1 Ağustos 2014 Cuma

পবিত্রতা সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর

প্রশ্নঃ (১২৭) দন্ডায়মান অবস্থায় প্রস্রাব করার বিধান কি?
উত্তরঃ নিম্ন লিখিত দু’টি শর্তের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা যায়ঃ
১)     প্রস্রাবের ছিটা থেকে সে নিরাপদ থাকবে।
২)     কেউ যেন তার লজ্জাস্থানের প্রতি দৃষ্টিপাত না করতে পারে।
প্রশ্নঃ (১২৮) কুরআন মাজীদ সাথে নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করার বিধান কি?
উত্তরঃ বিদ্বানগণ বলেন, কুরআন শরীফ সাথে নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা জায়েয নয়। কেননা একথা সর্বজন বিদিত যে, পবিত্র কুরআন এমন সম্মান ও মর্যাদাবান বস্তু যা সাথে নিয়ে টয়লেটের মত স্থানে প্রবেশ করা সমিচীন নয়।
প্রশ্নঃ (১২৯) আল্লাহর নাম সম্বলিত কাগজ সাথে নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করার বিধান কি?
উত্তরঃ আল্লাহর নাম সম্বলিত কাগজ যদি বাইরে প্রকাশিত না থাকে বরং তা পকেটের মধ্যে থাকে বা গোপনে অপ্রকাশিত অবস্থায় থাকে, তবে তা সাথে নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা জায়েয। সাধারণত অনেক নাম তো এমন রয়েছে যা আল্লাহ্র নামের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যেমন আবদুল্লাহ বা আবদুল আজীজ প্রভৃতি।
প্রশ্নঃ (১৩০) টয়লেটের মধ্যে ওযু করার দরকার হলে সে সময় কিভাবে ‘বিসমিল্লাহ্’ বলবে?
উত্তরঃ টয়লেটের মধ্যে ওযু করলে মনে মনে বিসমিল্লাহ্ বলবে, মুখে উচ্চারণ করে বলবে না। কেননা ওযু ও গোসলে ‘বিসমিল্লাহ্’ ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি শক্তিশালী নয়। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, ‘ওযুতে বিসমিল্লাহ্ বলার ব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বিশুদ্ধ কোন হাদীছ নেই।’ এজন্যে মুগনী গ্রন্থের লিখক মুওয়াফ্ফাক বিন কুদামা মত প্রকাশ করেছেন যে, ওযুর সময় ‘বিসমিল্লাহ্’ বলা ওয়াজিব নয়।
প্রশ্নঃ (১৩১) প্রস্রাব-পায়খানার সময় কিবলা সামনে বা পিছনে রাখার বিধান কি?
উত্তরঃ এ মাসআলায় বিদ্বানদের থেকে কয়েকটি মত পাওয়া যায়ঃ
একদল বিদ্বান বলেন, বন্ধ ঘর ছাড়া অন্য কোথাও কিবলা সামনে বা পিছনে রেখে প্রস্রাব-পায়খানা করা হারাম। তারা আবু আইয়্যুব আনসারী (রাঃ)এর হাদীছকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا بِبَوْلٍ وَلَا غَائِطٍ وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا قَالَ أَبُو أَيُّوبَ فَقَدِمْنَا الشَّامَ فَوَجَدْنَا مَرَاحِيضَ قَدْ بُنِيَتْ قِبَلَ الْقِبْلَةِ فَنَنْحَرِفُ عَنْهَا وَنَسْتَغْفِرُ اللَّهَ
“তোমরা পেশাব-পায়খানায় গেলে পায়খানার সময় বা প্রস্রাব করার সময় কিবলাকে সামনে রাখবে না এবং পিছনেও রাখবে না। বরং পূর্ব ও পশ্চিম দিক ফিরে বসবে।”[5]  আবু আইয়্যুব বলেন, আমরা শাম দেশে গিয়ে দেখি সেখানকার টয়লেট কা’বার দিকে তৈরী করা আছে। আমরা তা ব্যবহার করার সময় বাঁকা হয়ে বসতাম অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতাম।
এ বিষয়টি ছিল খোলা মাঠে। কিন্তু বন্ধ ঘরের মধ্যে যদি হয়, তবে কিবলা সামনে বা পিছনে রাখাতে কোন দোষ নেই।
ইবনু ওমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে বলা হয়েছে, তিনি বলেনঃ
ارْتَقَيْتُ فَوْقَ بَيْتِ حَفْصَةَ فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْضِي حَاجَتَهُ مُسْتَدْبِرَ الْقِبْلَةِ مُسْتَقْبِلَ الشَّأْمِ
“আমি একদা হাফসার বাড়ীর ছাদে উঠলাম। দেখলাম নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শামের দিকে মুখ করে কা’বার দিকে পিছন ফিরে তাঁর প্রয়োজন পূরণ করছেন।” [6]
বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, ঘেরা স্থানে হোক বা খোলা স্থানে হোক কোন সময়ই কিবলা সম্মুখে বা পশ্চাতে রাখা যাবে না। তাদের দলীল হচ্ছে পূর্বেল্লিখিত আবু আইয়্যুব আনসারীর হাদীছ। আর ইবনু ওমরের হাদীছ সম্পর্কে তাদের জবাব হচ্ছেঃ
প্রথমতঃ ইবনু ওমারের হাদীছটি হচ্ছে নিষেধাজ্ঞার পূর্বের।
দ্বিতীয়তঃ নিষেধাজ্ঞাই প্রাধান্য পাবে। কেননা নিষেধাজ্ঞা আসল থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে। আর আসল হচ্ছে জায়েয। তাই জায়েয থেকে স্থানান্তর হয়ে নাজায়েযের বিধানই গ্রহণযোগ্য।
তৃতীয়তঃ আবু আইয়্যুব বর্ণিত হাদীছ নবী (সাঃ)এর উক্তি। আর ইবনু ওমারের হাদীছ তাঁর কর্ম। রাসূল (সাঃ)এর মৌখিক নির্দেশের হাদীছ কর্মের হাদীছের সাথে সংঘর্ষশীল হতে পারে না। কেননা কর্মে বিশেষত্ব ও ভুলের সম্ভাবনা থাকে বা অন্য কোন ওযরেরও সম্ভাবনা থাকতে পারে।
এ মাসআলায় আমার মতে, প্রাধান্যযোগ্য কথা হচ্ছে,

খোলা ময়দানে ক্বিবলা সামনে বা পিছনে রেখে শৌচকার্য করা হারাম। চার দেয়ালে ঘেরা স্থানে কিবলাকে পিছনে রাখা জায়েয হবে সামনে রাখা জায়েয নয়। কেননা কিবলার সম্মুখবর্তী হওয়ার হাদীছ সংরক্ষিত। এখানে বিশেষত্বের কোন সম্ভাবনা নেই। কিন্তু পশ্চাতে রাখার নিষেধাজ্ঞাকে নবীজীর কর্ম দ্বারা বিশিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সম্মুখে রাখার চাইতে পশ্চাতে রাখার বিষয়টি সহজ, এই কারণে (আল্লাহ ভাল জানেন) ঘেরার মধ্যে থাকলে বিষয়টিকে হালকা করা হয়েছে। তবে সর্বক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে কিবলাকে সম্মুখে বা পশ্চাতে না রাখা।
প্রশ্নঃ (১৩২) বায়ু নির্গত হলে কি ইস্তেন্জা করা আবশ্যক?
