20 Temmuz 2014 Pazar

ই‘তিকাফ তাৎপর্য, উদ্দেশ্য ও বিধান

ই‘তিকাফের সংজ্ঞা

বিশেষ নিয়তে বিশেষ অবস্থায় আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে ই‘তিকাফ বলে।
ই‘তিকাফের ফজিলত
ই‘তিকাফ একটি মহান ইবাদত, মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছরই ই‘তিকাফ পালন করেছেন। দাওয়াত, তরবিয়ত, শিক্ষা ও জিহাদে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও রমজানে তিনি ই‘তিকাফ ছাড়েননি। ই‘তিকাফ ঈমানি তরবিয়তের একটি পাঠশালা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিদায়েতি আলোর একটি প্রতীক। ই‘তিকাফরত অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য দুনিয়ার অন্যান্য সকল বিষয় থেকে আলাদা করে নেয়। ঐকান্তিকভাবে মশগুল হয়ে পড়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিরন্তর সাধনায়। ই‘তিকাফ ঈমান বৃদ্ধির একটি মূখ্য সুযোগ। সকলের উচিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ইমানি চেতনাকে প্রাণিত করে তোলা ও উন্নততর পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা।
আল-কুরআনুল কারিমে বিভিন্নভাবে ই‘তিকাফ সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে, ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও ইসমাইল আলাইহিস সালাম এর কথা উল্লেখ করে এরশাদ হয়েছে:
﴿ وَعَهِدۡنَآ إِلَىٰٓ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡعَٰكِفِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ ١٢٥ ﴾ [البقرة: ١٢٥] ‘এবং আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো'। {সূরা বাকারা: ১২৫}
ই‘তিকাফ অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে কি আচরণ হবে তা বলতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ وَلَا تُبَٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمۡ عَٰكِفُونَ فِي ٱلۡمَسَٰجِدِۗ ﴾ [البقرة: ١٨٧] ‘আর তোমরা মসজিদে ই‘তিকাফকালে স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না'। {সূরা বাকারা: ১৮৭}
ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর পিতা এবং জাতিকে লক্ষ্য করে মূর্তির ভর্ৎসনা করতে গিয়ে যা বলেছিলেন, আল্লাহ তাআলা তা উল্লেখ করে বলেন:
﴿ إِذۡ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوۡمِهِۦ مَا هَٰذِهِ ٱلتَّمَاثِيلُ ٱلَّتِيٓ أَنتُمۡ لَهَا عَٰكِفُونَ ٥٢ ﴾ [الانبياء: ٥٢]
‘যখন তিনি তাঁর পিতা ও তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, ‘এই মূর্তিগুলো কি, যাদের পূজারি (ইতেকাফকারী হয়ে) তোমরা বসে আছ?' {সূরা আম্বিয়া: ৫২}

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদীস ই‘তিকাফ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্য হতে ফজিলত সম্পর্কিত কিছু হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হল।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا - زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانَ يَعْتَكِفُ العَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ، ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ"
‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিণী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষের দশকে ই‘তিকাফ করেছেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত। এরপর তাঁর স্ত্রীগণ ই‘তিকাফ করেছেন'। [বুখারী: ২০২৪; মুসলিম: ১১৭২] عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانٍ.
