সংক্ষিপ্ত বর্ননাঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর তাআলার জন্য যিনি আ্মাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকূলের সেরা জীব মানুষ হিসেবে এবং এই সুন্দর পৃথীবিতে পাঠিয়েছেন মুসলিম করে। সেই সাথে শান্তি বর্ষিত হউক নবী (ছাঃ) এর উপর যিনি দ্বীনকে এত সুন্দর করে আমাদের কাছে পৌছে দিয়েছেন। একজন মানুষের জন্য ইসলামের জ্ঞান অর্জন ফরয ততটুকু যতটুকু দ্বীন পালন করতে প্রয়োজন হয়।আর এই দ্বীন অর্জন করতে হবে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে । বই ফতোওয়া আরকানুল থেকে সংগৃহীত কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কিছু গুরুত্বপূর্ন উত্তর জেনে নেই
ঋতুবতী ফজরের পূর্বে পবিত্র হলে রোযা রাখবে।
প্রশ্নঃ (৪১৭) ঋতুবতী যদি ফজরের পূর্বে পবিত্র হয় এবং ফজর হওয়ার পর গোসল করে, তবে তার রোযার বিধান কি?
উত্তরঃফজরের পূর্বে পবিত্র হয়েছে এব্যাপারে নিশ্চিত হলে, তার ছিয়াম বিশুদ্ধহবে। কেননা নারীদের মধ্যে অনেকে এমন আছে, ধারণা করে যে পবিত্র হয়ে গেছেঅথচ সে আসলে পবিত্র হয়নি। এই কারণে নারীরা আয়েশা (রাঃ) এর কাছে আসতেনতাদের লজ্জাস্থানে তুলা লাগিয়ে উক্ত তুলার চিহ্ন দেখানোর জন্য যে, তারা কিপবিত্র হয়েছেন? তখন তিনি বলতেন, لَا تَعْجَلْنَ حَتَّى تَرَيْنَ الْقَصَّةَ الْبَيْضَاءَ ‘তোমরা তাড়াহুড়া করবে না যতক্ষণ না তোমরা কাছ্ছা বাইযা (বা সাদা পানি)না দেখ।’অতএব নারী অবশ্যই ধীরস্থীরতার সাথে লক্ষ্য করবে এবং নিশ্চিত হবেপূর্ণরূপে পবিত্র হয়েছে কিনা। যদি পবিত্র হয়ে যায় তবে ছিয়ামের নিয়তকরে নিবে। ফজর হওয়ার পর গোসল করবে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু নামাযের দিকেলক্ষ্য রেখে দ্রুত গোসল সেরে নেয়ার চেষ্টা করবে, যাতে করে সময়ের মধ্যেইফজর নামায আদায় সম্ভব হয়।
আমরাশুনতে পাই অনেক নারী ফজরের পূর্বে বা পরে ঋতু থেকে পবিত্র হয়, কিন্তুতারা গোসল করতে দেরী করে নামাযের সময় পার করে দেয়। পরিপূর্ণ পবিত্র ওপরিচ্ছন্ন হওয়ার যুক্তিতে সূর্য উঠার পর গোসল করে। কিন্তু এটা মারাত্মকধরণের ভুল। চাই তা রামাযান মাসে হোক বা অন্য মাসে। কেননা তার উপর ওয়াজিবহচ্ছে সময়মত নামায আদায় করার জন্য দ্রুত গোসল সেরে নেয়া। নামাযেরউদ্যেশ্যে গোসলের ওয়াজিব কাজগুলো সারলেই যথেষ্ট হবে। তারপর দিনের বেলায়আবারো যদি পরিপূর্ণরূপে অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতার জন্য গোসল করে, তবে কিঅসুবিধা আছে?
ঋতুবতীনারীর মত অন্যান্য নাপাক ব্যক্তিগণ (যেমন স্ত্রী সহবাস বা স্বপ্ন দোষেরকারণে নাপাক) নাপাক অবস্থাতেই ছিয়ামের নিয়ত করতে পারবে। এবং ফজর হওয়ারপর গোসল করে নামায আদায় করবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনো কখনো স্ত্রী সহবাসের কারণে নাপাক অবস্থাতেই ছিয়ামের নিয়তকরতেন এবং ফজর হওয়ার পর নামাযের আগে গোসল করতেন।[37] (আল্লাহ্ই অধিকজ্ঞান রাখেন।)
প্রশ্নঃ (৪১৮) রোযা অবস্থায় দাঁত উঠানোর বিধান কি?