উত্তরঃ পশ্চাদদেশ থেকে বায়ু নির্গত হলে ওযু বিনষ্ট হবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
لَا يَنْصَرِفْ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيحًا
“নামায থেকে বের হবে না যে পর্যন্ত বায়ু বের হওয়ার আওয়াজ না শুনবে বা দুর্গন্ধ না পাবে।”[7]  কিন্তু এতে ইস্তেন্জা করা ওয়াজিব নয়। অর্থাৎ- লজ্জাস্থান ধৌত করা আবশ্যক নয়। কেননা এমন কিছু তো বের হয়নি যা ধৌত করার দরকার হবে।
তাই বায়ু নির্গত হলে ওযু নষ্ট হবে। এতে ওযু করে পবিত্র হওয়াই যথেষ্ট। অর্থাৎ-কুলি, নাক ঝাড়াসহ মুখমন্ডল ধৌত করবে, কনুইসহ দু’হাত ধৌত করবে, কানসহ মাথা মাসেহ করবে এবং টাখনু পর্যন্ত দু’পা ধৌত করবে।
এখানে একটি মাসআলার ব্যাপারে আমি মানুষকে সতর্ক করতে চাইঃ কিছু লোক নামাযের সময় হওয়ার পূর্বে পেশাব-পায়খানা করলে ইস্তেন্জা করে। তারপর নামাযের সময় উপস্থিত হলে ওযু করার পূর্বে ধারণা করে যে, পুনরায় তাদেরকে ইস্তেন্জা করতে হবে- পুনরায় লজ্জাস্থান ধৌত করতে হবে। কিন্তু এটা সঠিক নয়। কেননা কোন কিছু বের হওয়ার পর উক্ত স্থান ধৌত করে নিলেই তো তা পবিত্র হয়ে গেল। আর পবিত্র হয়ে গেলে পুনরায় তা ধৌত করার কোন অর্থ নেই। কেননা ইস্তেন্জা ও শর্ত মোতাবেক কুলুখের উদ্দেশ্য হচ্ছে পেশাব-পায়খানা বের হওয়ার স্থানকে পবিত্র করা। একবার পবিত্র হয়ে গেলে নতুন করে কোন কিছু বের না হলে আর তা নাপাক হবে না।
প্রশ্নঃ (১৩৩) কখন মেসওয়াক ব্যবহার করার গুরুত্ব বেশী? খুতবা চলাবস্থায় নামাযের অপেক্ষাকারীর মেসওয়াক করার বিধান কি?
উত্তরঃ নিম্ন লিখিত সময় মেসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণঃ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হলে, গৃহে প্রবেশ করে, ওযুতে কুলি করার সময়, নামাযে দন্ডায়মান হওয়ার সময়।
নামাযের অপেক্ষাকারীর মেসওয়াক করাতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু খুতবা চলাবস্থায় মেসওয়াক করবে না। কেননা এটা তাকে খুতবা শোনা থেকে ব্যস্ত করবে। কিন্তু তন্দ্রা কাটানোর প্রয়োজনে মেসওয়াক ব্যবহার করতে কোন দোষ নেই।
প্রশ্নঃ (১৩৪) ওযুর প্রারম্ভে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা কি ওয়াজিব?
উত্তরঃ ওযুর প্রারম্ভে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা ওয়াজিব নয়; বরং উহা সুন্নাত। কেননা এক্ষেত্রে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ বলার ক্ষেত্রে অনেকের আপত্তি রয়েছে। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন, ‘এক্ষেত্রে কোন হাদীছ প্রমাণিত হয়নি।’ বলার অপেক্ষা রাখে না এবং কারো অজানা নয় যে, ইমাম আহমাদ হাদীছ শাস্ত্রের ইমাম এবং হাফেয। তিনি যদি কোন ক্ষেত্রে বলেন, এ বিষয়ে কোন হাদীছ প্রমাণিত হয়নি, তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশ্ন থেকে যায়। অতএব যে বিষয়টি রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত নয় তা মানুষের উপর আবশ্যক করা উচিত নয়। এ জন্যে আমি মনে করি ওযুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা সুন্নাত। কিন্তু কারো নিকট যদি এ ক্ষেত্রে হাদীছ ছহীহ বলে প্রমাণিত হয়, তবে ‘বিসমিল্লাহ’ ওয়াজিব বলা তার জন্য আবশ্যক। কেননা হাদীছে বলা হয়েছে: لاَ وَضُوْءَ অর্থাৎ- ওযু বিশুদ্ধ হবে না। ওযু পূর্ণ হবে না এরূপ অর্থ করা ঠিক নয়।
প্রশ্নঃ (১৩৫) পুরুষ ও নারীর খাতনা করার বিধান কি?
উত্তরঃ খাতনার বিষয়টি মতভেদপূর্ণ। নিকটবর্তী মত হচ্ছে, পুরুষের খাতনা করা ওয়াজিব আর নারীর জন্য সুন্নাত। এই পার্থক্যের কারণ হচ্ছে, পুরুষের খাতনার মাঝে একটি ইবাদত বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত বিদ্যমান। আর তা হচ্ছে নামাযের পবিত্রতা। যদি খাতনা না করা হয়, তবে পেশাব বের হলে তার কিছু অংশ লিঙ্গের ঢাকনা চামড়ার ভিতরে জমা হয়ে থাকে, যা জ্বলনের কারণ হয় বা সেখানে ইন্ফেকশ (ওহভবপঃরড়হ) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এবং সর্বনিম্ন অসুবিধা হচ্ছে, যখনই সে নড়াচড়া করবে, তখনই পেশাবের বিন্দু বের হবে এবং তার শরীর ও কাপড় নাপাক করে দিবে।
আর নারীর খাতনা করার সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য ও উপকারিতা হচ্ছে, তার যৌন উত্তেজনা হ্রাস করা। আর এটা হচ্ছে তার একটি পূর্ণতা। এখানে খারাপ অতিরিক্ত কোন বিষয়কে বিদূরীত করা হচ্ছে না। যেমন পুরুষের বেলায় হয়ে থাকে।
বিদ্বানগণ খাতনার ক্ষেত্রে শর্ত করেছেন, খাতনা করলে যদি অসুস্থতা বা প্রাণনাশের আশংকা থাকে, তবে সে অবস্থায় খাতনা করা ওয়াজিব নয়। কেননা ওয়াজিব বিষয় সমূহ অপারগতা, ধ্বংসের আশংকা ও ক্ষতির কারণে রহিত হয়ে যায়।
পুরুষের খাতনা ওয়াজিব হওয়ার দলীলঃ
প্রথমতঃ এ মর্মে কয়েকটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যে, ইসলাম গ্রহণ করলে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাতনা করার আদেশ করেছেন।[8]  আর নবীজীর নির্দেশ মানেই তা পালন করা ওয়াজিব।
দ্বিতয়তঃ খাতনা হচ্ছে মুসলিম ও খৃষ্টান বা হিন্দুদের মাঝে পার্থক্যের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট। এমনকি মুসলমানগণ যুদ্ধ ক্ষেত্রে খাতনার মাধ্যমে নিজেদের নিহত ব্যক্তিদের খুঁজতেন। আর যা বৈশিষ্ট হিসেবে গণ্য তা হচ্ছে ওয়াজিব। কেননা মুসলমান ও কাফেরের মাঝে পার্থক্য থাকা ওয়াজিব। এই কারণেই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাফেরদের সাথে সাদৃশাবলম্বন নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেনঃ
 مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ 
“যে ব্যক্তি কোন জাতির সদৃশ অবলম্বন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত হবে।” [9]
তৃতীয়তঃ খাতনা হচ্ছে শরীর থেকে একটি জিনিস কর্তন করা। বিনা কারণে শরীরের কোন অংশ কর্তন করা হারাম। আর ওয়াজিব কারণ ছাড়া হারামকে হালাল করা বৈধ নয়। অতএব খাতনা করা ওয়াজিব।
চতুর্থতঃ খাতনা করলে অভিভাবকের পক্ষ থেকে ইয়াতীমের উপর ও তার সম্পদের উপর হস্তক্ষেপ করা হয়। কেননা এতে খাতনাকারীকে পারিশ্রমিক দেয়া আবশ্যক। বিষয়টি ওয়াজিব না হলে তার শরীরে ও সম্পদে হস্তক্ষেপ করা জায়েয হত না।
হাদীছের বাণী ও উল্লেখিত যুক্তি দ্বারা আমরা প্রমাণ করলাম যে, পুরুষের খাতনা করা  ওয়াজিব।
কিন্তু নারীর খাতনা ওয়াজিব বলার ক্ষেত্রে প্রশ্ন রয়েছে। যেমনটি ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব সঠিক মত হচ্ছে, পুরুষের খাতনা করা ওয়াজিব, নারীর নয়। একটি যঈফ হাদীছ রয়েছে। বলা হয়েছে,
الْخِتَانُ سُنَّةٌ لِلرِّجَالِ مَكْرُمَةٌ لِلنِّسَاءِ
“খাতনা পুরুষের জন্য সুন্নাত ও নারীর জন্য সম্মান।”[10]  হাদীছটি বিশুদ্ধ হলে সকল মতভেদের সমাধান হয়ে যেত।
প্রশ্নঃ (১৩৬) কৃত্রিম দাঁত থাকলে কুলি করার সময় কি উহা খুলে রাখা ওয়াজিব?
উত্তরঃ কারো মুখে যদি দাঁত বাধানো থাকে, তবে ওযুর সময় উহা খুলে রাখা আবশ্যক নয়। উহা হাতের আংটি বা ঘড়ি ব্যবহার করার মত। ওযুর সময় আংটি খোলা আবশ্যক নয়। বরং উত্তম হচ্ছে উহা নাড়িয়ে দেয়া, কিন্তু এই নাড়ানোও ওয়াজিব নয়। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আংটি পরিধান করতেন কিন্তু এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না যে, তিনি ওযুর সময় উহা খুলে রাখতেন। অথচ মুখের মধ্যে বাঁধানো দাঁতের তুলনায় আংটিই পানি পৌঁছানোর ব্যাপারে বাধার কারণ হতে পারে। তাছাড়া কোন কোন মানুষের দাঁত অনেক কষ্টে বাধাই করতে হয়- যা যখন তখন খোলা ও লাগানো সম্ভব হয় না।
প্রশ্নঃ (১৩৭) কান মাসেহ করার জন্য কি নতুন করে পানি নিতে হবে?
উত্তরঃ কান মাসেহ করার জন্য হাতে নতুন পানি নেয়া আবশ্যক নয়। বিশুদ্ধ মতানুযায়ী মুস্তাহাবও নয়। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ওযুর পদ্ধতি বর্ণনাকারী ছাহাবীদের মধ্যে কেউ এমন কথা উল্লেখ করেন নি যে, তিনি কান মাসেহ করার জন্য নতুন করে পানি নিতেন। অতএব মাথা মাসেহ করার পর হাতের অবশিষ্ট ভিজা দিয়েই কান মাসেহ করতে হবে।
প্রশ্নঃ (১৩৮) ওযুতে ধারাবাহিকতার অর্থ কি? ওযুতে মুওয়ালাত বা পরস্পর করার অর্থ কি? এদু’টি কথার বিধান কি?
উত্তরঃ ওযুর মধ্যে ধারাবাহিকতার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্ যে ধারাবাহিকতার সাথে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কথা উল্লেখ করেছেন সেভাবে ওযু করা। আল্লাহ প্রথমে মুখমন্ডল ধোয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, তারপর দু’হাত, তারপর মাথা মাসেহ করা এবং শেষে পা ধৌত করা। কোন মানুষ যদি উল্টাপাল্টা করে যেমন প্রথমে হাত তারপর পা তারপর মুখমন্ডল ধৌত করে তারপর মাথা মাসেহ করে, তবে তার ওযু হবে না। এই কারণে মুখমন্ডল ধৌত করার পূর্বে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা ওয়াজিব নয় সুন্নাত। অতএব আল্লাহ যে সিরিয়ালে ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কথা উল্লেখ করেছেন, তাকেই ধারাবাহিকতা বলে যা বজায় রাখা ওযুর অন্যতম ওয়াজিব। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হজ্জে গিয়ে সাঈ করতে গিয়ে প্রথমে ছাফা পর্বতে আরোহণ করে পাঠ করেন,
إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ
“নিশ্চয় ছাফা ও মারওয়া পর্বতদ্বয় আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্গত।” (সূরা বাক্বারা- ১৫৮) এবং তিনি বলেন, أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللَّهُ بِهِ  ‘আল্লাহ যেভাবে শুরু করেছেন সেভাবে শুরু করছি।” [11] এখানে তিনি বর্ণনা করে দিলেন, কেন তিনি মাওয়াতে যাওয়ার পূর্বে প্রথমে ছাফা পর্বতে আরোহন করলেন। আর তা হচ্ছে, আল্লাহ যার কথা প্রথমে উল্লেখ করেছেন সেখান থেকেই প্রথমে শুরু করা।
আর মুওয়ালাত বা ওযুর কাজ পরস্পর করার অর্থ হচ্ছে, ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়ার ক্ষেত্রে বিরতি গ্রহণের মাধ্যমে পৃথক না করা। এর উদাহরণ হচ্ছে, মুখমন্ডল ধৌত করার পর পরই হাত না ধুয়ে দেরী করা। এ অবস্থায় তার পরস্পরতা নষ্ট হয়ে গেল, তাই তাকে নতুন করে ওযু আরম্ভ করতে হবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখলেন জনৈক ব্যক্তি ওযু করেছে কিন্তু পায়ে তার নখ বরাবর একটি স্থান রয়েছে। তিনি তাকে বললেন, ارْجِعْ فَأَحْسِنْ وُضُوءَكَ “তুমি ফিরে গিয়ে সুন্দরভাবে ওযু করে আস।”[12]  আবু দাঊদের বর্ণনায় বলা হয়েছে, তিনি তাকে পুনরায় নতুন করে ওযু করার নির্দেশ দিলেন। এ থেকে বুঝা যায়, ওযুতে পরম্পরা রক্ষা করা ওয়াজিব। কেননা ওযু একটি ইবাদত। আর একটি ইবাদতের বিভিন্ন অংশের মাঝে বিচ্ছিন্ন করলে পরস্পরের উপর ভিত্তি করা চলে না।
অতএব বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, ধারাবাহিকতা ও পরস্পরতা রক্ষা করা ওযুর দু’টি ফরয।
প্রশ্নঃ (১৩৯) ওযুর সময় কেউ যদি কোন একটি অঙ্গ ধৌত করতে ভুলে যায়, তবে তার বিধান কি?
