জাবির বিন আ’বদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আল ফাতহ’ মসজিদে তিন দিন দুয়া করেছেন। সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার। কিন্তু, বুধবার দিবসের দুয়া দুই সালাত (যোহর ও আসরের) মধ্যবর্তী সময়ে কবুল হয়েছে। ফলে তাঁর চেহারা মোবারকে আনন্দের উজ্জলতা দেখা গেছে।”
জাবের রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, “এরপর থেকে আমি যখনই কোন কঠিন বিষয়ের সম্মুখীন হতাম, আমি উক্ত (বুধবার) দিবসের ঐ (যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী) সময়কে দুয়ার জন্য নির্বাচন করতাম এবং দুয়া করতাম। অতঃপর আমি বুঝতে পারতাম যে, আমার দুয়া কবুল হয়েছে।”
ইমাম বুখারী রাহি’মাহুল্লাহ ‘আদাবুল মুফরাদ’ গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আরো বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ ও বাযযার। ইমাম আলবানী রাহি’মাহুল্লাহ হাদীটিকে ‘হাসান’ বলেছেন, সহীহ আদাবুল মুফরাদঃ ১/২৪৬, হাদীস নং-৭০৪, সহীহ তারগীব ও তারহীবঃ ১১৮৫।
শায়খ আলবানী রাহি’মাহুল্লাহ এই হাদীসের ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “সম্মানিত সাহাবী (জাবির বিন আ’বদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু) আমাদেরকে এই বিষয়টি জানিয়েছেন যে, দুয়ার জন্য বুধবার দিবসের সেই সময়টি ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে উদ্দেশিত সময়। উপস্থিত ব্যক্তি যা দেখতে ও জানতে পারে, অনুপস্থিত ব্যক্তি তা দেখতে ও জানতে পারে না। আর স্বচক্ষে দেখা সংবাদের মত সঠিক ও সত্য অন্য কোন সংবাদ হতে পারে না। এই সাহাবী যদি আমাদেরকে সংবাদটি না জানাতেন, তবে হয়তো আমরা বলতাম যে, ঘটনাক্রমে ঐ দিনের ঐ সময়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম দুয়া করেছেন এবং তাঁর দুয়া কুবল হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে, উক্ত সাহাবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে যা করতে দেখেছেন, সেই দিন ও সময় অনুযায়ী নিজে আমল করেছেন এবং তিনি-ও তার ফলও পেয়েছেন। অতএব, এই সাহাবীর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম যে, এটা একটা সুন্নাতী আমল।”
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়া রাহি’মাহুল্লাহ বলেন, “আমাদের একদল আলেম এই হাদীসের প্রতি আমল করে বুধবার দিনের এই সময়ে দুয়া করতে প্রয়াস চালাতেন। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে জাবির রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে। কিন্তু জাবির রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে একথা বর্ণিত হয়নি, যে তিনি দুয়ার জন্য স্থানটিকে (ফাতহ মসজিদ) উদ্দেশ্য করতেন। বরং তিনি শুধু ঐ সময়টিকেই অনুসন্ধান করতেন।” ইক্বতেদা সিরাতুল মুসতাকীমঃ ১/ ৪৩৩।
ইমাম বায়হাক্বী রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “দুয়ার জন্য উপযুক্ত সময়, অবস্থা ও স্থান অনুসন্ধান করা উচিত। যাতে করে দুয়া কবুল হওয়ার আশা পূর্ণরূপে করা যায়। আর দুয়া কবুল হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে বুধবার দিনে যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়।” শুআ’বুল ঈমানঃ ২/৪৬।
ফুটনোটঃ
(১) লেখাটির জন্য কৃতজ্ঞতা শায়খ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী ও আবুল আলিয়া ব্লগ, এড্রেস
http://www.abuaaliyah.com/
(২) বুধবার দুয়া কবুল সংক্রান্ত হাদীসটিকে কিছু আলেম সহীহ বলে গ্রহণ করেন নি, আবার অনেক আলেম হাদীসটিক ‘হাসান’ বলে কবুল করছেন, যাদের মাঝে রয়েছে ইমাম বায়হাক্বী, ইমাম আলবানী, আল্লাহ তাদের প্রতি রহম করুন। এছাড়া ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহি’মাহুল্লাহ “একদল আলেম এই হাদীসের প্রতি আমল করেছেন” বলে এটিকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সুতরাং, দুয়া কবুলের আশা নিয়ে বুধবার উক্ত সময়ে দুয়া করা করা যাবে, বিদআ’ত হবে না। তবে কেউ যদি ভিন্ন মত পোষণকারী আলেমদের উপরে নির্ভর করে উক্ত হাদীসকে ‘জইয়ীফ’ বা এই আমলকে সঠিক মনে না করেন, তাহলে তাকে দোষ দেওয়া যাবে না। অনেক ফিক্বহী মাসলা-মাসায়েলে আলেমরা দ্বিমত করেন, সেই সমস্ত বিষয়ে একজন আরেকজনকে কোন মত চাপিয়ে দেওয়া বা বাধ্য করার সুযোগ নেই।