উত্তরঃসাধারণ দাঁত বা মাড়ির দাঁত উঠানোতে যে রক্ত প্রবাহিত হয়, তাতে রোযা ভঙ্গহবে না। কেননা এতে শিঙ্গা লাগানোর মত প্রভাব পড়ে না। তাই রোযাও ভঙ্গ হবেনা।
প্রশ্নঃ (৪১৯) রোযা রেখে রক্ত পরীক্ষা (Blood test) করার জন্য রক্ত প্রদান করার বিধান কি? এতে কি রোযা নষ্ট হবে।
উত্তরঃব্লাড টেষ্ট করার জন্য রক্ত বের করলে রোযা ভঙ্গ হবে না। কেননা ডাক্তারঅসুস্থ ব্যক্তির চেক আপ করার জন্য রক্ত নেয়ার নির্দেশ দিতে পারে। কিন্তুএই রক্ত নেয়া অল্প হওয়ার কারণে শিঙ্গা লাগানোর মত এর কোন প্রভাব শরীরেদেখা যায় না, তাই এতে রোযা ভঙ্গ হবেনা। আসল হচ্ছে ছিয়াম ভঙ্গ না হওয়া-যতক্ষণ পর্যন্ত রোযা ভঙ্গের জন্য শরীয়ত সম্মত দলীল না পাওয়া যাবে। আরসামান্য রক্ত বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে এখানে এমন কোন দলীল পাওয়া যায় না।
কিন্তুরোগীর শরীরে রক্ত প্রবেশ করার জন্য বেশী পরিমাণে রক্ত প্রদান করা রোযাভঙ্গের অন্যতম কারণ। কেননা এর মাধ্যমে শিঙ্গা লাগানোর মত শরীরে প্রভাবপড়ে। অতএব ছিয়াম যদি ওয়াজিব হয়, তবে এভাবে বেশী পরিমাণে রক্ত দান করাজায়েয নয়। তবে রোগীর অবস্থা যদি আশংকা জনক হয়, মাগরিব পর্যন্ত অপেক্ষাকরলে তার প্রাণ নাশের সম্ভাবনা থাকে এবং ডাক্তারদের সিদ্ধান্ত যে, এইরোযাদারের রক্তই শুধু রোগীর উপকারে আসবে ও তার প্রাণ বাঁচানো সম্ভবপর হতেপারে, তবে এই অবস্থায় রক্ত দান করতে কোন অসুবিধা নেই। রক্ত দানের মাধ্যমেরোযা ভঙ্গ করে পানাহার করবে। অতঃপর এই রোযার কাযা আদায় করবে। (আল্লাহ্ইঅধিক জ্ঞান রাখেন।)
প্রশ্নঃ (৪২০) রোযাদার হস্ত মৈথুন করলে কি রোযা ভঙ্গ হবে? তাকে কি কোন কাফ্ফারা দিতে হবে?
উত্তরঃরোযাদার হস্ত মৈথুন করে যদি বীর্যপাত করে তবে তার রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।দিনের বাকী অংশ তাকে ছিয়াম অবস্থায় কাটাতে হবে। এ অপরাধের জন্য আল্লাহ্রকাছে তওবা করতে হবে এবং উক্ত দিনের রোযা কাযা আদায় করতে হবে। কিন্তুকাফ্ফারা আবশ্যক হবে না। কেননা কাফ্ফারা শুধুমাত্র সহবাসের মাধ্যমে রোযাভঙ্গ করলে আবশ্যক হবে।
প্রশ্নঃ (৪২১) রোযাদারের জন্য আতর-সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়ার বিধান কি?