উত্তরঃ ওযু করার সময় কেউ যদি একটি অঙ্গ ভুলে যায়, তবে যদি অচিরেই তা মনে পড়ে, তাহলে তা ধৌত করবে এবং তার পরবর্তী অঙ্গ ধৌত করবে। যেমন কেউ ওযু করল, কিন্তু বাম হাত ধৌত করতে ভুলে গেল এবং শুধু ডান হাত ধৌত করে মাথা ও কান মাসেহ্ করে ফেলল। দু’পা ধৌত করার পর খেয়াল হল তার বাম হাত ধৌত করা হয়নি। তাকে আমরা বলব, আপনি বাম হাত ধৌত করুন, মাথা ও কান মাসেহ্ করুন এবং দু’পা ধৌত করুন। এই অঙ্গগুলো পুনরায় ধৌত করা এজন্যই ওয়াজিব যে, ওযুতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক। কেননা ওযুর অঙ্গগুলো যেরূপ ধারাবাহিক ভাবে আল্লাহ্ উল্লেখ করেছেন, সেভাবেই ধারবাহিকতা বজায় রেখে তা করতে হবে। আল্লাহ্ বলেন,
فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
“তোমরা মুখমন্ডল ধৌত কর, দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মাসেহ্ কর এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়েদা- ৬)
কিন্তু যদি দীর্ঘ সময় পর স্মরণ হয়, তবে পুনরায় ওযু করবে। যেমন কেউ ওযু করার সময় বাম হাত ধৌত করতে ভুলে গেল এবং এভাবেই ওযু শেষ করে ফেলল। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর স্মরণ হল সে তো বাম হাত ধৌত করেনি। তখন তার উপর আবশ্যক হচ্ছে পুনরায় প্রথম থেকে ওযু করা। কেননা ওযুর অঙ্গ সমূহ ধৌত করার ক্ষেত্রে পরম্পরা রক্ষা করা আবশ্যক। বরং ওযু বিশুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত।
জেনে রাখা উচিত, যদি সে সন্দেহে থাকে অর্থাৎ- ওযু শেষ হওয়ার পর সন্দেহ হল, সে ডান হাত বা বাম হাত ধৌত করেছে কি না? কুলি করেছে কি না? নাক ঝেড়েছে কি না? তখন এ সন্দেহের প্রতি গুরুত্বারোপ করবে না। বরং সামনে অগ্রসর হবে এবং নামায আদায় করবে। কেননা ইবাদত শেষ হওয়ার পর কোন সন্দেহ দেখা দিলে সে দিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না, তার কোন মূল্য নেই। এ ধরণের সন্দেহের প্রতি গুরুত্বারোপ করলে মানুষের সামনে শয়তানের ওয়াস্ওয়াসার দরজা উম্মুক্ত করা হয়। তখন প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ ইবাদতে সন্দেহ করা শুরু করবে। অতএব আল্লাহর রহমতের অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে, ইবাদত সম্পন্ন করার পর কোন সন্দেহ দেখা দিলে মানুষ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না, তার প্রতি গুরুত্বারোপ করবে না। অবশ্য সন্দেহ যদি দৃঢ়তায় পরিণত হয়, তবে তার ব্যবস্থা নেয়া ওয়াজিব।
ওযু অবস্থায় পানি বন্ধ হয়ে গেল। তারপর আবার পানি পাওয়া গেল।
প্রশ্নঃ (১৪০) ওযু চলছে এমন সময় পানি বন্ধ হয়ে গেল। পানি যখন ফিরে এল তখন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শুকিয়ে গেছে। এখন ওযু কি নতুন করে করতে হবে নাকি বাকী অঙ্গ সমূহ ধৌত করলেই চলবে?
উত্তরঃ মাসআলাটির ভিত্তি হচ্ছে, ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়ার ক্ষেত্রে পরম্পরা রক্ষা করা, ওযু বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত কি না? এতে বিদ্বানদের মধ্যে দু’টি মত পাওয়া যায়।
একটি মত হচ্ছেঃ মুওয়ালাত বা ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহ পরস্পর ধৌত করা অর্থাৎ- একটি না শুকাতে অপর অঙ্গ ধৌত করা ওযু বিশুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। একটি অঙ্গ ধৌত করার পর অপর অঙ্গ ধোয়ার পূর্বে যদি বিচ্ছিন্নতা হয়ে যায়, তবে ওযু বিশুদ্ধ হবে না। এটাই সঠিক মত। কেননা ওযু পূর্ণাঙ্গ একটি ইবাদত। এর একটি অংশের সাথে অপর অংশের সম্পর্ক থাকা জরূরী। অঙ্গ সমূহ পরস্পর ধৌত করার অর্থ কি? এর অর্থ হচ্ছে, এক অঙ্গ ধোয়ার পর সাধারণভাবে এতটা সময় বিরতি গ্রহণ না করা যাতে পরের অঙ্গ ধোয়ার পূর্বে তা শুকিয়ে যায়। কিন্তু এই বিরতি গ্রহণ যদি পবিত্রতা অর্জনের সাথে সম্পর্কিত হয় তবে কোন অসুবিধা নেই। যেমন ওযু শুরু করেছে এমন সময় লক্ষ্য করে কোন এক অঙ্গে পেইন্ট বা এ জাতীয় কোন বস্তু লেগে আছে, তখন তা অপসারণ করতে গিয়ে যদি দীর্ঘ সময়ের দরকার পড়ে এবং আগের অঙ্গ শুস্ক হয়ে যায়, তাতে কোন অসুবিধা নেই, ওযু চালিয়ে যাবে, নতুন করে আবার শুরু করতে হবে না। কেননা এই দীর্ঘতা তো পবিত্রতার কাজের সাথেই সম্পর্কিত। তাছাড়া এখানে তো ওযুর কাজে বিরতি গ্রহণ করা হয়নি।
কিন্তু পানির জন্য যদি বিরতি হয়, যেমনটি প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে বিদ্বানদের মধ্যে কেউ বলেন, এ অবস্থায় পরস্পর ধৌত করার শর্ত ক্ষুন্ন হল। অতএব তাকে পুনরায় নতুন করে ওযু শুরু করতে হবে। আবার কেউ বলেন, নতুন করে ওযু শুরু করার দরকার নেই। কেননা এখানে তো তার কোন এখতিয়ার নেই। সে তো ওযু পূর্ণ করারই অপেক্ষা করছে। তাই পানি আসলে ওযুর বাকী কাজ পূর্ণ করবে- যদিও ধৌতকৃত অঙ্গ শুকিয়ে যায়।
যে সমস্ত বিদ্বান পরস্পর ধৌত করা ওয়াজিব বলেন, তাদের কথা হচ্ছেঃ অঙ্গ শুস্ক হওয়া না হওয়ার সাথে পরস্পর ধৌত করার সম্পর্ক নেই। এর সম্পর্ক হচ্ছে সামাজিক পরিচিতির সাথে। সামাজিকভাবে যদি বলা হয় এখানে ওযুর মাঝে বিচ্ছিন্ন হল বা বিরতি নেয়া হল, তবে তাতে পরস্পরতা নষ্ট হবে। যেমন পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর যারা পানির অপেক্ষা করে তারা তো পানি নিয়ে আসার কাজে ব্যস্ত, সাধারণভাবে মানুষ এটাকে ওযুর প্রথম অংশ ও দ্বিতীয় অংশের মাঝে বিচ্ছিন্নতা বলে না। অতএব তারা পানি পাওয়ার পর ওযুর বাকী কাজ পূর্ণ করবে। আর এটাই উত্তম কথা। তবে যদি উক্ত বিরতি খুব বেশী দীর্ঘ হয়ে যায়, তবে নতুন করে শুরু করে নেয়াটাই ভাল। কেননা কাজটা খুবই সহজ।
প্রশ্নঃ (১৪১) নখ পালিশ ব্যবহার করে ওযু করার বিধান কি?