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রমজানে ই‘তিকাফ করতেন। [বুখারী: ২০৪১] অন্য এক হাদীসে এসেছে—
إِنِّي اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الْأَوَّلَ، أَلْتَمِسُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ، ثُمَّ اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الْأَوْسَطَ، ثُمَّ أُتِيتُ، فَقِيلَ لِي: إِنَّهَا فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ، فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَعْتَكِفَ فَلْيَعْتَكِفْ «فَاعْتَكَفَ النَّاسُ مَعَهُ، قَالَ: «وَإِنِّي أُرِيتُهَا لَيْلَةَ وِتْرٍ، وَإِنِّي أَسْجُدُ صَبِيحَتَهَا فِي طِينٍ وَمَاءٍ" فَأَصْبَحَ مِنْ لَيْلَةِ إِحْدَى وَعِشْرِينَ، وَقَدْ قَامَ إِلَى الصُّبْحِ، فَمَطَرَتِ السَّمَاءُ، فَوَكَفَ الْمَسْجِدُ، فَأَبْصَرْتُ الطِّينَ وَالْمَاءَ، فَخَرَجَ حِينَ فَرَغَ مِنْ صَلَاةِ الصُّبْحِ، وَجَبِينُهُ وَرَوْثَةُ أَنْفِهِ فِيهِمَا الطِّينُ وَالْمَاءُ، وَإِذَا هِيَ لَيْلَةُ إِحْدَى وَعِشْرِينَ مِنَ الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ
আমি (প্রথমে) এ রাতের সন্ধানে প্রথম দশে ই‘তিকাফ পালন করি। অতপর ই‘তিকাফ পালন করি মাঝের দশে। পরবর্তীতে ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হয় যে, এ রাত শেষ দশে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে (এ দশে) ই‘তিকাফ পালনে আগ্রহী, সে যেন তা পালন করে। লোকেরা তার সাথে ই‘তিকাফ পালন করল। রাসূল বলেন, আমাকে তা এক বেজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে, আমি সে ভোরে কাদা ও মাটিতে সেজদা দিচ্ছি। অতপর রাসূল একুশের রাতের ভোর যাপন করলেন, ফজর পর্যন্ত তিনি কিয়ামুল্লাইল করেছিলেন। তিনি ফজর আদায়ের জন্য দণ্ডায়মান হয়েছিলেন। তখন আকাশ ছেপে বৃষ্টি নেমে এল, এবং মসজিদে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ল। আমি কাদা ও পানি দেখতে পেলাম। ফজর সালাত শেষে যখন তিনি বের হলেন, তখন তার কপাল ও নাকের পাশে ছিল পানি ও কাদা। সেটি ছিল একুশের রাত। [মুসলিম: ১১৬৭] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহ আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانٍ عَشَرَةَ أَيَّامٍ، فَلَمَّا كَانَ العَامُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ يَوْمًا"
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমজানে দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর তিনি বিশ দিন ই‘তিকাফে কাটান'। [বুখারী: ২০৪৪] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহ আনহা হতে বর্ণিত হাদীসে উভয়টির উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি বলেন:
«يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانٍ عَشَرَةَ أَيَّامٍ، فَلَمَّا كَانَ العَامُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ يَوْمًا»
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমজানের শেষ দশদিন ই‘তিকাফ করতেন। তবে যে বছর পরলোকগত হন তিনি বিশ দিন ই‘তিকাফ করেছেন'। [বুখারী: ৩০৯] আয়শা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اعْتَكَفَ مَعَهُ بَعْضُ نِسَائِهِ وَهِيَ مُسْتَحَاضَةٌ تَرَى الدَّمَ" ، فَرُبَّمَا وَضَعَتِ الطَّسْتَ تَحْتَهَا مِنَ الدَّمِ
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাঁর জনৈকা স্ত্রীও ই‘তিকাফ করলেন। তখন তিনি ছিলেন ইস্তেহাজা অবস্থায়, রক্ত দেখছেন। রক্তের কারণে হয়তো তাঁর নীচে গামলা রাখা হচ্ছে। [বুখারী: ৩০৯] রাসূল বলেন—
إِنِّي اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الْأَوَّلَ، أَلْتَمِسُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ، ثُمَّ اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الْأَوْسَطَ، ثُمَّ أُتِيتُ، فَقِيلَ لِي: إِنَّهَا فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ، فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَعْتَكِفَ فَلْيَعْتَكِفْ «فَاعْتَكَفَ النَّاسُ مَعَهُ،
আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম দশ দিন ই‘তিকাফ করলাম। এরপর ই‘তিকাফ করলাম মধ্যবর্তী দশদিন। অতপর ওহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হল যে তা শেষ দশদিনে। সুতরাং তোমাদের যে ই‘তিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ই‘তিকাফ করে। ফলে, মানুষ তার সাথে ই‘তিকাফ যাপন করল'। [মুসলিম: ১১৬৭]
ই‘তিকাফের উপকারিতা
১- ইতেকাফকারী এক নামাজের পর আর এক নামাজের জন্য অপেক্ষা করে থাকে, আর এ অপেক্ষার অনেক ফজিলত রয়েছে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
المَلاَئِكَةُ تُصَلِّي عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِي مُصَلَّاهُ، مَا لَمْ يُحْدِثْ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ، لاَ يَزَالُ أَحَدُكُمْ فِي صَلاَةٍ مَا دَامَتِ الصَّلاَةُ تَحْبِسُهُ لاَ يَمْنَعُهُ أَنْ يَنْقَلِبَ إِلَى أَهْلِهِ إِلَّا الصَّلاَةُ
‘নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমাদের একজনের জন্য দুআ করতে থাকেন যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করে। তারা বলতে থাকে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে, ও সালাত তাকে আটকিয়ে রাখবে, তার পরিবারের নিকট যেতে সালাত ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না, ফেরেশতারা তার জন্য এভাবে দুআ করতে থাকবে'। [বুখারী: ৬৫৯] ২-ইতেকাফকারী কদরের রাতের তালাশে থাকে, যে রাত অনির্দিষ্টভাবে রমজানের যে কোন রাত হতে পারে। এই রহস্যের কারণে আল্লাহ তাআলা সেটিকে বান্দাদের থেকে গোপন রেখেছেন, যেন তারা মাস জুড়ে তাকে তালাশ করতে থাকে।
৩- ই‘তিকাফের ফলে আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পর্ক দৃঢ় হয়, এবং আল্লাহ তাআলার জন্য মস্তক অবনত করার প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ ﴾ [الذاريات: ٥٦] ‘আমি মানুষ এবং জিন জাতিকে একমাত্র আমারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। {সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬}
আর এ ইবাদতের বিবিধ প্রতিফলন ঘটে ই‘তিকাফ অবস্থায়। কেননা ই‘তিকাফ অবস্থায় একজন মানুষ নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদতের সীমানায় বেঁধে নেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির কামনায় ব্যকুল হয়ে পড়ে। আল্লাহ তাআলাও তাঁর বান্দাদেরকে নিরাশ করেন না, বরং তিনি বান্দাদেরকে নিরাশ হতে নিষেধ করে দিয়ে বলেছেন:
﴿ ۞قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣ ﴾ [الزمر: ٥٣]
অর্থাৎ: বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ও না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। {সুরা যুমার: ৫৩}
﴿ وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِي وَلۡيُؤۡمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمۡ يَرۡشُدُونَ ١٨٦ ﴾ [البقرة: ١٨٦]
‘আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে- বস্তুত আমি রয়েছি সন্নিকটে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করি যখন সে প্রার্থনা করে। কাজেই তারা যেন আমার হুকুম মান্য করে এবং আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। সম্ভবত তারা পথ প্রাপ্ত হবে'। {আল-বাকারা: ১৮৬}
৪- যখন কেউ মসজিদে অবস্থান করা পছন্দ করতে লাগে— যা সম্ভব প্রবৃত্তিকে অভ্যস্ত করানোর মাধ্যমে, কেননা প্রবৃত্তিকে যে বিষয়ে অভ্যস্ত করানো হবে সে বিষয়েই সে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে— মসজিদে অবস্থান করা পছন্দ হতে শুরু করলে মসজিদকে সে ভালোবাসবে, সেখানে সালাত আদায়কে ভালোবাসবে। আর এ প্রক্রিয়ায় আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক মজবুত হবে। হৃদয়ে সৃষ্টি হবে নামাজের ভালোবাসা এবং সালাত আদায়ের মাধ্যমেই অনুভব করতে শুরু করবে হৃদয়ের প্রশান্তি। যে প্রশান্তির কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে বলেছিলেন:
«أَرِحْنَا بِهَا يَا بِلَالُ"
‘নামাজের মাধ্যমে আমাদের শান্তি দাও হে বেলাল'। [তাবরানী: ৬২১৫] ৫- মসজিদে ই‘তিকাফের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে নিজেকে আবদ্ধ করে নেওয়ার কারণে মুসলমানের অন্তরের কঠোরতা দূরীভূত হয়, কেননা কঠোরতা সৃষ্টি হয় দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও পার্থিবতায় নিজেকে আরোপিত করে রাখার কারণে। মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখার কারণে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসায় ছেদ পড়ে এবং আত্মিক উন্নতির অভিজ্ঞতা অনুভূত হয়। মসজিদে ই‘তিকাফ করার কারণে ফেরেশতারা দুআ করতে থাকে, ফলে ইতেকাফকারী ব্যক্তির আত্মা নিম্নাবস্থার নাগপাশ কাটিয়ে ফেরেশতাদের স্তরের দিকে ধাবিত হয়। ফেরেশতাদের পর্যায় থেকেও বরং ঊর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস পায়। কেননা ফেরেশতাদের প্রবৃত্তি নেই বিধায় প্রবৃত্তির ফাঁদে তারা পড়ে না। আর মানুষের প্রবৃত্তি থাকা সত্ত্বেও সব কিছু থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর জন্য একাগ্রচিত্ত হয়ে যায়।
৬- ই‘তিকাফের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে।
৭- বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৮- ঐকান্তিকভাবে তওবা করার সুযোগ লাভ হয়।
৯- তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া যায়।
১০-সময়কে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো যায়।
ই‘তিকাফের আহকাম
ইসলামি শরিয়াতে ই‘তিকাফের অবস্থান
ই‘তিকাফ করা সুন্নাত। ই‘তিকাফের সবচেয়ে উপযোগী সময় রমজানের শেষ দশক, ই‘তিকাফ কুরআন, হাদীস ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত।
ইমাম আহমদ রহ. বলেন: কোন মুসলমান ই‘তিকাফকে সুন্নাত বলে স্বীকার করেনি এমনটি আমার জানা নেই।
ই‘তিকাফের উদ্দেশ্য
১- আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা
আল্লাহর দিকে আকৃষ্ট হওয়া ও আল্লাহ কেন্দ্রিক ব্যতিব্যস্ততা যখন অন্তর সংশোধিত ও ঈমানি দৃঢ়তা অর্জনের পথ, কেয়ামতের দিন তার মুক্তিও বরং এ পথেই, তাহলে ই‘তিকাফ হল এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে বান্দা সমস্ত সৃষ্টি-জীব থেকে আলাদা হয়ে যথাসম্ভব প্রভুর সান্নিধ্যে চলে আসে। বান্দার কাজ হল তাঁকে স্মরণ করা, তাঁকে ভালোবাসা ও তাঁর ইবাদত করা। সর্বদা তার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা, এরই মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক দৃঢ় ও মজবুত হয়।
২- পাশবিক প্রবণতা এবং অহেতুক কাজ থেকে দূরে থাকা
রোজার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অতিরিক্ত পানাহার ও যৌনাচারসহ পশু প্রবৃত্তির বিবিধ প্রয়োগ থেকে, তেমনি তিনি ই‘তিকাফের বিধানের মাধ্যমে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অহেতুক কথা-বার্তা, মন্দ সংস্পর্শ ও অধিক ঘুম হতে।
ই‘তিকাফের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ অর্থে আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয়ে যায়। সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির ও দুআ ইত্যাদির নির্বাধ চর্চার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের অফুরান সুযোগের আবহে সে নিজেকে পেয়ে যায়।
৩- শবে কদর তালাশ করা
ই‘তিকাফের মাধ্যমে শবে কদর খোঁজ করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মূল উদ্দেশ্য ছিল, আবু সায়ীদ খুদরি রাদিয়াল্লাহ আনহা থেকে বর্ণিত হাদীস সে কথারই প্রমাণ বহন করে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