উত্তরঃরোযাদারের আতর-সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়াতে কোন অসুবিধা নেই। চাই তৈল জাতীয়হোক বা ধোঁয়া জাতীয়। তবে ধোঁয়ার সুঘ্রাণ নাকের কাছে নিয়ে শুঁকবে না।কেননা এতে একজাতীয় পদার্থ আছে যা পেট পর্যন্ত পৌঁছায়, তখন রোযা ভঙ্গ হয়েযাবে। যেমন পানি বা তদানুরূপ বস্তু। কিন্তু সাধারণ ভাবে তার সুঘ্রাণ নাকেঢুকলে কোন অসুবিধা নেই।
প্রশ্নঃ (৪২২) নাকে ধোঁয়া টানা এবং চোখে বা নাকে ড্রপ দেয়ার মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তরঃউভয়ের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, নাকে ভাপের ধোঁয়া টানা নিজ ইচ্ছায় হয়েথাকে। যাতে করে ধোঁয়ার কিছু অংশ পেটে প্রবেশ করে, তাই এতে রোযা ভঙ্গ হয়েযাবে। কিন্তু ড্রপ ব্যবহার করে উহা পেটে পৌঁছানোর ইচ্ছা করা হয় না; বরংএতে উদ্দেশ্য হচ্ছে নাকে বা চোখে শুধু ড্রপ ব্যবহার করা।
প্রশ্নঃ (৪২৩) রোযাদারের নাকে, কানে ও চোখে ড্রপ ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃনাকের ড্রপ যদি নাড়ী পর্যন্ত পৌঁছে তবে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননালাক্বীত বিন সাবুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেন, وَبَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًاছিয়াম অবস্থায় না থাকলে ওযুর ক্ষেত্রে নাকে অতিরিক্ত পানি নিবে।[38] অতএব পেটে পৌঁছে এরকম করে রোযাদারের নাকে ড্রপ ব্যবহার করা জায়েয নয়।কিন্তু পেটে না পৌঁছলে কোন অসুবিধা নেই।
চোখেড্রপ ব্যবহার করা সুরমা ব্যবহার করার ন্যায়। এতে রোযা নষ্ট হবে না।অনুরূপভাবে কানে ড্রপ ব্যবহারেও রোযা বিনষ্ট হবে না। কেননা এসব ক্ষেত্রেনিষেধাজ্ঞার কোন দলীল নেই। এবং যে সব ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা এসেছে এগুলো তারওঅন্তর্ভূক্ত নয়। চোখ বা কান দ্বারা পানাহার করা যায় না। এগুলো শরীরেরঅন্যান্য চামড়ার লোমকুপের মত।
বিদ্বানগণউল্লেখ করেছেন, কোন লোকের পায়ের তলায় যদি তরল কোন পদার্থ লাগানো হয় এবংএর স্বাদ গলায় অনুভব করে, তবে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। কেননা উহাখানা-পিনা গ্রহণের স্থান নয়। অতএব সুরমা ব্যবহার করলে, চোখে বা কানে ড্রপব্যবহার করলে রোযা নষ্ট হবে না- যদিও এগুলো ব্যবহার করলে গলায় স্বাদ অনুভবকরে।
অনুরূপভাবে চিকিৎসার জন্য অথবা অন্য কোন কারণে যদি কেউ তৈল ব্যবহার করে, তাতেও রোযার কোন ক্ষতি হবে না।
এমনিভাবেশ্বাস কষ্ট দূর করার জন্য যদি মুখে পাইপ লাগিয়ে অক্সিজেনের মাধ্যমেশ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়াকে চলমান করা হয়, এবং তা পেটে পৌঁছে, তাতেওরোযার কোন ক্ষতি হবে না। কেননা উহা পানাহারের অন্তর্ভূক্ত নয়।
প্রশ্নঃ (৪২৪) রোযা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে কি ছিয়াম বিশুদ্ধ হবে?