উত্তরঃ নখ পালিশ হচ্ছে এক প্রকার রং যা নারীরা তাদের নখে ব্যবহার করে থাকে। এটি গাঢ় হয়ে থাকে। নারী যদি নামাযী হয় তবে তার জন্য তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। কেননা এটা নখে থাকলে ওযুর পানি নখে পৌঁছবে না। আর কোন বস্তুর কারণে যদি পানি পৌঁছতে বাধার সৃষ্টি হয়, তবে তা ওযু ও গোসলকারীর জন্য ব্যবহার করা জায়েয নয়। কেননা আল্লাহ বলেন, “তোমরা মুখমন্ডল ও হাতদ্বয় ধৌত কর।” (সূরা মায়েদা-৬) অতএব নারীর নখে যদি নখ পালিশ থাকে তবে তা তো পানি পৌঁছতে বাধা দিবে। সুতরাং তা থাকা অবস্থায় ওযু বা গোসল করলে তো তার একটি অঙ্গ শুস্কই রয়ে গেল এবং ওযু বা গোসলের একটি ফরয কাজ পরিত্যাগ করল।
কিন্তু নারী নামাযী না হলে, যেমন ঋতুবতী বা নেফাস বিশিষ্ট হলে, সে এগুলো ব্যবহার করতে পারবে। তবে এ কাজ কাফের নারীদের বৈশিষ্টের অন্তর্গত। তাই উহা ব্যবহার না করাতেই কল্যাণ। কেননা এতে তাদের সাথে সদৃশ্য হয়ে যায়।
আমি শুনেছি, কোন কোন মানুষ নাকি ফতোয়া দিয়েছে যে, এটা হাত মোজা পরিধান করার ন্যায়। সুতরাং গৃহে অবস্থান করলে নারী তা একদিন একরাত, আর সফরে থাকলে তিনদিন তিন রাত ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু এটি ভুল ফতোয়া ও অজ্ঞতা। মানুষের শরীর আচ্ছাদিত করে এমন প্রত্যেক বস্তুকেই মোজার সাথে তুলনা করা উচিত নয়। ইসলামী শরীয়তে যে মোজার উপর মাসেহ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে তা শুধুমাত্র পায়ের মোজার সাথে সংশ্লিষ্ট। আর তা প্রয়োজনের সময়। কেননা ঠান্ডার কারণে বা ময়লা-আবর্জনা থেকে সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য পায়ে মোজা পরিধাণ করার প্রয়োজন পড়ে। এজন্য শরীয়ত মানুষের প্রতি সহজ করে এর উপর মাসেহ করা বৈধ করেছে।
অনেক সময় ওরা নখ পালিশ ব্যবহারকে পাগড়ীর উপর মাসেহ করার সাথে তুলনা করে। এটা আরেক অজ্ঞতা। কেননা পাগড়ীর স্থান হচ্ছে মাথা। আর মাথার ক্ষেত্রে আগে থেকেই সহজ করা রয়েছে। তা ধৌত করতে হবে না। সেখানে মাসেহ করতে হবে। কিন্তু হাত এর বিপরীত। হাতের ফরয হচ্ছে তা ধৌত করা। এ কারণে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীদের হাত মোজাতে মাসেহ করা বৈধ করেননি। অথচ তা হাত ঢেকে রাখে। অতএব পানি পৌঁছতে বাধাদানকারী যে কোন পর্দা হলেই তাকে পাগড়ী বা মোজার সাথে তুলনা করা জায়েয নয়।
প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব হচ্ছে সত্য উদ্ঘাটনের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করা। এমন কোন ফতোয়া না দেয়া যার জন্য আল্লাহ্র সামনে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। কেননা এটা আল্লাহর দ্বীন ও শরীয়ত, এখানে অনুমান ও ধারণা করে কোন কিছু বলার অবকাশ নেই। (আল্লাহ্ তাওফীক দাতা ও সঠিক পথ প্রদর্শক।)
প্রশ্নঃ (১৪২) শরীয়ত সম্মত ওযুর পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ শরীয়ত সম্মত ওযুর পদ্ধতি দু’ভাগে বিভক্তঃ
প্রথম ভাগ হচ্ছে: ওয়াজিব পদ্ধতি। যা না করলে ওযুই হবে না। আর তা হচ্ছে পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত বিষয় সমূহ। আল্লাহ্ বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা ছালাতের ইচ্ছা কর, তখন তোমরা মুখমন্ডল ও হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়িদা- ৬) এর বর্ণনা হচ্ছে, মুখমন্ডল একবার ধৌত করতে হবে। কুলি করা ও নাক ঝাড়া মুখমন্ডল ধৌত করার অন্তর্গত। হাত ধৌত করার সীমানা হচ্ছে মধ্যমা আঙ্গুলের প্রান্ত সীমা থেকে কনুই পর্যন্ত একবার ধৌত করা। হাত ধৌত করার সময় কব্জি ধৌত করা হল কি না এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অনেক লোক অসতর্কতা বশত: শুধু হাতের উপর অংশ ধৌত করে এবং কব্জি ছেড়ে দেয়। এটা বিরাট ভুল। তারপর একবার মাথা মাসেহ করা। কান মাসেহ করা মাথা মাসেহের অন্তর্গত। শেষে দু’পা টাখনু পর্যন্ত একবার ধৌত করা। এটা হচ্ছে ওযুর সর্বনিম্ন ওয়াজিব পদ্ধতি।
দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছেঃ মুস্তাহাব পদ্ধতি। প্রথমে বিস্মিল্লাহ্ বলে ওযু শুরু করবে। দু’হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে। তারপর তিন চুল্লু পানি দ্বারা তিনবার কুলি করবে ও নাক ঝাড়বে। তিনবার মুখমন্ডল ধৌত করবে। এরপর দু’হাত কনুইসহ তিন বার করে ধৌত করবে। প্রথমে ডান হাত তারপর বাম হাত। একবার মাথা মসেহ করবে। মাথা মাসেহের নিয়ম হচ্ছেঃ দু’হাত পানিতে ভিজিয়ে, ভিজা হাত মাথার সামনের দিক থেকে শুরু করে পিছনের দিকে নিয়ে যাবে, অতঃপর আবার তা সামনের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। এরপর কান মাসেহ করবে। দু’তর্জনী দু’কানের ছিদ্রে প্রবেশ করিয়ে ভিতরের অংশ মাসেহ করবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কানের বাইরের অংশ মাসেহ্ করবে। সব শেষে দু’পা টাখনুসহ তিনবার করে ধৌত করবে। প্রথমে ডান পা তারপর বাম পা।
ওযু শেষ হলে এই দু’আটি পাঠ করবেঃ
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ
“আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। আল্লাহুম্মাজ্ আলনী মিনাত্ তাওয়াবীনা ওয়াজ্ আলনী মিনাল মুতাতাহ্হেরীন।” অর্থ- “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত উপাসনার যোগ্য কোন মা‘বুদ নেই। তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই। এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রাসূল। হে আল্লাহ্! আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের মধ্যে শামিল কর।”
যে ব্যক্তি ইহা পাঠ করবে তার জন্য বেহেস্তের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এভাবেই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ছহীহ্ সনদে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে।[13]
অসুস্থ ব্যক্তির পবিত্রতা অর্জন করার পদ্ধতি
সম্মানিত শাইখ ইবনু ঊছাইমীন (রহঃ) বলেন,
অসুস্থ ব্যক্তি কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে ও ছালাত আদায় করবে সে ব্যাপারে এটি একটি সংক্ষিপ্ত পত্র। অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থার বিচার করে তার জন্য ইসলামী শরীয়তে কিছু বিধান নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে ক্ষমাশীল সর্বোত্তম সঠিক ধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেন, যা হচ্ছে সহজ ও সরলতার বৈশিষ্টে অনন্য। আল্লাহ্ এরশাদ করেনঃ
وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ
“তিনি তোমাদের জন্য ধর্মে কোন অসুবিধা রাখেননি।” (সূরা হাজ্জ- ৭৮) তিনি আরো বলেনঃ
يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمْ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمْ الْعُسْرَ
“আল্লাহ্ তোমাদের জন্য সহজতা চান, তোমরা অসুবিধায় পড় তিনি তা চান না।” (সূরা বাক্বারা- ১৮৫) আল্লাহ্ আরো বলেনঃ
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا
“তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর কথা শোন ও আনুগত্য কর।” (সূরা তাগাবুন- ১৬)
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ  “নিশ্চয় এই ধর্ম অতি সহজ।” [14]
তিনি আরো বলেনঃ
وَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ
“আমি যখন কোন বিষয়ে তোমাদেরকে আদেশ করি, তখন সাধ্যানুযায়ী তা বাস্তবায়ন কর।” [15]
উল্লেখিত মূলনীতির ভিত্তিতে ওযর বিশিষ্ট লোকদের জন্য আল্লাহ তা’আলা ইবাদতকে সহজ ও হালকা করে দিয়েছেন। যাতে করে তারা কোন অসুবিধা ও কষ্ট ছাড়াই তাঁর ইবাদত সম্পাদন করতে পারে। (আল্ হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন)
অসুস্থ ব্যক্তির পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি:
১) অসুস্থ ব্যক্তির উপর আবশ্যক হল ছোট নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি দ্বারা ওজু করা এবং বড় নাপাকী থেকে পবিত্রতা হাসিলের জন্য পানি দ্বারা গোসল করা।
২) পানি দ্বারা যদি পবিত্রতা অর্জন করতে না পারে- অপারগতার কারণে বা রোগ বেড়ে যাবে এই আশংকার কারণে বা ভয় করে সুস্থ হতে দেরী হয়ে যাবে- তবে এহেন পরিস্থিতিতে সে তায়াম্মুম করবে।
৩) তায়াম্মুমের পদ্ধতি হল- হাত দুটিকে পবিত্র মাটিতে একবার মারবে তারপর তা দিয়ে সমস্ত মুখমন্ডল মাসেহ করবে। অতঃপর উভয় হাতকে কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করবে। আগে ডান হাত পরে বাম হাত।
৪) রুগী নিজে যদি পবিত্রতা অর্জন করতে অক্ষম হয়, তবে অন্য ব্যক্তি তাকে ওযু  বা তায়াম্মুম করিয়ে দিবে।
৫) ওযু বা গোসলের কোন অঙ্গে যদি যখম থাকে আর পানি দিয়ে ধৌত করলে তাতে ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে, তবে পানি দিয়ে হাতকে ভিজিয়ে সে স্থানকে মুছে দিবে। এভাবে মুছে দেয়াতেও যদি ক্ষতির আশংকা হয়, তবে তার জন্য তায়াম্মুম করে নিবে।
৬) ভাঙ্গা-মচকা ইত্যাদি কারণে যদি শরীরের কোন অঙ্গে পট্টি বা ব্যান্ডেজ থাকে তবে সে স্থান ধৌত করার পরিবর্তে পানির মাধ্যমে তার উপর মাসেহ করে নিবে। এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করবে না। কেননা মাসেহ ধোয়ার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে।
৭) কোন বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করবে? দেয়াল বা অন্য কোন বস্তু যেখানে ধূলা লেগে আছে তা দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে। দেয়াল যদি মাটি জাতীয় বস্তু ছাড়া অন্য কোন বস্তু দ্বারা লেপন করা থাকে যেমন রং বা পেইন্ট, তবে সেখানে তায়াম্মুম জায়েয হবে না। কিন্তু যদি উক্ত দেয়ালে ধূলা লেগে থাকে তবে তাতে তায়াম্মুম করতে অসুবিধা নেই।
৮) যমিনের উপর হাত রেখে বা দেয়াল থেকে বা যে বস্তুতে ধূলা আছে তা থেকে তায়াম্মুম করা সম্ভব না হয় তবে কোন পাত্র বা রুমালের মধ্যে কিছু মাটি রেখে দিতে পারে। তারপর তা দিয়ে তায়াম্মুম করবে।
৯) এক ওয়াক্তের ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে তায়াম্মুম করার পর যদি তায়াম্মুম অবশিষ্ট থাকে তবে তা দিয়ে আরেক ওয়াক্তের ছালাত আদায় করতে পারবে। এক্ষেত্রে পরবর্তী ছালাতের জন্য আবার তায়াম্মুম করার দরকার নেই। কেননা সে তো পবিত্রই আছে। আর পবিত্রতা ভঙ্গকারী কোন কারণও ঘটেনি। এমনিভাবে বড় নাপাকী থেকে যদি তায়াম্মুম করে তবে পরবর্তী বড় নাপাকীতে লিপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত আর তায়াম্মুম করতে হবে না। কিন্তু এর মাঝে ছোট নাপাকীতে লিপ্ত হলে তার জন্য তায়াম্মুম করতে হবে।