إِنِّي اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الْأَوَّلَ، أَلْتَمِسُ هَذِهِ اللَّيْلَةَ، ثُمَّ اعْتَكَفْتُ الْعَشْرَ الْأَوْسَطَ، ثُمَّ أُتِيتُ، فَقِيلَ لِي: إِنَّهَا فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ، فَمَنْ أَحَبَّ مِنْكُمْ أَنْ يَعْتَكِفَ فَلْيَعْتَكِفْ
আমি প্রথম দশকে ই‘তিকাফ করেছি এই (কদর) রজনী খোঁজ করার উদ্দেশে, অতপর ই‘তিকাফ করেছি মাঝের দশকে, অতপর মাঝ-দশক পেরিয়ে এলাম, তারপর আমাকে বলা হল, (কদর) তো শেষ দশকে। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ই‘তিকাফ করতে চায় সে যেন ই‘তিকাফ করে, অতপর লোকেরা তাঁর সাথে ই‘তিকাফ করল'। [মুসলিম: ১১৬৭] ৪-মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে তোলা
ই‘তিকাফের মাধ্যমে বান্দার অন্তর মসজিদের সাথে জুড়ে যায়, মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠে। হাদীস অনুযায়ী যে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের ছায়ার নীচে ছায়া দান করবেন তাদের মধ্যে একজন হলেন ওই ব্যক্তি মসজিদের সাথে যার হৃদয় ছিল বাঁধা:
وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِي المَسَاجِدِ
‘ওই ব্যক্তি মসজিদের সাথে যার হৃদয় ছিল বাঁধা'। [বুখারী: ৬৬০] ৫- দুনিয়া ত্যাগ ও বিলাসিতা থেকে দূরে থাকা
ইতেকাফকারী যেসব বিষয়ের স্পৃক্ততায় জীবন যাপন করত সেসব থেকে সরে এসে নিজেকে মসজিদে আবদ্ধ করে ফেলে। ই‘তিকাফ অবস্থায় দুনিয়া ও দুনিয়ার স্বাদ থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, ঠিক ঐ আরোহীর ন্যায় যে কোন গাছের ছায়ার নীচে বসল, অতঃপর সেখান থেকে উঠে চলে গেল।
৬- ইচ্ছাশক্তি প্রবল করা এবং প্রবৃত্তিকে খারাপ অভ্যাস ও কামনা-বাসনা থেকে বিরত রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা
কেননা ই‘তিকাফ দ্বারা খারাপ অভ্যাস থেকে বিরত থাকার ট্রেন্ড গড়ে উঠে। ই‘তিকাফ তার জন্য সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় নিজেকে ধৈর্যের গুণে গুণান্বিত করতে ও নিজের ইচ্ছাশক্তিকে শাণিত করতে। ই‘তিকাফ থেকে একজন মানুষ সম্পূর্ণ নতুন মানুষ হয়ে বের হয়ে আসার সুযোগ পায়। যা পরকালে উপকারে আসবেনা তা থেকে বিরত থাকার ফুরসত মেলে।
ই‘তিকাফের বিধানাবলি
১- ই‘তিকাফের সময়সীমা
সবচেয়ে কম সময়ের ই‘তিকাফ হল, শুদ্ধ মত অনুযায়ী, একদিন একরাত। কেননা সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম সালাত অথবা উপদেশ শ্রবণ করার অপেক্ষায় বা জ্ঞান অর্জন ইত্যাদির জন্য মসজিদে বসতেন, তবে তারা এ সবের জন্য ই‘তিকাফের নিয়ত করেছেন বলে শোনা যায়নি।
সর্বোচ্চ কতদিনের জন্য ই‘তিকাফ করা যায় এ ব্যাপারে উলামার মতামত হল, এ ব্যাপারে নির্ধারিত কোন সীমারেখা নেই।
২- ই‘তিকাফে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সময়
ইতেকাফকারী যদি রমজানের শেষ দশকে ই‘তিকাফের নিয়ত করে তা হলে একুশতম রাত্রির সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করবে, কেননা তার উদ্দেশ্য কদরের রাত তালাশ করা, যা আশা করা হয়ে থাকে বেজোড় রাত্রগুলোতে, যার মধ্যে একুশের রাতও রয়েছে।
তবে ই‘তিকাফ থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে উত্তম হল চাঁদ রাত্রি মসজিদে অবস্থান করে পরদিন সকালে সরাসরি ইদগাহে চলে যাওয়া। তবে চাঁদ রাতে সূর্যাস্তের পর মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলেও কোন সমস্যা নেই, বৈধ রয়েছে।
৩- ই‘তিকাফের শর্তাবলি
ই‘তিকাফের অনেকগুলো শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো নিম্নরূপ:
ই‘তিকাফের জন্য কেউ কেউ রোজার শর্ত করেছেন, কিন্তু বিশুদ্ধ মত হল রোজা শর্ত নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছে যে তিনি কোন এক বছর শাওয়ালের প্রথম দশকে ই‘তিকাফ করেছিলেন, আর এ দশকে ঈদের দিনও আছে। আর ঈদের দিনে তো রোজা রাখা নিষিদ্ধ।
* ই‘তিকাফের জন্য মুসলমান হওয়া শর্ত। কেননা কাফেরের ইবাদত গ্রহণযোগ্য হয় না।
* ইতেকাফকারীকে বোধশক্তিসম্পন্ন হতে হবে, কেননা নির্বোধ ব্যক্তির কাজের কোনো উদ্দেশ্য থাকে না। আর উদ্দেশ্য ছাড়া কাজ শুদ্ধ হতে পারে না।