উত্তরঃহ্যাঁ, তার ছিয়াম বিশুদ্ধ হবে। কেননা স্বপ্নদোষ রোযা বিনষ্ট করে না। এটাতো মানুষের অনিচ্ছায় হয়ে থাকে। আর নিদ্রা অবস্থায় সংঘটিত বিষয় থেকে কলমউঠিয়ে নেয়া হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে একটি সতর্কতাঃ বর্তমান যুগে অনেক মানুষ রামাযানের রাতে জেগেথাকে। কখনো আজেবাজে কর্ম এবং কথায় রাত কাটিয়ে দেয়। তারপর গভীর নিদ্রায়সমস্ত দিন অতিবাহিত করে। বরং মানুষের উচিত হচ্ছে, রোযার সময়টাকে যিকির, কুরআন তেলাওয়াত প্রভৃতি আনুগত্যপূর্ণ ও আল্লাহর নৈকট্যদানকারী কাজেঅতিবাহিত করা।
প্রশ্নঃ (৪২৫) রোযাদারের ঠান্ডা ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃঠান্ডা-শীতল বস্তু অনুসন্ধান করা রোযাদার ব্যক্তির জন্য জায়েয, কোনঅসুবিধা নেই। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোযা রেখে গরমেরকারণে বা তৃষ্ণার কারণে মাথায় পানি ঢালতেন।[39] ইবনু ওমর (রাঃ) রোযা রেখেগরমের প্রচন্ডতা অথবা পিপাসা হ্রাস করার জন্য শরীরে কাপড় ভিজিয়ে রাখতেন।কাপড়ের এই সিক্ততার কোন প্রভাব নেই। কেননা উহা এমন পানি নয়, যা নাড়ীপর্যন্ত পৌঁছে দেয়।
প্রশ্নঃ (৪২৬) রোযাদার কুলি করা বা নাকে পানি নেয়ার কারণে যদি পেটে পৌঁছে যায়, তবে কি তার রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে?
উত্তরঃরোযাদারকুলি করা বা নাকে পানি নেয়ার কারণে যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি পেটে পৌঁছেযায়, তবে তার রোযা ভঙ্গ হবে না। কেননা এতে তার কোন ইচ্ছা ছিল না। আল্লাহ্বলেন,
]وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ[
ভুলক্রমে তোমরা যা করে ফেল সে সম্পর্কে তোমাদের কোন গুনাহ্ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তর যার ইচ্ছা করে তার কথা ভিন্ন।(সূরা আহযাবঃ ৫)
প্রশ্নঃ (৪২৭) রোযাদারের আতরের সুঘ্রাণ ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃ৪২১ নং প্রশ্নের উত্তর দেখুন।
প্রশ্নঃ (৪২৮) নাক থেকে রক্ত বের হলে কি রোযা নষ্ট হবে?
উত্তরঃনাক থেকে রক্ত বের হলে রোযা নষ্ট হবে না- যদিও বেশী পরিমাণে বের হয়। কেননা এখানে ব্যক্তির কোন ইচ্ছা থাকেনা।
সতর্কতা বশতঃ ফজরের দশ/পনর মিনিট পূর্বে পানাহার বন্ধ করা।
প্রশ্নঃ (৪২৯) রামাযানের কোন কোন ক্যালেন্ডারে দেখা যায় সাহুরের জন্য শেষ টাইমনির্ধারণ করা হয়েছে এবং তার প্রায় দশ/পনর মিনিট পর ফজরের টাইম নির্ধারণকরা হয়েছে। সুন্নাতে কি এর পক্ষে কোন দলীল আছে নাকি এটা বিদআত?
উত্তরঃনিঃসন্দেহে ইহা বিদআত। সুন্নাতে নববীতে এর কোন প্রমাণ নেই। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা সম্মানিত কিতাবে বলেন,
]وَكُلُواوَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمْ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنْالْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنْ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَىاللَّيْلِ[
এবংপ্রত্যুষে (রাতের) কাল রেখা হতে (ফজরের) সাদা রেখা প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ততোমরা খাও ও পান কর; অতঃপর রাত্রি সমাগম পর্যন্ত তোমরা রোযা পূর্ণকর।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৭)
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
أَنَّبِلَالًا كَانَ يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ فَإِنَّهُ لَا يُؤَذِّنُ حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ
নিশ্চয়বেলাল রাত থাকতে আযান দেয়, তখন তোমরা খাও ও পান কর, যতক্ষণ না ইবনে উম্মেমাকতূমের আযান শোন। কেননা ফজর উদিত না হলে সে আযান দেয় না।[40] ফজর নাহতেই খানা-পিনা বন্ধ করার জন্য লোকেরা সময় নির্ধারণ করে যে ক্যালেন্ডারতৈরী করেছে তা নিঃসন্দেহে আল্লাহ্র নির্ধারিত ফরযের উপর বাড়াবাড়ী। আরএটা হচ্ছে আল্লাহ্র দ্বীনের মাঝে অতিরঞ্জন। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ
অতিরঞ্জনকারীগণ ধ্বংস হোক। অতিরঞ্জনকারীগণ ধ্বংস হোক। অতিরঞ্জনকারীগণ ধ্বংস হোক।[41]
প্রশ্নঃ (৪৩০) এয়ারপোর্টে থাকাবস্থায় সূর্য অস্ত গেছে মুআয্যিন আযান দিয়েছে, ইফতারও করে নিয়েছে। কিন্তু বিমানে চড়ে উপরে গিয়ে সূর্য দেখতে পেল। এখনকি পানাহার বন্ধ করতে হবে?
