Saturday 16 May 2015

রজব মাসকে কেন্দ্র করে কতিপয় নতুন আবিষ্কৃত আমল (বিদআত)


লেখকঃ সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনাঃ কাউসার বিন খালেদ
ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ
Islamhouse.com
১. রজব মাসের রোজা :
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাহাবাদের থেকে রজব মাসের রোজার ফজিলতের ব্যাপারে প্রামাণ্য কোন দলিল নেই। তবে অন্যান্য মাসের মত এ মাসেও, সপ্তাহের সোমবার, বৃহস্পতিবার, মাসের তেরো, চৌদ্দ, পনেরো তারিখ, একদিন রোজা রাখা, পরের দিন না রাখা- সওয়াবের, বৈধ ও সুন্নত। ওমর রা. রজব মাসের রোজা হতে নিষেধ করতেন। কারণ, এতে ইসলাম-পূর্ব কুসংস্কারাচ্ছন্ন জাহেলি যুগের সাথে সামঞ্জস্য বিদ্যমান।
হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেন, রজবের নির্দিষ্ট-অনির্দিষ্ট দিনের রোজা, কিংবা রজবের নির্দিষ্ট কোন রাতের রোজার ব্যাপারে প্রমাণ যোগ্য কোন সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়নি। যে কয়টি সুস্পষ্ট অর্থবহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে, তা দুভাগে বিভক্ত। জইফ বা দুর্বল, মওজু বা (বানোয়াট) জাল হাদিস। তিনি সব কয়টি হাদিস একত্র করেছেন, দেখা গেছে, ১১টি দুর্বল হাদিস, ২১টি জাল হাদিস।
ইবনে কাইয়ূম রহ. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাগাতার তিন মাস (রজব, শাবান, রমজান) রোজা রাখেননি-যেমন কিছু লোক করে থাকে। রজবে কখনো রোজা রাখেননি, রোজা পছন্দও করেননি।
লাজনায়ে দায়েমার ফতওয়াতে আছে, রজবের কতক দিনকে রোজার জন্য নির্দিষ্ট করার ব্যাপারে আমাদের কোন দলিল জানা নেই।
২. রজব মাসে ওমরা : 
কোন হাদিসে প্রমাণ নেই, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাসে ওমরা করেছেন। এ জন্য নির্দিষ্ট ভাবে রজবে ওমরা করা কিংবা এতে ওমরার বিশেষ ফজিলত আছে-বিশ্বাস করা বেদআত।
শায়েখ মুহাম্মাদ ইব্রাহিম রহ. তার ফতওয়াতে বলেন, রজব মাসকে জিয়ারত ইত্যাদির মত আমল দ্বারা নির্দিষ্ট করার পিছনে কোন মৌলিক ভিত্তি নেই। কারণ, ইমাম আবু শামা স্বীয় কিতাবে كتاب البدع والحوادث প্রমাণ করেছেন, শরিয়তকে পাশ কাটিয়ে বিশেষ কোন সময়ের সাথে কোন এবাদত নির্দিষ্ট করা অনুচিত, অবৈধ। কারণ, শরিয়ত কর্তৃক বিশেষ কিংবা সাধারণ আমলের জন্য কোন সময় নির্ধারণ করণ ব্যতীত, সব দিন-ক্ষণ-সময় সমান মর্যাদার। এ জন্যই ওলামায়ে কেরাম রজব মাসে বেশি বেশি ওমরা করতে নিষেধ করেছেন। তবে কেউ যদি স্বাভাবিক নিয়মে (ফজিলতের বিশ্বাস বিহীন) রজব মাসে ওমরা করে, তাতে দোষ নেই। কারণ, এ সময়েই তার জন্য ওমরা করার সুযোগ হয়েছে।
৩. সালাতে রাগায়েব :