* ভালো-মন্দ পার্থক্য করার জ্ঞান থাকতে হবে, কেননা কম বয়সী, যে ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে পারে না, তার নিয়তও শুদ্ধ হয় না।
* ই‘তিকাফের নিয়ত করতে হবে, কেননা মসজিদে অবস্থান হয়তো ই‘তিকাফের নিয়তে হবে অথবা অন্য কোনো নিয়তে। আর এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য করার জন্য নিয়তের প্রয়োজন। উপরন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেন:
«إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى «
‘প্রত্যেক কাজের নির্ভরতা নিয়তের উপর, যে যা নিয়ত করবে সে কেবল তাই পাবে'। [বুখারী: ১] * ই‘তিকাফ অবস্থায় মহিলাদের হায়েজ-নিফাস থেকে পবিত্র থাকা জরুরি, কেননা এ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করা হারাম, অবশ্য ইস্তেহাজা অবস্থায় ই‘তিকাফ করা বৈধ। আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহা আনহা বলেন:
«اعْتَكَفَتْ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ امْرَأَةٌ مِنْ أَزْوَاجِهِ مُسْتَحَاضَةٌ، فَكَانَتْ تَرَى الحُمْرَةَ، وَالصُّفْرَةَ، فَرُبَّمَا وَضَعْنَا الطَّسْتَ تَحْتَهَا وَهِيَ تُصَلِّي»
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাঁর স্ত্রীগণের মধ্য হতে কেউ একজন ই‘তিকাফ করেছিলেন ইস্তেহাজা অবস্থায়। তিনি লাল ও হলুদ রঙ্গের স্রাব দেখতে পাচ্ছিলেন, আমরা কখনো তার নীচে পাত্র রেখে দিয়েছি নামাজের সময়'। [বুখারী: ২০৩৭] ইস্তেহাজাগ্রস্তদের সাথে অন্যান্য ব্যধিগ্রস্তদেরকে মেলানো যায়, যেমন যার বহুমূত্র রোগ বিশিষ্ট ব্যক্তি আছে, তবে শর্ত হল মসজিদ যেন অপবিত্র না হয়।
* গোসল ফরজ হয় এমন ধরনের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হতে হবে। অপবিত্র লোক মসজিদে অবস্থান করা হারাম। যদিও কোন কোন আলেম ওজু করার শর্তে মসজিদে অবস্থান বৈধ বলেছেন। আর যদি অপবিত্রতা, যৌন স্পর্শ অথবা স্বামী-স্ত্রীর মিলনের ফলে হয়, তবে সকলের মতে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি স্বপ্নদোষের কারণে হয়, তা হলে কারোর মতে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হবে না। আর যদি হস্তমৈথুনের কারণে হয় তা হলে সঠিক মত অনুসারে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
* ই‘তিকাফ মসজিদে হতে হবে:
এ ব্যাপারে সকল আলেম একমত যে ই‘তিকাফ মসজিদে হতে হবে, তবে জামে মসজিদ হলে উত্তম কেননা এমতাবস্থায় জুমার নামাজের জন্য ইতেকাফকারীকে মসজিদ থেকে বের হতে হবে না।
মসজিদ থেকে বের হওয়ার বিধান
* ইতেকাফকারী যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
* আর ই‘তিকাফের স্থান থেকে যদি মানবীয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য বের হয় তাহলে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হবে না।
* মসজিদে থেকে পবিত্রতা অর্জন সম্ভব না হলে মসজিদ থেকে বের হওয়ার অনুমতি আছে।
* বাহক না থাকার কারণে ইতেকাফকারীকে যদি পানাহারের প্রয়োজনে বাইরে যেতে হয় অথবা মসজিদে খাবার গ্রহণ করতে লজ্জা বোধ হয়, তবে এরূপ প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে।
* যে মসজিদে ই‘তিকাফে বসেছে সেখানে জুমার নামাজের ব্যবস্থা না থাকলে জুমার সালাত আদায়ের প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া ওয়াজিব। আর এ জন্য আগে ভাগেই রওয়ানা হওয়া মুস্তাহাব।
* ওজরের কারণে ইতেকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারে। ছাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহ আনহা থেকে বর্ণিত হাদীস এর প্রমাণ:
أَنَّهَا جَاءَتْ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَزُورُهُ فِي اعْتِكَافِهِ فِي المَسْجِدِ فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ، فَتَحَدَّثَتْ عِنْدَهُ سَاعَةً، ثُمَّ قَامَتْ تَنْقَلِبُ، فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَهَا يَقْلِبُهَا.