উত্তরঃখানা-পিনা বন্ধ করা অবশ্যক নয়। কেননা যমীনে থাকাবস্থায় ইফতারের সময়হয়ে গেছে সূর্যও ডুবে গেছে। সুতরাং ইফতার করতে বাধা কোথায়? রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إِذَا أَقْبَلَ اللَّيْلُ مِنْ هَا هُنَا وَأَدْبَرَ النَّهَارُ مِنْ هَا هُنَا وَغَرَبَتِ الشَّمْسُ فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ
এদিক থেকে যখন রাত আগমণ করবে এবং ঐদিক থেকে দিন শেষ হয়ে যাবে ও সূর্য অস্ত যাবে, তখন রোযাদার ইফতার করে ফেলবে।[42]
অতএবএয়ারপোর্টের যমীনে থাকাবস্থায় যখন সূর্য ডুবে গেছে, তখন তার দিনও শেষহয়ে গেছে, তাই সে শরীয়তের দলীল মোতাবেক ইফতারও করে নিয়েছে। সুতরাংশরীয়তের দলীল ব্যতীরেকে আবার তাকে পানাহার বন্ধ করার আদেশ দেয়া যাবে না।
প্রশ্নঃ (৪৩১) রোযাদারের কফ অথবা থুথু গিলে ফেলার বিধান কি?
উত্তরঃকফ বা শ্লেষা যদি মুখে এসে একত্রিত না হয় গলা থেকেই ভিতরে চলে যায় তবেতার রোযা নষ্ট হবে না। কিন্তু যদি গিলে ফেলে তবে সে ক্ষেত্রে বিদ্বানদেরদু’টি মত রয়েছেঃ
১ম মতঃ তার রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা উহা পানাহারের স্থলাভিষিক্ত।
২য়মতঃ রোযা নষ্ট হবে না। কেননা উহা মুখের সাধারণ থুথুর অন্তর্গত। মুখেরমধ্যে সাধারণ পানি যাকে থুথু বলা হয় তা দ্বারা রোযা নষ্ট হয় না। এমনকিযদি থুথু মুখের মধ্যে একত্রিত করে গিলে ফেলে তাতেও ছিয়ামের কোন ক্ষতি হবেনা।
আমরাজানি আলেমগণ মতবিরোধ করলে তার সমাধান কুরআন-সুন্নাহ্ থেকে খুঁজতে হবে।কিন্তু এক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাতে সুস্পষ্ট কোন উক্তি নেই। এ বিষয়ে যখনসন্দেহ হয়ে গেল, তার ইবাদতটি নষ্ট হয়ে গেল না নষ্ট হল না। তখন আমাদেরকেমূলের দিকে ফিরে যেতে হবে। মূল হচ্ছে দলীল ছাড়া ইবাদত বিনষ্ট না হওয়া।অতএব কফ গিলে নিলে রোযা নষ্ট হবে না।
মোটকথাকফ নিজ অবস্থায় ছেড়ে দিবে। উহা গলার নীচে থেকে মুখে টেনে নিয়ে আসারচেষ্টা করবে না। কিন্তু মুখে এসে পড়লে বাইরে ফেলে দিবে। চাই রোযাদার হোকবা না হোক। কিন্তু গিলে ফেললে রোযা নষ্ট হবে এর জন্য দলীল দরকার।
প্রশ্নঃ (৪৩২) খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ করলে কি ছিয়াম নষ্ট হবে?