 ১০) অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হল সকল প্রকার নাপাকী থেকে স্বীয় শরীরকে পাক-পবিত্র করা। যদি পাক-পবিত্র হতে সক্ষম না হয়, তবে সংশ্লিষ্ট নাপাকী নিয়েই ছালাত আদায় করবে। তার উক্ত ছালাত বিশুদ্ধ হবে এবং পুনরায় উক্ত ছালাত দোহরাতে হবে না।
১১) পবিত্র কাপড় নিয়ে ছালাত আদায় করাও অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব। কাপড় নাপাক হয়ে গেলে তা ধৌত করা অথবা তা বদলিয়ে অন্য কাপড় পরিধান করা ওয়াজিব। কিন্তু এরূপ করা ঐ যদি সাধ্যাতীত হয় তবে সংশ্লিষ্ট নাপাকী নিয়েই ছালাত আদায় করবে। উক্ত ছালাত বিশুদ্ধ হবে এবং তা আর ফিরিয়ে পড়তে হবে না।
 ১২) পবিত্র স্থান ও পবিত্র বস্তুর উপর ছালাত আদায় করাও রুগীর উপর ওয়াজিব। যদি ছালাতের স্থান নাপাক হয়ে যায় তবে তা ধৌত করা বা কোন পবিত্র বস্তু দ্বারা পরিবর্তন করা বা সেখানে কোন পবিত্র বস্তু বিছিয়ে দেয়া ওয়াজিব। যদি এর কোনটাই সম্ভব না হয় তবুও ঐ অবস্থায় ছালাত আদায় করবে এবং তার ছালাত শুদ্ধ হবে। অন্য সময় তা ফিরিয়ে পড়ারও দরকার হবে না।
১৩) পবিত্রতা হাসিল করতে অপারগতার কারণে কোন রুগীর জন্য ছালাত পরিত্যাগ করা বা কাযা করা কোন ক্রমেই বৈধ নয়। সাধ্যানুযায়ী সে পবিত্রতা অর্জন করবে। তারপর সময়ের মধ্যেই ছালাত আদায় করে নিবে- যদিও তখন তার শরীরে বা কাপড়ে বা ছালাতের স্থানে নাপাকী লেগেই থাকে যা দূরীভূত করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন:  فاَتَّقُوا اللهَ ماَ اسْتَطَعْتُمْ  অর্থ: তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্‌কে ভয় কর। (সূরা তাগাবূন: ১৬)
 ১৪) কোন মানুষ যদি বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত থাকে, তবে সে ছালাতের ওয়াক্ত আসার আগে যেন ওযু না করে। যখন ছালাতের ওয়াক্ত আসবে তখন তার লজ্জাস্থান ধৌত করবে, তারপর উক্ত স্থানে পবিত্র কোন বস্তু বেঁধে দিবে যাতে পেশাব কাপড় বা শরীরে ছড়িয়ে না যায়। তারপর ওযু করে ছালাত আদায় করবে। এরূপ সে প্রত্যেক ফরয ছালাতের সময় করবে। এরূপ করা যদি তার উপর অধিক কষ্টকর হয় তবে দু্লছালাতকে একত্রে পড়া তার জন্য জায়েয আছে। যোহর এবং আছর একত্রে এবং মাগরিব ও এশা একত্রে আদায় করে নিবে। আর ফরয ছালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সুন্নাতের জন্য আলাদা ওযু দরকার নাই তবে অন্য কোন নফল ছালাত আদায় করতে চাইলে তাকে ফরযের নিয়মে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।
প্রশ্নঃ (১৪৩) সতর্কতা বশতঃ প্রত্যেকবার ওযু করার সময় সুতার মোজা খোলার বিধান কি?
উত্তরঃ এটা সুন্নাত পরিপন্থী কাজ। এতে ভ্রান্ত মতবাদ শিয়া রাফেযীদের সাথে সদৃশ্য হয়ে যায়। কেননা তারা মোজার উপর মাসেহ করা জায়েয মনে করে না। অথচ মুগীরা বিন শো’বা (রাঃ) যখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মোজা খুলতে চাইলেন, তিনি তাকে বললেনঃ
دَعْهُمَا فَإِنِّي أَدْخَلْتُهُمَا طَاهِرَتَيْنِ فَمَسَحَ عَلَيْهِمَا
“খুলতে হবে না। কেননা পবিত্র অবস্থায় আমি ও দু’টি পরিধান করেছি।” তারপর তার উপর মাসেহ করলেন। [16]
মোজার উপর মাসেহ করার সময় সীমা
প্রশ্নঃ (১৪৪) সুতার মোজার উপর মাসেহ করার সময়সীমা কখন থেকে গণনা শুরু করতে হবে?
উত্তরঃ এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি মাসআলা। এর সঠিক বিবরণ মানুষের জানা দরকার। তাই বিস্তারিতভাবে আমি প্রশ্নটির জবাব দিব। ইন্শাআল্লাহ্।
কুরআন ও সুন্নাহ্র দলীলের ভিত্তিতে মোজার উপর মাসেহ করার বিষয়টি সুপ্রমাণিত। আল্লাহ্ বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের ইচ্ছা কর, তখন তোমরা মুখমন্ডল ও হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়িদা- ৬)
উল্লেখিত আয়াতের মধ্যে أَرْجُلَكُمْ শব্দটিতে لام অক্ষরটিতে যবর এবং যের দিয়ে উভয়ভাবে পড়া যায়। যবর দিয়ে পাঠ করলে তা وُجُوهَكُمْ শব্দের উপর ভিত্তি করবে। তখন মুখমন্ডল ধৌত করার মত পাও ধৌত করতে হবে। আর যের দিয়ে পাঠ করলে তখন তার ভিত্তি হবে بِرُءُوسِكُمْ শব্দের উপর। তখন পা ও মাথা মাসেহের অন্তর্ভূক্ত হবে। অতএব পূর্বোল্লিখিত দু’ক্বিরাত অনুযায়ী পদ যুগল ধৌতও করা যায় এবং মাসেহও করা যায়। সুন্নাতে নববীতে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে যে, কখন ধৌত করতে হবে এবং কখন মাসেহ করতে হবে? সুতরাং পা যখন অনাবৃত থাকবে তখন তা ধৌত করতে হবে। আর মোজা প্রভৃতি দ্বারা আবৃত করা থাকলে তা মাসেহ করবে।
হাদীছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মুতাওয়াতির সনদে মোজার উপর মাসেহ করা প্রমাণিত হয়েছে। যেমনটি জনৈক কবি বলেছেনঃ
মোতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীছ সমূহ হচ্ছেঃ ১) নবীজীর উপর মিথ্যারোপ করা ২) আল্লাহর জন্য ঘর (মসজিদ) তৈরী করা। ৩) ক্বিয়ামত দিবসে আল্লার দিদার লাভ। ৪) শাফাআতের বর্ণনা। ৫) হাওয কাওছার ৬) মোজার উপর মাসেহ করা।
