Saturday 16 May 2015

ইসরা ও মিরাজের ফলাফল ও আমাদের করণীয়


লেখক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া


ইসরা ও মিরাজ পরিচিতি:
ইসরা শব্দটির অর্থ রাতের সফর। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাতের একাংশে মক্কার হারাম থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস এর এলাকায় যে সফর করানো হয়েছে সেটাকে ইসরা বলা হয়।
আর মি‘রাজ হচ্ছে, উপরে আরোহন। আল্লাহ তাঁর হাবীব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভূমি থেকে আকাশে আরোহণ করিয়ে প্রথম আকাশ থেকে শুরু করে সপ্তাকাশ ভেদ করে সিদরাতুল মুন্তাহা পেরিয়ে তাঁর নিজের কাছে ডেকে নিয়েছিলেন। সেটাকেই মি‘রাজ বলা হয়।
ইসরা ও মিরাজের দলীল:
ইসরার দলীল পবিত্র কুরআনের সূরা আল-ইসরা বা বনী ইসরাঈল এর ১ম আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে,
سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ لِنُرِيَهُۥ مِنۡ ءَايَٰتِنَآۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ -سورة بني إسرائيل:1 
“পবিত্র ও মহান সে সত্ত্বা যিনি তাঁর বান্দাকে সফর করিয়েছেন রাতের একাংশে মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসার দিকে, যার চতুস্পার্শকে তিনি করেছেন বরকতময়। যাতে তিনি তাকে দেখাতে পারেন তাঁর নিদর্শনসমূহ। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা। [আল-ইসরা:১]
আর মি‘রাজের দলীল হচ্ছে, অন্য আয়াত যেখানে বলা হয়েছে,

শরীয়তের মানদণ্ডে রজব মাসের ফজিলত




শরীয়তের মানদণ্ডে রজব মাসের ফজিলত 

সীমাহীন প্রজ্ঞার দাবি অনুযায়ী আল্লাহ তা আলা কিছু মাস ও দিবসকে অন্যান্য মাস ও দিবসের উপর মর্যাদাপূর্ণ করেছেন। উদ্দেশ্য সৎ কর্ম সম্পাদনে মানুষের প্রেরণা উৎসাহে নতুন মাত্রা সংযোগ করা। অধিক মাত্রায় আমলে সালেহ করে উৎকর্ষ সাধনের পথ সুগম করা। তবে মানব ও জিন জাতির দুষ্টচক্র আল্লাহর বান্দাদেরকে সরল পথ থেকে বিচ্যুত করতে সদা সক্রিয়। তাইতো অবস্থান নিয়েছে সম্ভাব্য সকল পথে যা কিছু উত্তম তা থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নিতে। আল্লাহর রহমত ও করুণা প্রাপ্তির মৌসুম অসার কর্ম, আয়েশ আস্বাদন, প্রবৃত্তিচর্চা ও অযাচিত সুখ উপভোগের উপযুক্ত সময় হিসেবে উপস্থাপন করে। 
পরিচ্ছন্ন হৃদয় তবে ধর্ম বিষয়ে জাহিল, অথবা স্বার্থলুব্ধ ব্যক্তি , ধর্মীয় বা সামাজিক নেতৃত্ব ধরে রাখার লিপ্সা যাকে তাড়িয়ে বেড়ায় প্রতিনিয়ত এরূপ ব্যক্তিদের শয়তান উৎসাহ প্রদানের পাত্র বানায়। সৎকর্ম চর্চা ও সুন্নত অনুসরণে অধিক মাত্রায় সচেতন হতে হবে এমন মূহুর্তগুলো বিদআতপূর্ণ কর্মকাণ্ডে ভরে দিতে এদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় বহুমাত্রায়। 

হাস্‌সান ইবনে আতিইয়া বলেন : কোনো জাতি যে পরিমাণে তাদের ধর্মে বেদআতের ( নব আবিষ্কৃত বিষয়) এর প্রবেশ ঘটায় সে পরিমাণ সুন্নত তাদের মধ্যে হতে উঠিয়ে নেয়া হয়। 
আইয়ুব সাখতিয়ানি বলেছেন, বেদআত পালনকারী ব্যক্তি শ্রম সাধনায় যত এগোয় আল্লাহর সান্নিধ্য থেকে সে তত পিছোয়।  
প্রসিদ্ধ বেদআতপূর্ণ অনুষ্ঠানমালার মধ্যে অন্যতম একটি হল, মুসলিম বিশ্বের কোনো কোনো অঞ্চলে ঘটা করে রজব মাসের বিশেষ দিনক্ষণ উদযাপন। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে সকল দিক থেকে বিষয়টি পর্যালোচনার চেষ্টা করেছি। আশা করি বেদআত ও কুসংস্কারে লিপ্ত ব্যক্তিরা পথের দিশা পাবেন ও শরিয়ত সিদ্ধ পন্থায় আল্লাহর ইবাদত আঞ্জাম দিতে সক্ষম হবেন। 

অন্যান্য মাসের তুলনায় রজবের কি ভিন্ন কোনো বৈশিষ্ট্য আছে ?