উত্তরঃখাদ্যের স্বাদ গ্রহণ করে যদি তা গিলে না ফেলে, তবে ছিয়াম নষ্ট হবে না।কিন্তু একান্ত দরকার না পড়লে এরূপ করা উচিত নয়। এ অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতযদি পেটে কিছু ঢুকে পড়ে তবে ছিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না।
প্রশ্নঃ (৪৩৩) রোযা রেখে হারাম বা অশ্লীল কথাবার্তা উচ্চারণ করলে কি ছিয়াম নষ্ট হবে?
উত্তরঃআমরাআল্লাহ্ তা’আলার নিম্ন লিখিত আয়াত পাঠ করলেই জানতে পারি ছিয়াম ফরযহওয়ার হিকমত কি? আর তা হচ্ছে তাক্বওয়া বা আল্লাহ্ ভীতি অর্জন করা ওআল্লাহ্র ইবাদত করা। আল্লাহ্ বলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ[
হেঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিলতোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার।(সূরাবাক্বারাঃ ১৮৩) তাক্বওয়া হচ্ছে হারাম কাজ পরিত্যাগ করা। ব্যাপক অর্থেতাক্বওয়া হচ্ছে, আল্লাহ্র নির্দেশিত বিষয় বাস্তাবায়ন করা, তাঁর নিষেধথেকে দূরে থাকা। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ والْجَهْلَ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ
যেব্যক্তি (রোযা রেখে) মিথ্যা কথা, মিথ্যা অভ্যাস ও মূর্খতা পরিত্যাগ করলনা, তার পানাহার পরিহার করার মাঝে আল্লাহর কোন দরকার নেই।[43] অতএব এ কথানিশ্চিত হয়ে গেল যে, রোযাদার যাবতীয় ওয়াজিব বিষয় বাস্তবায়ন করবে এবংসবধরণের হারাম থেকে দূরে থাকবে। মানুষের গীবত করবে না, মিথ্যা বলবে না, চুগলখোরী করবে না, হারাম বেচা-কেনা করবে না, ধোঁকাবাজী করবে না। মোটকথাচরিত্র ধ্বংসকারী অন্যায় ও অশ্লীলতা বলতে যা বুঝায় সকল প্রকার হারাম থেকেবিরত থাকবে। আর একমাস এভাবে চলতে পারলে বছরের অবশিষ্ট সময় সঠিক পথেপরিচালিত হবে ইনশাআল্লাহ্।
কিন্তুআফসোসের বিষয় অধিকাংশ রোযাদার রামাযানের সাথে অন্য মাসের কোন পার্থক্যকরে না। অভ্যাস অনুযায়ী ফরয কাজে উদাসীনতা প্রদর্শন করে, হালাল-হারামে কোনপার্থক্য নেই। গর্হিত ও অশ্লীল কথা কাজে লিপ্ত থাকে। মিথ্যা, ধোঁকাবাজীপ্রভৃতি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তাকে দেখলে বুঝা যাবে না তার মধ্যেছিয়ামের মর্যাদার কোন মূল্য আছে। অবশ্য এ সমস্ত বিষয় ছিয়ামকে ভঙ্গ করেদিবে না। কিন্তু নিঃসন্দেহে তার ছওয়াব বিনষ্ট করে দিবে।
প্রশ্নঃ(৪৩৪) মিথ্যা স্বাক্ষ্য দেয়ার বিধান কি? ইহা কি ছিয়াম নষ্ট করে?
উত্তরঃমিথ্যা দেয়া অন্যতম কাবীরা গুনাহ্। আর তা হচ্ছে না জেনে কোন বিষয়েস্বাক্ষ্য দেয়া অথবা জেনে শুনে বাস্তবতার বিপরীত সাক্ষ্য প্রদান করা। এতেছিয়াম বিনষ্ট হবে না। কিন্তু ছিয়ামের ছওয়াব কমিয়ে দিবে।
প্রশ্নঃ (৪৩৫) ছিয়ামের আদব কি কি?