‘ছাফিয়্যা রাদিয়াল্লাহ আনহা আনহা রমজানের শেষ দশকে ই‘তিকাফস্থলে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করতে এলেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কতক্ষণ কথা বললেন, অতঃপর যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাকে বিদায় দিতে উঠে দাঁড়ালেন'। [বুখারী: ২০৩৫] * কোন নেকির কাজ করার জন্য ইতেকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযায় উপস্থিত হওয়া ইত্যাদি। এ মর্মে আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহা আনহা বলেন:
السُّنَّةُ عَلَى الْمُعْتَكِفِ: أَنْ لَا يَعُودَ مَرِيضًا، وَلَا يَشْهَدَ جَنَازَةً، وَلَا يَمَسَّ امْرَأَةً، وَلَا يُبَاشِرَهَا، وَلَا يَخْرُجَ لِحَاجَةٍ، إِلَّا لِمَا لَا بُدَّ مِنْهُ،
‘ইতেকাফকারীর জন্য সুন্নত হল, সে রোগী দেখতে যাবে না, জানাযায় উপস্থিত হবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না ও তার সাথে কামাচার থেকে বিরত থাকবে এবং অতি প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হবে না'। [আবূ দাউদ: ২৪৭৩] * ই‘তিকাফ-বিরুদ্ধ কোন কাজের জন্য ইতেকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়, যেমন ক্রয়-বিক্রয়, স্বামী-স্ত্রীর মিলন ইত্যাদি।
ইতেকাফকারীর জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ
* ইবাদত আদায়, যেমন সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির ও দুআ ইত্যাদি। কেননা ই‘তিকাফের উদ্দেশ্য হল আল্লাহ তা‘আলার সমীপে অন্তরের একাগ্রতা নিবেদন করা এবং তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া যা উপরোক্ত ইবাদত আদায় ছাড়া সম্ভব নয়।
অনুরূপভাবে যেসব ইবাদতের প্রভাব অন্যদের পর্যন্ত পৌঁছায় যেমন সালামের উত্তর দেওয়া, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে বারণ, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, পথ দেখানো, ইলম শিক্ষা দেওয়া কুরআন পড়ানো ইত্যাদিও করতে পারবে। কিন্তু শর্ত হল এগুলো যেন এত বেশি না হয় যে ই‘তিকাফের মূল উদ্দেশ্যই ছুটে যায়।
* ইতেকাফকারীর জন্য মুস্তাহাব হল তার ই‘তিকাফের স্থানে কোন কিছু দ্বারা পর্দা করে নেয়া। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তুর্কি গম্বুজের ভিতরে ই‘তিকাফ করেছেন যার দরজায় ছিল চাটাই।
اعْتَكَفَ فِي قُبَّةٍ تُرْكِيَّةٍ، عَلَى سُدَّتِهَا قِطْعَةُ حَصِيرٍ.