ইবনে হাজর বলেছেন: রজবের ফজিলত, রজব মাসে রোজা অথবা রজবের সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখের রোজা, এ মাসের বিশেষ কোনো রাত্রি উদযাপন বিষয়ে বিশুদ্ধ ও শরিয়তি দলিল-হওয়ার মতো শক্ত কোনো হাদিস বর্ণিত হয় নি। ইমাম আবু ইসমাঈল আল হারাবি আল হাফেজ এ ব্যাপারটি আমার পূর্বেই নিশ্চিত করে বলেছেন। শুদ্ধ সনদে তা থেকে ও অন্যান্যদের থেকে বিষয়টি আমরা বর্ণনা করেছি।  
তিনি আরো বলেন, রজবের ফজিলত, রজব মাসের রোজার ফজিলত, অথবা সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখের রোজার ব্যাপারে যে হাদিসগুলো এসেছে তা দুপ্রকার: দুর্বল ও বানোওয়াট। দুর্বলগুলো বর্ণনা করছি আর বানোওয়াট গুলোর প্রতি প্রথমে তড়িৎ ইঙ্গিত দিচ্ছি ও পরে বিস্তারিত বর্ণনায় তা পরখ করে দেখছি। 

রজব মাসের বেদআত : শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি



রজব মাসের বেদআত : শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি

রজব মাস পালন, তার ফজিলত, তাতে রোজা রাখা-ইত্যাদি বিষয়ে শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি যাচাই, এই সময়ের একটি বহুল উচ্চারিত প্রশ্ন।বিষয়টি খুবই তাৎক্ষণিক, তাই আমি এ মাসের সাথে সম্পর্কিত কিছু আহকাম বিষয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করার প্রয়াস পাব, আল্লাহ আমাকে সাহায্য করুন।


রজব : হারাম মাসের একটি

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরানে এরশাদ করেন-
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ و قاتلو المشركين كافة كما يقاتلونكم كافة واعلموا أن الله مع المتقين . (التوبة:36)
আসমান-জমিনের সৃষ্টি ও সূচনা লগ্ন হতেই আল্লাহর বিধান মতে মাসের নিশ্চিত সংখ্যা বারটি। তার মাঝে চারটি সম্মানিত। এ অমোঘ ও শাশ্বত বিধান ; সুতরাং এর মাঝে তোমরা (অত্যাচার-পাপাচারে লিপ্ত হয়ে) নিজেদের ক্ষতি সাধন করো না। তোমরা সম্মিলিতভাবে মুশরিকদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হও, যেভাবে তারা সম্মিলিতভাবে তোমাদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। আর জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন। (তওবা-৩৬)
চার হারাম মাস হচ্ছে-মুহাররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ। 
আবু বকর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إن الزمان قد استدار كهيئته يوم خلق السما وات والأرض، السنة اثنا عشر شهراً، منها أربعة حرم، ثلاث متواليات: ذوالقعدة وذو الحجة والمحرم، ورجب مضر، الذي بين جمادى وشعبان. (رواه البخاري و مسلم)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জমানা কাল-চক্রাকারে ঘুরে আসমান-জমিন সৃষ্টির প্রথম দিনের অবস্থায় ফিরে এসেছে। বারো মাসে বৎসর, তার ভেতর চারটি সম্মানিত। তিনটি একসাথে-জিলকদ, জিলহজ, মুহররম। অপরটি-মুদার সম্প্রদায়ের পঞ্জিকা মতে-জুমাদা ও শাবানের মধ্যবর্তী রজব। (বোখারি-মুসলিম)

রজব মাসকে কেন্দ্র করে কতিপয় নতুন আবিষ্কৃত আমল (বিদআত)