উত্তরঃছিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ আদব হচ্ছে, আল্লাহ্ভীতি অর্জন করা তথা আল্লাহরআদেশ বাস্তবায়ন ও নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকা। কেননা আল্লাহ্ বলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ[
হেঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিলতোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার।(সূরাবাক্বারাঃ ১৮৩)
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
]مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ والْجَهْلَ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ[
যেব্যক্তি (রোযা রেখে) মিথ্যা কথা, মিথ্যা কাজ-কারবার ও মূর্খতা পরিত্যাগকরল না, তার পানাহার পরিহার করার মাঝে আল্লাহর কোন দরকার নেই।[44]
ছিয়ামেরআরো আদব হচ্ছে, বেশী বেশী দান-খায়রাত করা, নেককাজ ও জনকল্যাণ মূলক কাজবাস্তবায়ন করা। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেনসর্বাধিক দানশীল ব্যক্তি। রামাযান মাসে যখন জিবরীল (আঃ) তাঁকে কুরআন শিক্ষাদিতেন তখন তিনি আরো বেশী দান করতেন।[45]
আরোআদব হচ্ছে, আল্লাহ্ যা হারাম করেছেন তা থেকে দূরে থাকা। যাবতীয়মিথ্যাচার, গালিগালাজ, ধোকা, খিয়ানত, হারাম অশ্লীল বস্তু দেখা বা শোনাপ্রভৃতি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা প্রতিটি মানুষের উপর ওয়াজিব। বিশেষ করেরোযাদারের জন্য তো অবশ্যই।
রোযার আদব হচ্ছে, সাহুর খাওয়া। এবং তা দেরী করে খাওয়া। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةًতোমরা সাহুর খাও। কেননা সাহুরে রয়েছে বরকত।[46]
ছিয়ামেরআদব হচ্ছে, দ্রুত ইফতার করা। সূর্য অস্ত যাওয়া নিশ্চিত হলে বা অস্তযাওয়ার অনুমান প্রবল হলেই সাথে সাথে দেরী না করে ইফতার করা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, لَا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَমানুষ কল্যাণের মাঝে থাকবে, যতদিন তারা দ্রুত ইফতার করবে।[47]
ইফতারের আদব হচ্ছে, কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করা, সম্ভব না হলে যে কোন খেজুর দ্বারা। খেজুর না পেলে পানি দ্বারাই ইফতার করবে।
প্রশ্নঃ (৪৩৬) ইফতারের জন্য কোন দু’আ কি প্রমাণিত আছে? রোযাদার কি মুআয্যিনের জবাব দিবে নাকি ইফতার চালিয়ে যাবে?
উত্তরঃদু’আ কবূল হওয়ার অন্যতম সময় হচ্ছে ইফতারের সময়। কেননা সময়টি হচ্ছেইবাদতের শেষ মূহুর্ত। তাছাড়া মানুষ সাধারণতঃ ইফতারের সময় অধিক দুর্বলহয়ে পড়ে। আর মানুষ যত দুর্বল হয় তার অন্তর তত নরম ও বিনয়ী হয়। তখনদু’আ করলে মনোযোগ আসে বেশী এবং আল্লাহ্র দিকে অন্তর ধাবিত হয়।
ইফতারের সময় দু’আ হচ্ছেঃاللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُহে আল্লাহ্ আপনার জন্য রোযা রেখেছি এবং আপনার রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।[48]
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইফতারের সময় এই দু’আ পাঠ করতেনঃذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُতৃষ্ণা বিদূরিত হয়েছে, শিরা-উপশিরা তরতাজা হয়েছে এবং আল্লাহ্ চাহে তোপ্রতিদান সুনিশ্চিত হয়েছে।[49] হাদীছ দু’টিতে যদিও দুর্বলতা রয়েছে কিন্তুকোন কোন বিদ্বান উহাকে হাসান বলেছেন। মোটকথা এগুলো দু’আ বা অন্য কোন দু’আপাঠ করবে। ইফতারের সময় হচ্ছে দু’আ কবূল হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্ত।কেননা হাদীছে এরশাদ হয়েছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, إِنَّ لِلصَّائِمِ عِنْدَ فِطْرِهِ لَدَعْوَةً مَا تُرَدُّছিয়াম পালনকারীর ইফতারের সময়কার দু’আ প্রত্যাখ্যান করা হয় না।[50]
আর ইফতারের সময় মুআয্যিনের জবাব দেয়া শরীয়ত সম্মত। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُমুআয্যিনের আযান শুনলে তার জবাবে সে যা বলে তোমরাও তার অনুরূপ বল।[51] এহাদীছটি প্রত্যেক অবস্থাকে শামিল করে। তবে দলীলের ভিত্তিতে কোন অবস্থাব্যতিক্রম হলে ভিন্ন কথা।
প্রশ্নঃ (৪৩৭) ছিয়াম কাযা থাকলে শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখার বিধান কি?