* ইতেকাফকারী তার প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র সঙ্গে নেবে যাতে নিজের প্রয়োজনে তাকে বারবার মসজিদের বাইরে যেতে না হয়; আবু সাইদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন:
اعْتَكَفْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، العَشْرَ الأَوْسَطَ، فَلَمَّا كَانَ صَبِيحَةَ عِشْرِينَ نَقَلْنَا مَتَاعَنَا، فَأَتَانَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ كَانَ اعْتَكَفَ، فَلْيَرْجِعْ إِلَى مُعْتَكَفِهِ «
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে রমজানের মাঝের দশকে ই‘তিকাফ করলাম, যখন বিশ তারিখ সকাল হল আমরা আমাদের বিছানা-পত্র সরিয়ে নিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বললেন: যে ই‘তিকাফ করেছে সে তার ই‘তিকাফের স্থানে ফিরে যাবে'। [বুখারী: ২০৪০] ইতেকাফকারীর জন্য যা অনুমোদিত
* ইতেকাফকারীর জন্য মসজিদে পানাহার ও ঘুমানোর অনুমতি আছে। এ ব্যাপারে সকল ইমামের ঐক্যমত রয়েছে। তবে এ সতর্ক হওয়া উচিত; কেননা আল্লাহর প্রতি একাগ্রচিত্ত এবং একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশের জন্য কম খাওয়া কম ঘুমানো সহায়ক বলে বিবেচিত।
* গোসল করা, চুল আঁচড়ানো, তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার, ভাল পোশাক পরা, এসবের অনুমতি আছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহার হাদীসে এসেছে:
«أَنَّهَا كَانَتْ تُرَجِّلُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهِيَ حَائِضٌ وَهُوَ مُعْتَكِفٌ فِي المَسْجِدِ وَهِيَ فِي حُجْرَتِهَا يُنَاوِلُهَا رَأْسَهُ"
‘তিনি মাসিক অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাথার কেশ বিন্যাস করে দিতেন, যখন রসুল মসজিদে ই‘তিকাফরত অবস্থায় থাকতেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহা তার কক্ষে থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাথার নাগাল পেতেন। [বুখারী: ২০৪৬] * ইতেকাফকারীর পরিবার তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে, কথা বলতে পারবে, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ ই‘তিকাফকালীন তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। কিন্তু সাক্ষাৎ দীর্ঘ না হওয়া বাঞ্ছনীয়।
ইতেকাফকারী যা থেকে বিরত থাকবে
* ওজর ছাড়া ইতেকাফকারী এমন কোন কাজ করবে না যা ই‘তিকাফকে ভঙ্গ করে দেয়, আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ وَلَا تُبۡطِلُوٓاْ أَعۡمَٰلَكُمۡ ٣٣ ﴾ [محمد: ٣٣]
‘তোমরা তোমাদের কাজসমূহকে নষ্ট করো না'। {সূরা মুহাম্মদ: ৩৩}
* ঐ সকল কাজ যা ই‘তিকাফের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে, যেমন বেশি কথা বলা, বেশি মেলামেশা করা, অধিক ঘুমানো, ইবাদতের সময়কে কাজে না লাগানো ইত্যাদি।
* ইতেকাফকারী মসজিদে অবস্থানকালে ক্রয়-বিক্রয় করবে না, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।
«نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْبَيْعِ وَالِاشْتِرَاءِ فِي الْمَسْجِدِ"
এমনিভাবে যা ক্রয় বিক্রয়ের কাজ বলে বিবেচিত যেমন বিভিন্ন ধরনের চুক্তিপত্র, ভাড়া, মুদারাবা, মুশারাকা, বন্দক রাখা ইত্যাদি। কিন্তু যদি মসজিদের বাহিরে এমন ক্রয়-বিক্রয় হয় যা ছাড়া ইতেকাফকারীর সংসার চলে না তবে তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে। [মুসনাদে আহমদ: ৬৯৯১] মসজিদে পারতপক্ষে বায়ু ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসে এসেছে, যখন বেদুইন লোকটি মসজিদে প্রস্রাব করেছিল তখন রাসূল বলেছিলেন:
«إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لَا تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ، وَلَا الْقَذَرِ إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَالصَّلَاةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ"
‘মসজিদ প্রস্রাব, ময়লা-আবর্জনার উপযোগী নয়, বরং মসজিদ অবশ্যই আল্লাহর জিকির এবং সালাত ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্য'। [মুসলিম: ২৮৫] * ই‘তিকাফ অবস্থায় যৌন স্পর্শ নিষেধ, এ ব্যাপারে সকল আলেমের ঐকমত্য রয়েছে। তবে অধিকাংশ আলেমের মতে বীর্যস্খলনের দ্বারাই কেবল ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়।

Hiç yorum yok:

Yorum Gönder

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...