হাদিস শাস্ত্রে কতিপয় মিথ্যাচারের দ্বারা এ নামাজের সূচনা হয়। এ নামাজ রজবের প্রথম রাতে পড়া হয়। এ ব্যাপারে ইমাম নববি রহ. বলেন, এটি নিন্দনীয়, ঘৃণিত, জঘন্যতম বেদআত। যা কয়েকটি অপরাধ ও নিষিদ্ধ কর্মের সমন্বয়ে রচিত। সুতরাং একে পরিত্যাগ করা, এর থেকে বিরত থাকা এবং এর সম্পাদনকারীকে নিষেধ করা কর্তব্য।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, ইমাম মালেক, শাফি, আবু হানিফা, সাওরি, লাইস প্রমুখের মতে সালাতে রাগায়েব বেদআত। হাদিস বিশারদগণের দৃষ্টিতে এ ব্যাপারে বর্ণিত সকল হাদিস জাল, বানোয়াট।
৪. রজব মাসের ২৭ তারিখ রজনী লাইলাতুল মিরাজ মনে করে জমায়েত হওয়া ও মাহফিল করা :
মেরাজের রজনী কিংবা মেরাজের মাস নির্ধারণের ব্যাপারে কোন প্রমাণ দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে অনেক মতভেদ আছে, সত্য অনুদ্ঘাটিত। তাই এ ক্ষেত্রে নিশ্চুপ থাকাই শ্রেয়। মেরাজের রজনি নির্দিষ্ট করণের ব্যাপারে কোন বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়নি। যা বিদ্যমান আছে, সব জাল, ভিত্তিহীন। (বেদায়া নেহায়া ২:১০৭, মাজমুউল ফতওয়া ২৫:২৯৮) অতএব এ রাতে অতিরিক্ত এবাদত ধার্য করা, যেমন রাত জাগা, দিনে রোজা রাখা, অথবা ঈর্ষা, উল্লাস প্রকাশ করা, নারী-পুরুষ অবাধ মেলা-মেশা, গান-বাদ্যসহ মাহফিলের আয়োজন করা, যা বৈধ, শরিয়ত কর্তৃক স্বীকৃত ঈদেও না-জায়েজ-হারাম, এখানের তো বলার অপেক্ষা রাখে না। উপরন্তু মেরাজ রাত্রি ঐতিহাসিকভাবেও সুনির্দিষ্ট নয়। প্রমাণিত মনে করলেও এতে মাহফিল করার কোন জো নেই। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম এবং আদর্শ পূর্বসুরীগণ হতে এ ব্যাপারে কোন দিক-নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
৫. রজব মাসে গুরুত্বসহকারে কবর জিয়ারত করা : এটিও বেদআত। কারণ, কবর জিয়ারত বছরের যে কোন সময় হতে পারে।
৬. রজব মাসে পশু জবাই বা এ জাতীয় কিছু উৎসর্গ করা :
জাহিলিয়াতে রজব মাসকে নির্দিষ্ট করে এ ধরনের আমল সম্পাদন করা হত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা নিষেধ করেন। ইমাম ইবনে রজব বলেন, রজব মাসে পুন্য মনে করে জবাই করা, ঈদ-উৎসব উদযাপন করার মত।
রজব মাসে করণীয় ও বর্জনীয় :
নিজের কিংবা অন্যের উপর জুলুম করা হতে বিরত থাকা, যার অর্থ – ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা, বেশি বেশি নেক আমল করা, আল্লাহ কর্তৃক সংরক্ষিত ও নিষিদ্ধ বিষয় বস্তু পরিত্যাগ করা। অর্থাৎ নিখাদ তওবা করা, আল্লাহ তাআলার শরণাপন্ন হওয়া, রমজান মাসের ভাগ্যবান ও লাইলাতুল কদরের মুক্তিপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া।
সুপ্রিয় পাঠক, বর্তমান রজব মাস থেকে তৈরি হন। এবাদত, আনুগত্য, অনুসরণ এবং আল্লাহ বশীভূত হওয়ার জন্য অন্তর ও শরীরের অনুশীলনের ব্রত গ্রহণ করুন।
ওয়েব গ্রন্থনা : আবুল কালাম আযাদ আনোয়ার /সার্বিক যত্ন : আবহাছ এডুকেশনাল এন্ড রিসার্চ সোসাইটি, বাংলাদেশ।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...