উত্তরঃনবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ بِسِتٍّ مِنْ شَوَّالٍ فَكَأَنَّمَا صَامَ الدَّهْرَ
যেব্যক্তি রামাযানের রোযা রাখার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখবে, সে সারাবছর রোযা রাখার প্রতিদান লাভ করবে।[52] কোন মানুষের যদি রোযা কাযা থাকে আরসে শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখে, সে কি রামাযানের পূর্বে রোযা রাখল নারামাযানের পর।
উদাহরণঃজনৈক লোক রামাযানের ২৪টি রোযা রাখল। বাকী রইল ছয়টি। এখন সে যদি কাযাআদায় না করেই শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখে, তাকে কি বলা যাবে সে রামাযানেররোযা পূর্ণ করার পর শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখল? কেননা সে তো রামাযানের রোযাপূর্ণই করেনি। অতএব রামাযানের রোযা কাযা থাকলে শাওয়ালের ছয় রোযারপ্রতিদান তার জন্য প্রমাণিত হবে না।
অবশ্যআলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে, কারো রোযা কাযা থাকলে তার জন্য নফল রোযাজায়েয কি না? কিন্তু আমাদের এই মাসআলাটি এই মতবিরোধের অন্তর্ভূক্ত নয়।কেননা শাওয়ালের ছয়টি রোযা রামাযানের সাথে সম্পর্কিত। যে ব্যক্তিরামাযানের রোযা পূর্ণ করেনি তার জন্য উক্ত ছয় রোযার ছওয়াব সাব্যস্তহবেনা।
কাযা রোযা বাকী রেখে মৃত্যু বরণ করলে তার বিধান।
প্রশ্নঃ(৪৩৮)জনৈক অসুস্থ ব্যক্তি রামাযানে রোযা কাযা করেছে। কিন্তু পরবর্তী মাস শুরুহওয়ার চারদিনের মাথায় তার মৃত্যু হয়। তার পক্ষ থেকে কি কাযা রোযাগুলোআদায় করতে হবে?
উত্তরঃতার এই অসুখ যদি চলতেই থাকে সুস্থ না হয় এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করেতবে তার পক্ষ থেকে কাযা আদায় করতে হবেনা। কেননা আল্লাহ্ বলেন,
]وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ[
আরযে লোক অসুস্থ অথবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করেনিবে।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) অতএব অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হচ্ছে, সুস্থহলেই কাযা রোযাগুলো দ্রুত আদায় করে নেয়া।
কিন্তুরোযা রাখতে সমর্থ হওয়ার পূর্বেই যদি মৃত্যু বরণ করে, তবে রোযার আবশ্যকতারহিত হয়ে যাবে। কেননা সে তো এমন কোন সময় পায়নি যাতে সে রোযাগুলো কাযাআদায় করতে পারে। যেমন একজন লোক রামাযান আসার পূর্বেই শাবানে মৃত্যু বরণকরল। অতএব রামাযানের রোযা রাখা তার জন্য আবশ্যক নয়। কিন্তু অসুস্থতা যদিএমন হয় যা সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই, তবে তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনেরবিনিময়ে একজন করে মিসকীনকে খাদ্য দান করবে।
প্রশ্নঃ (৪৩৯) রামাযানের রোযা বাকী থাকাবস্থায় পরবর্তী রামাযান এসে গেলে কি করবে?
উত্তরঃএকথা সবার জানা যে, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন,
]فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ[
কাজেইতোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোকঅসুস্থ অথবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করেনিবে।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) অতএব এ লোকটি যখন শরীয়ত সম্মত দলীলের ভিত্তিতেরোযা ভঙ্গ করেছে, তখন আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নার্থে তা কাযা আদায় করাউচিত। পরবর্তী রামাযান আসার পূবেই উহা কাযা
(ফতোয়া আরকানুল ইসলাম থেকে)
মূল:আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উছাইমীন (রাহ:)
অনুবাদক:শাইখ মুহা: আব্দুল্লাহ আল কাফী
No comments:
Post a Comment