ওযর ছাড়া গর্ভবতী বা দুগ্ধবতী মহিলার পক্ষে রামাযানের ছিয়াম ছাড়া বৈধ নয়। যদি ওযরের কারণে ছিয়াম ছাড়ে তবে উহার ক্বাযা আদায় করা তার উপর আবশ্যক। কেননা আল্লাহ্‌তাআলা বলেন, 
(فَمَنْ كاَنَ مِنْكُمْ مَرِيْضاً أوْ عَلى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أياَّمٍ أُخَرَ) 
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ হবে বা সফরে থাকবে সে অন্য সময় উক্ত ছিয়াম পূরণ করে নিবে। (সূরা বাক্বরা- ১৮৪) 
 দুজন মহিলা অসুস্থ ব্যক্তির পর্যায়ে, যদিও তাদের ওযর হল শিশুর ক্ষতির আশংকা। তাই তাদের উপর আবশ্যক হল উক্ত ছিয়াম ক্বাযা আদায় করার সাথে সাথে প্রতি দিনের বিনিময়ে একজন মিসকিনকেখাদ্য প্রদান করা। সে খাদ্য মানুষের প্রধান থেকে গম বা চাউল বা খেজুর যাই হোক না কেন। অবশ্য কোন কোন বিদ্বান বলেন, তাদের উপর ক্বাযা আদায় ছাড়া অন্য কিছু আবশ্যক নয়। কেননা এক্ষেত্রে খাদ্যপ্রদানের ব্যাপারে কুরআর সুন্নাহ থেকে কোন দলীল নেই। আর আসল কথা হল যিম্মা মুক্ত হওয়া যতক্ষণ না তার বিপরীতে দলীল পাওয়া যাবে। আর সেই যিম্মা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছিয়াম আদায়করলেই হয়ে যাবে। এটা হল ইমাম আবূ হানীফা (রঃ)এর মত, আর তা শক্তিশালী মত। (-শাইখ ইবনু ঊছাইমীন (রঃ)।)

প্রশ্নঃ জনৈক মহিলা রামাযান মাসে সন্তান প্রসব করার কারণে ছিয়াম পালন করে নাই। রামাযানের পরও দুধের শিশুর ক্ষতির আশংকায় তা ক্বাযা আদায় করতে পারে নাই। ইতোমধ্যে সে গর্ভবতী হয়ে যায়এবং পরবর্তী রামাযানে আবার বাচ্চা প্রসব করে। এখন কি তার ক্বাযা ছিয়ামের বদলে কিছু অর্থ বিতরণ করলে জায়েয হবে?
উত্তরঃ  মহিলার উপর ওয়াজিব হল, যে দিনগুলোর ছিয়াম সে পরিত্যাগ করেছে তার ক্বাযা আদায় করা- যদিও পরবর্তী রামাযানের পর সে তা আদায় করে। কেননা দুরামাযানের মধ্যবর্তী সময়ে সেওযরের কারণে ক্বাযা আদায় করতে পারেনি। আমি মনে করি শীতকালে বাচ্চাকে দুধ পান করানের সাথে সাথে যদি সে এক দিন পর পর ছিয়াম পালন করে তবে তেমন কষ্ট হওয়ার কথা নয়। আল্লাহই তাকেশক্তি দান করবেন। এবং পরবর্তী রামাযানের ছিয়ামও সে আদায় করতে পারবে। একান্ত যদি নাই পারে তবে পরবর্তী রামাযানের পর ক্বাযা আদায় করলে কোন ক্ষতি হবে না। (কিন্তু ছিয়ামের বদলে খাদ্যপ্রদান বা ফিদিয়া দেয়া বৈধ হবে না।) (-শাইখ ইবনু ঊছাইমীন (রঃ)।)