লেখকঃ সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনাঃ কাউসার বিন খালেদ
ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ
Islamhouse.com
১. রজব মাসের রোজা :
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবাদের থেকে রজব মাসের রোজার ফজিলতের ব্যাপারে প্রামাণ্য কোন দলিল নেই। তবে অন্যান্য মাসের মত এ মাসেও, সপ্তাহের সোমবার, বৃহস্পতিবার, মাসের তেরো, চৌদ্দ, পনেরো তারিখ, একদিন রোজা রাখা, পরের দিন না রাখা- সওয়াবের, বৈধ ও সুন্নত। ওমর রা. রজব মাসের রোজা হতে নিষেধ করতেন। কারণ, এতে ইসলাম-পূর্ব কুসংস্কারাচ্ছন্ন জাহেলি যুগের সাথে সামঞ্জস্য বিদ্যমান।
হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেন, রজবের নির্দিষ্ট-অনির্দিষ্ট দিনের রোজা, কিংবা রজবের নির্দিষ্ট কোন রাতের রোজার ব্যাপারে প্রমাণ যোগ্য কোন সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়নি। যে কয়টি সুস্পষ্ট অর্থবহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে, তা দুভাগে বিভক্ত। জইফ বা দুর্বল, মওজু বা (বানোয়াট) জাল হাদিস। তিনি সব কয়টি হাদিস একত্র করেছেন, দেখা গেছে, ১১টি দুর্বল হাদিস, ২১টি জাল হাদিস।
ইবনে কাইয়ূম রহ. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাগাতার তিন মাস (রজব, শাবান, রমজান) রোজা রাখেননি-যেমন কিছু লোক করে থাকে। রজবে কখনো রোজা রাখেননি, রোজা পছন্দও করেননি।
লাজনায়ে দায়েমার ফতওয়াতে আছে, রজবের কতক দিনকে রোজার জন্য নির্দিষ্ট করার ব্যাপারে আমাদের কোন দলিল জানা নেই।
২. রজব মাসে ওমরা : 
কোন হাদিসে প্রমাণ নেই, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাসে ওমরা করেছেন। এ জন্য নির্দিষ্ট ভাবে রজবে ওমরা করা কিংবা এতে ওমরার বিশেষ ফজিলত আছে-বিশ্বাস করা বেদআত।
শায়েখ মুহাম্মাদ ইব্রাহিম রহ. তার ফতওয়াতে বলেন, রজব মাসকে জিয়ারত ইত্যাদির মত আমল দ্বারা নির্দিষ্ট করার পিছনে কোন মৌলিক ভিত্তি নেই। কারণ, ইমাম আবু শামা স্বীয় কিতাবে كتاب البدع والحوادث প্রমাণ করেছেন, শরিয়তকে পাশ কাটিয়ে বিশেষ কোন সময়ের সাথে কোন এবাদত নির্দিষ্ট করা অনুচিত, অবৈধ। কারণ, শরিয়ত কর্তৃক বিশেষ কিংবা সাধারণ আমলের জন্য কোন সময় নির্ধারণ করণ ব্যতীত, সব দিন-ক্ষণ-সময় সমান মর্যাদার। এ জন্যই ওলামায়ে কেরাম রজব মাসে বেশি বেশি ওমরা করতে নিষেধ করেছেন। তবে কেউ যদি স্বাভাবিক নিয়মে (ফজিলতের বিশ্বাস বিহীন) রজব মাসে ওমরা করে, তাতে দোষ নেই। কারণ, এ সময়েই তার জন্য ওমরা করার সুযোগ হয়েছে।

Friday 15 May 2015

প্রশ্নঃ আযানের জবাব কিভাবে দিতে হয়?


উত্তরঃ মুয়াজ্জিন আযানে যা যা বলবে তার সাথে সাথে তাই বলতে হবে, শুধুমাত্র হাইয়্যা আ’লাস সালাহ ও হাইয়্যা আ’লাল ফালাহ বললে জবাবে সেটা না বলে বলতে হবে “লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ”।
لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ
এটা হচ্ছে আযানের জবাব দেওয়ার পদ্ধতি। আযানের জবাব দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাহ।
বিঃদ্রঃ ফযরের আযানে আস-সালাতু খায়রুম-মিনান-নাওম ও জামাতের ইকামাতের সময় ক্বাদকা মাতিস সালাহ – এই দুইটি বাক্যের জবাবে এইগুলোই বলতে হবে। অন্য কিছু বলতে এমন কোনো কিছু সহীহ হাদীসে নাই – তাই যা আছে তাই বলতে হবে।
“আস-সালাতু খায়রুম-মিনান-নাওম” এর জবাবে “সাদাক্বতা ওয়া বারারতা” বলার কোনো ভিত্তি নেই (জাল কথা)।
মিরআ’ত ২/৩৬৩, হা/৬৬২।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...