আমরা জানি সবচেয়ে বড় পাপ হচ্ছে 'শিরক'।
প্রশ্ন হচ্ছে শিরকের সমপর্যায়ের কোন পাপ আছে কি?
থাকলে সেগুলো কি কি?
মূলত: আমাদের আকীদা বিশুদ্ধ করার জন্যই এই প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার।
অন্যথা যে সমস্ত অপরাধ শিরক বা কুফরী নয়; অথচ তা সেই পর্যায়ের মনে করলে পরিণাম ভয়াবহ হবে। একজন মানুষ সুদ, ঘুষ, মদ্যপান, ব্যভিচার... ইত্যাদি কোন একটি কাবীরা গুনাহে লিপ্ত হল.. তখন যদি এমন মন্তব্য করা হয় যে, সে তো ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছে। মারাত্মক অপরাধ করেছে... আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না... তাহলে এই বিশ্বাসের ফলে মন্তব্যকারীই বিপদে পড়ে যাবে।
কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে (কোন গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণে বা বিনা কারণে) কাফের বলবে, তখন লোকটি যদি কাফের না হয়, তবে এই কথাটি তার নিটকেই ফিরে আসবে”। (অর্থাৎ যে এই কথাটি বলেছিল সেই কাফের হয়ে যাবে।) (আহমাদ, মুসলিম)
উল্লেখিত প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে:
শিরক তো নি:সন্দেহে সবচেয়ে বড় গুনাহ... যা নিয়ে কোন মানুষ মৃত্যু বরণ করলে, তার ক্ষমা নেই। চিরকাল জাহান্নামী।
এ ছাড়া আরো ৩ টি অপরাধ এমন আছে যা বড় শিরকের মতই ক্ষমার অযোগ্য। ঐ অপরাধগুলো নিয়ে যদি কোন মানুষ মৃত্যু বরণ করে, তবে সে জাহান্নামে চিরকাল অবস্থান করবে।
(১) বড় কুফরী
(২) বড় নেফাকী
(৩) সন্দেহ।
বড় কুফরীর কিছু উদাহরণ:
# আল্লাহ তায়ালা বা তাঁর নবী-রাসূলদেরকে গালি দেয়া অথবা আল্লাহর ফেরেশতাদের গালি দেয় বা কোন একজন রাসূলকে গালি দেয়া।
# এঁদের বিষয়ে অশ্লীল কথা বলা,
# রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর নবুয়তের দাবী করা অথবা এরূপ দাবি কেউ করলে তাকে নবী বলে স্বীকৃতি দেয়া।
# কুরআন অবমাননা করা,
# যাদুবিদ্যা শিক্ষা করা বা শিখানো
# ঈমানের ছয়টি বিষয়ের কোন একটিকে অস্বীকার করা। যেমন পরকাল, তাক্বদীর... ইত্যাদি অবিশ্বাস করা।
# আল্লাহর আইনের বিপরীত আইন রচনা করা এবং তা বৈধ বিশ্বাস করা।
# সুস্পষ্ট হারাম: যেমন ব্যভিচার, শুকর, মদ, সুদ, ঘুষ, বিনা কারণে মানুষ হত্যা ইত্যাদি প্রকাশ্য হারামকে হালাল বিশ্বাস করা।
# ইসলামের সুস্পষ্ট কোন বিধান বর্জন করাকে হালাল বিশ্বাস করা। যেমন, সালাত বা সিয়াম বা যাকাত বা হজ্জ বা এরকম কোন একটি সুস্পষ্ট বিষয়কে আমল না করা হালাল বা এগুলোকে আমল করা হারাম বা অবৈধ বিশ্বাস।
বড় নেফাক:
তা হল বিশ্বাসে নিফাকী। যারা মুখে ইসলাম প্রকাশ করা সত্বেও অন্তরে কুফরি ঢেকে রাখে তারা বড় নেফাকের অন্তর্ভুক্ত। এ ধরণের লোক ইসলামের গণ্ডি বহির্ভূত। সে জাহান্নামের সর্ব নিম্নে অবস্থান করবে। (নিসা: ১৪৫)
আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারার প্রথমাংশে তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে কুফরি, বিশ্বাসহীনতা, দ্বীন নিয়ে উপহাস, মুসলিম জাতিকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ, কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন, মুসলিমদের সাথে শত্রুতা ইত্যাদি। সর্বযুগে সবখানেই তারা বিদ্যমান। তারা মুসলিমদের সাথেই বসবাস করে। তারা ঈমানের প্রকাশ করলেও বস্তুত: তা শুধু তাদের রক্ত ও সম্পদ সংরক্ষণের স্বার্থে। দুনিয়াবি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে। সঠিকভাবে ঈমানের বিষয়ে তারা মিথ্যাবাদী।
সন্দেহ:
# রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনিত বিধানগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করা।
# রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্যবাদিতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করা।
# কোন নবী-রাসূলের ধর্মকে সন্দেহ করা
# দ্বীন ইসলাম বর্তমান যুগোপযোগী হওয়ার বিষয়ে মনে সন্দেহ পোষণ করা।
# ইসলামে যে সকল বিষয় সুস্পষ্টভাবে হারাম করা হয়েছে (ব্যভিচার, শুকর, মদ, সুদ, ঘুষ, বিনা কারণে মানুষ হত্যা.. ইত্যাদি) তা হারাম বিশ্বাস করার ব্যাপারে সন্দেহ করলেও ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
# ইসলামে যে সকল বিষয় আবশ্যক করা হয়েছে (সালাত, যাকাত, সিয়াম, হজ্জ.. ইত্যাদি) এগুলো না বেঠিক এরূপ সন্দেহ মনের মধ্যে পোষণ করা।
আল্লাহ আমাদেরকে সবধরণের অপরাধ থেকে মুক্ত থাকার তাওফীক দান করুন।