প্রশ্নঃ কোন কোন মহিলা রামাযান মাসে জম্ম নিরোধক ঔষধের মাধ্যমে ঋতু স্রাব বন্ধ করে ছিয়াম পালন করে, যাতে করে পরবর্তীতে ক্বাযা আদায় করতে না হয়। তার একাজ কি বৈধ? এক্ষেত্রে কি নির্দিষ্টকোন নীতিমালা আছে?
উত্তরঃ  মাসআলায় আমি যা মনে করি তা হল, কোন নারীর জন্য এরূপ করা উচিত নয়। বরং আল্লাহ্‌ তাআলা আদম সন্তানের নারীদের উপর যা লিখে দিয়েছেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকা। কেননা  ঋতুস্রাবের নিয়ম সৃষ্টির ব্যাপারে নিঃসন্দেহে একটি হেকমত আছে যা অবশ্যই নারী প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যশীল। যখনই  প্রকৃতি বিরোধী কোন কিছু করতে যাবে নিঃসন্দেহে এর ক্ষতিকর দিক বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ানারী শরীরে দেখা দেবে। আর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ নিজের ক্ষতি করা যাবে না এবং অন্য কারও ক্ষতি করা যাবে না। এছাড়া চিকিৎসকদের মতানুযায়ী এধরণের ঔষধব্যবহারে নারীর জরায়ুতে সমূহ ক্ষতির আশংকা রয়েছে। তাই  মাসআলায় আমি মনে করি, মহিলারা যেন  ঔষধ ব্যবহার না করে। আল্লাহর তাক্বদীর এবং তাঁর হেকমতের কারণে সকল প্রশংসা তাঁরইপ্রাপ্য। যখন হায়েয আসবে তখন ছালাত এবং ছিয়াম থেকে বিরত থাকবে এবং পবিত্র হলে ছালাত ছিয়াম শুরু করবে। আর রামাযান শেষ হলে ছুটে যাওয়া ছিয়ামের ক্বাযা আদায় করবে। (-শাইখ ইবনুঊছাইমীন (রঃ)।)

প্রশ্নঃ আমি একজন ২৫ বছরের যুবতী। কিন্তু আমি ছোট থেকে ২১ বছর বয়স পর্যন্ত অলসতা বশতঃ ছালাত ছিয়াম কোন কিছুই আদায় করিনি। অথচ আমার পিতামাতা সর্বদা আমাকে নসীহত করতেন।আমি কোন পরওয়া করতাম না। একারণে আমি এখন অনুতপ্ত এবং তওবা করেছি। আল্লাহ্‌ আমাকে হেদায়াত করেছেন। আমি রীতিমত ছালাত ছিয়াম আদায় করছি। এখন আমাকে কি করতে হবে?
উত্তরঃ নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তওবা পূর্বের যাবতীয় পাপকে ধ্বংস করে দেয়। সুতরাং তোমার উপর আবশ্যক হল, কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়ার সাথে সাথে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া এবংইবাদতে সততার পরিচয় দেয়া। রাতে অধিক হারে নফল ছালাত আদায় করা। দিনে বেশী করে নফল ছিয়াম পালন করা। বেশী করে আল্লাহ্‌র যিকির, কুরআন তেলাওয়াত এবং দুআয় লিপ্ত থাকা। আল্লাহইবান্দার তওবা কবূল করেন এবং গুণাহ সমূহ মা করেন।   (- শায়খ ইবনু বায (রহঃ)।)

প্রশ্নঃ নেফাস অবস্থায় ৪০ দিন ধরেই হলদে রঙের পানি বের হওয়ার হুকুম কি?  অবস্থায় কি ছালাত ছিয়াম আদায় করব?
উত্তরঃ সন্তান প্রসবের পর নারীর জরায়ু থেকে স্বাভাবিক রক্ত, হলদে বা মেটে রঙের পানি যাই বের হোক না কেন তা নেফাস হিসেবে গণ্য হবে। কেননা ৪০ দিন পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত এটাই হল তার নিয়ম। এইসময় সীমা পার হওয়ার পর যা বের হবে তা যদি স্বাভাবিক রক্ত হয় এবং তা অবিচ্ছিন্নভাবে বের হয় তা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে। অন্যথা তা ইস্তেহাযা বা অসুস্থতা হিসেবে গণ্য হবে। (-শায়খ ইবনু বায(রহঃ)।)

প্রশ্নঃ আমার মাসিক ঋতু (গবহংবং) প্রতিমাসে  দিন। কোন কোন মাসে  দিনগুলোর বাইরেও রক্ত দেখা যায়। কিন্তু তুলনা মূলক কম। আর তা এক থেকে দুদিন পর্যন্ত থাকে। এসময় কি আমার উপরছালাত ছিয়াম করা আবশ্যক না ক্বাযা করা আবশ্যক?
উত্তরঃ স্বাভাবিকের অতিরিক্ত  রক্ত রগ থেকে বের হয়, তা নির্ধারিত মাসিকের অন্তর্গত নয়। যে নারী তার মাসিক সম্পর্কে ভালভাবে অবগত সে নির্দিষ্ট দিনগুলোতেই শুধু ১) ছালাত-ছিয়াম থেকে বিরতথাকবে, ২) কুরআন শরীফ স্পর্শ করবে না এবং ৩) স্বামী সহবাসে লিপ্ত হবে না। যখন সে পবিত্র হবে তথা নির্দিষ্ট দিন শেষ হয়ে গোসল করবে তখন সে পবিত্র হিসেবে গণ্য হবে। এরপরও যদি কোন রক্ত বাহলুদ বা মেটে রঙের পানি নির্গত হতে দেখে তবে তা ইস্তেহাযা হিসেবে গণ্য হবে। আর একারণে ছালাত ছিয়াম পরিত্যাগ করবে না। (-শায়খ ইবনু বায (রঃ)।)

প্রশ্নঃ আমার বয়স তখন ১৩। রামাযানের ছিয়াম পালন করছি। কিন্তু হায়েযের কারণে  দিন ছিয়াম আদায় করিনি। আর লজ্জার কারণে এব্যাপারে কাউকে কিছু বলিওনি। এভাবে  বছর পার হয়ে গেছে।এখন আমাকে কি করতে হবে?
উত্তরঃ এত দীর্ঘ সময়ে উক্ত ছিয়াম ক্বাযা আদায় না করে তুমি বিরাট ভুল করেছ। কেননা এব্যাপারটা তো আল্লাহ্‌ আদম সন্তানের নারীদের উপর লিখে দিয়েছেন। আর দ্বীনের বিষয় জানার ব্যাপারে লজ্জাকরা কোন মানুষের জন্য উচিত নয়। এখন তোমার উপর আবশ্যক হল খুব দ্রুত উক্ত চার দিনের ক্বাযা আদায় করা এবং সেই সাথে কাফ্‌ফরাও প্রদান করা। আর তা হল, প্রতি দিনের বিনিময়ে এলাকারপ্রধান খাদ্য থেকে এক ছা পরিমাণ খাদ্য মিসকীনকে প্রদান করা। (-শায়খ ইবনু বায (রঃ)।)

প্রশ্নঃ জনৈক মহিলার গর্ভাবস্থায় সন্তান প্রসবের পাঁচ দিন আগে রক্ত প্রবাহিত হয়। এটা কি তার হায়েয না নেফাসের রক্ত হিসেবে গণ্য হবে? আর তার উপর কি করা আবশ্যক?
উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় প্রসবের আগে যদি রক্ত দেখা দেয় এবং সেই সাথে সন্তান প্রসবের আলামত তথা প্রসব বেদনা অনুভূত না হয়, তবে তা না হায়েয হিসেবে গণ্য না নেফাস হিসেবে, বরং বিশুদ্ধ মতানুযায়ী তা নষ্ট রক্ত হিসেবে গণ্য হবে, যার কোনই বিধান নেই। তাই সে কোন ইবাদত ছাড়বে না, ছালাত ছিয়াম আদায় করতে থাকবে। তবে উক্ত রক্তের সাথে যদি প্রসব বেদনার  কোন আলামত দেখা যায়, তাহলে তানেফাসের রক্ত হিসেবেই গণ্য হবে। আর সেকারণে ছালাত ছিয়াম পরিত্যাগ করবে। প্রসবের পর যখন পবিত্র হবে তখন শুধু ছিয়াম ক্বাযা আদায় করবে ছালাত নয়। (-স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড।)

প্রশ্নঃ জনৈক কিশোরীর বয়স বার বা তের বছর,  অবস্থায় রামাযান মাস অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু সে ছিয়াম পালন করে নাই। এখন তার উপর বা তার পরিবারের উপর কি করা আবশ্যক? সে যদি ছিয়ামআদায় করে তবে তার উপর কি আবশ্যক?
উত্তরঃ কয়েকটি শর্তের ভিত্তিতে একজন নারীর উপর শরীয়তের বিধিনিষেধ জারী হয়। তা হল, ইসলাম গ্রহণ করা, জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া  বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া। আর কোন নারী বালেগ হওয়ারআলামত হল, তার ঋতৃস্রাব হওয়া বা স্বপ্নদোষ হওয়া বা নাভীমূলে চুল গজানো বা পনের বছর বয়সে উপনিত হওয়া। এই বালিকার মধ্যে যদি উক্ত শর্ত সমূহ পরিপূর্ণরূপে পাওয়া যায় তবে তার উপরওয়াজিব হল পরিত্যাক্ত ছিয়ামের ক্বাযা আদায় করা। আর কোন একটি শর্ত যদি অপূর্ণ থাকে তবে তার উপর কোন কিছূ আবশ্যক নয়। (-স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড।)

প্রশ্নঃ কোন নারী যখন ঋতুবতী হয় তখন তার জন্য কি রামাযান মাসে ছিয়াম পরিত্যাগ করা এবং পরে উক্ত দিনগুলোর পরিবর্তে ক্বাযা আদায় করা বৈধ?
উত্তরঃ ঋতুবতীর ছিয়াম বিশুদ্ধ হবে না বরং ছিয়াম পালন করাই তার জন্য জায়েয নয়। যখন সে ঋতুবতী হবে তখন ছিয়াম পরিত্যাগ করবে এবং রামাযান শেষে উক্ত দিনগুলোর বিনিময়ে ক্বাযা আদায়করবে।    (-স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড।)

প্রশ্নঃ কোন নারী যদি ফজরের পর পরই হায়েয থেকে পবিত্র হয়, তবে কি সে উক্ত দিন রোযা রাখবে, না কি উক্ত দিনের ছিয়াম ক্বাযা করবে?
উত্তরঃ কোন নারী যদি ফজরের সময় বা তার সামান্য পূর্বে হায়েয থেকে পবিত্র হয়, তবে সে সে দিনের ছিয়াম পালন করবে এবং তা বিশুদ্ধ হবে, ফরয ছিয়ামের জন্য যথেষ্ট হবে, যদিও সে ফরয গোসল নাকরে থাকে। তবে যদি ফজর সুস্পষ্ট হওয়ার পর পবিত্র হয় তাহলে সে দিন ছিয়াম আদায় করা থেকে বিরত থাকবে এবং রামাযান শেষে তার ক্বাযা আদায় করবে। (-শায়খ ইবনু বায (রঃ)।)

প্রশ্নঃ জনৈক ব্যক্তি ফজর হওয়ার পর রোযার নিয়ত করে স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়েছে। এরকম ঘটনা তার দুবার ঘটেছে। স্ত্রীও সে কাজে রাযী ছিল। উল্লেখ্য যে, এঘটনার পর পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে।এখন কি করণীয়?
উত্তরঃ স্বামীর উপর ওয়াজিব হল, তওবা ইস্তেগফার করা, উক্ত দুদিনের ছিয়াম ক্বাযা আদায় করা এবং কাফ্‌ফারা আদায় করা। আর তা হল, একটি ক্রীতদাস আযাদ করা, যদি তা করতে সক্ষম না হয়তবে একাধারে দু মাস রোযা রাখা, যদি তা করতেও সামর্থ না থাকে তবে ষাট জন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করা। আর স্ত্রীর উপরও উক্ত কাজগুলো করা আবশ্যক। কেননা সে একাজ হারাম জেনেও তাতেসম্মতি দিয়েছে। (-শায়খ ইবনু বায (রঃ)।)

প্রশ্নঃ রোযা অবস্থায় খাদ্যের স্বাদ নেয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ প্রয়োজন ছাড়া এরূপ করা মাকরূহ। কিন্তু এরূপ করলে রোযা নষ্ট হবে না। আর যদি প্রয়োজনের কারণে হয় তবে তা কুলি করার মত। তাতে কোন ক্ষতি হবে না। (-ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রঃ)।)

প্রশ্নঃ ছিয়াম অবস্থায় রক্ত বের হওয়ার বিধান কি- যে রক্তকে বাধা দেয়া সম্ভব নয়- যেমন ইস্তেহাযার রক্ত, যখম বা নাকের রক্ত?
উত্তরঃ ইস্তেহাযার কারণে বা যখম হয়ে বা নাক থেকে যে রক্ত প্রবাহিত হয় তাতে রোযা নষ্ট হবে না। কিন্তু হায়েয  নেফাসের রক্ত প্রবাহিত হলে রোযা নষ্ট হবে একথার উপর সমস্ত আলেম ঐক্যমত। (-ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রঃ)।)


সমাপ্ত

জান্নাতী রমণী বই থেকে সংগৃহীত

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...