মোজার উপর মাসেহ করার বর্ণনা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মুতাওয়াতির সনদে বর্ণিত। তাই পবিত্র (ওযু) অবস্থায় কোন মানুষ মোজা পরিধান করে থাকলে- ওযু করার সময় মোজা খুলে পা ধৌত করার চাইতে উক্ত মোজার উপর মাসেহ করা উত্তম। এই কারণে মুগীরা বিন শো’বা (রাঃ) যখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওযুর সময় তাঁর পরিহিত মোজা খুলতে চাইলেন, তিনি বললেন, “খুলতে হবে না। কেননা পবিত্র অবস্থায় আমি তা পরিধান করেছি।”[17] তারপর তার উপর মাসেহ করলেন।
মোজার উপর মাসেহ করার কয়েকটি শর্ত রয়েছেঃ
প্রথম শর্তঃ ছোট বড় সবধরণের নাপাকী থেকে পূর্ণরূপে পবিত্রতা অর্জন করার পর মোজা পরিধান করবে। যদি পবিত্রতা অর্জন না করে মোজা পরিধান করে, তবে তাতে মাসেহ করা বিশুদ্ধ হবে না।
দ্বিতীয় শর্তঃ মাসেহ করার নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে মাসেহ করতে হবে। এর বর্ণনা অচিরেই আসবে। ইনশাআল্লাহ।
তৃতীয় শর্তঃ ছোট নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন তথা ওযুর ক্ষেত্রে মাসেহ হতে হবে। কিন্তু গোসল ফরয হলে মোজা অবশ্যই খুলতে হবে এবং সমস্ত শরীর ধৌত করতে হবে। এ জন্য জানাবতের ক্ষেত্রে মোজার উপর মাসেহ করা যাবে না। যেমনটি ছাফওয়ান বিন আস্সাল (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রয়েছেঃ তিনি বলেন, আমরা সফরে থাকলে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে আদেশ করতেন, নাপাক না হলে আমরা যেন তিন দিন তিন রাত মোজা না খুলি। [18]
মোজার উপর মাসেহ করার সময় সীমাঃ মুক্বীম তথা গৃহে অবস্থানকারীর জন্য একদিন একরাত তথা ২৪ ঘন্টা। আর মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত তথা ৭২ ঘন্টা। নামায কয় ওয়াক্ত হল সেটা বিষয় নয়, আসল কথা হচ্ছে নির্ধারিত সময় পূর্ণ হওয়া।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছেএই সময় গণনা কখন থেকে শুরু হবে? এই হিসাব শুরু হবে প্রথম বার মাসেহ করার সময় থেকে। মোজা পরিধান বা ওযু ভঙ্গের সময় থেকে হিসাব শুরু হবে না। কেননা হাদীছে ‘মাসেহ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যখন এই কাজটি হবে তখনই শব্দটির ব্যবহার হবে। “মুক্বীম একদিন একরাত্র মাসেহ করবে এবং মুসাফির তিনদিন তিন রাত মাসেহ করবে।” প্রথমবার মাসেহ করার সময় থেকে হিসাব শুরু হবে। তখন থেকে নিয়ে ২৪ ঘন্টা পূর্ণ হলেই মুক্বীমের নির্দিষ্ট সময় শেষ। আর ৭২ ঘন্টা পূর্ণ হলে মুসাফিরের নির্দিষ্ট সময় শেষ।
বিষয়টিকে অধিক সুস্পষ্ট করার জন্য একটি উদাহরণ পেশ করা হচ্ছেঃ
জনৈক ব্যক্তি ফজরের সময় পবিত্রতা অর্জন করে মোজা পরিধান করেছে। এরপর যোহর পর্যন্ত পবিত্র অবস্থায় থেকেছে। এমনকি আছর পর্যন্ত তার ওযু নষ্ট হয়নি। তাই সে ঐ ওযুতে যোহর ও আছর নামায সময়মত আদায় করেছে। তারপর মাগরিবের পূর্বে বিকাল ৫টার সময় ওযু করেছে এবং মোজার উপর মাসেহ করেছে। এই ৫টা থেকে তার সময়ের হিসাব শুরু হবে। সে পরবর্তী দিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত মোজার উপর মাসেহ করতে পারবে। যদি পরবর্তী দিন ৫টা বাজার পনর মিনিট আগে মোজাতে মাসেহ করে এবং এশা পর্যন্ত তার ওযু ভঙ্গ না হয়, তবে ঐ মাসেহকৃত ওযু দ্বারা মাগরিব নামায আদায় করতে পারবে কোন অসুবিধা নেই। অতএব এই লোক প্রথমবার ওযু করার পর প্রথম দিন যোহর আছর মাগরিব এশা এবং দ্বিতীয় দিন ফজর যোহর আছর মাগরিব ও এশা মোট নয়টি নামায আদায় করতে পারছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ধারণা হচ্ছে, মাসেহের মাধ্যমে শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা যায়। অথচ একথার কোন ভিত্তি নেই।
শরীয়তে মাসেহ করার যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে তা শুরু হবে প্রথমবার মাসেহ করার সময় থেকে। এই উদাহরণে আপনি দেখলেন কতগুলো ছালাত আদায় করা সম্ভব। উল্লেখিত উদাহরণে যে সময় দেখানো হয়েছে, তা যদি শেষ হয়ে যায় এবং তারপর মাসেহ করে, তবে তা বাতিল বলে গণ্য হবে এবং তার ওযু হবে না। কিন্তু মাসেহের নির্দিষ্ট সময় পূর্ণ হওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে মাসেহ করে যদি আর ওযু ভঙ্গ না হয়, তবে যতক্ষণ ওযু ভঙ্গ না হবে নামায পড়তে পারবে- যদিও নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। কেননা নামায আদায় করার সময় সে তো পবিত্র অবস্থাতেই রয়েছে।
নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলেই মাসেহ ভঙ্গ হয়ে যাবে এমন কথা দলীল বিহীন। কেননা সময় অতিবাহিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, আর মাসেহ করা যাবে না। এমন অর্থ নয় যে, সে আর পবিত্র থাকবে না। যে সময় সীমা দেয়া হয়েছে তা মাসেহের জন্য প্রজোয্য পবিত্রতার জন্য নয়। তাই সময় অতিবাহিত হলেই ওযু নষ্ট হয়ে যাবে এর কোন দলীল নেই। অতএব আমরা বলব, যখন কিনা এই ব্যক্তি বিশুদ্ধ শরঈ দলীলের ভিত্তিতে ওযু করে পবিত্র হয়েছে, তখন তার ওযু নষ্ট হয়েছে একথার পক্ষেও বিশুদ্ধ শরঈ দলীল দরকার। আর যেহেতু সময় অতিবাহিত হলেই ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে এরকম কোন দলীল নেই, সেহেতু ওযু ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত সে পবিত্র হিসেবেই অবশিষ্ট থাকবে।
মুসাফিরের সময়সীমা তিনদিন তিনরাত। অর্থাৎ ৭২ ঘন্টা। এই হিসেব শুরু হবে প্রথমবার মাসেহের সময় থেকে। এজন্য হাম্বলী মাযহাবের ফিক্বাহবীদগণ উল্লেখ করেছেন, কোন লোক যদি মুক্বীম অবস্থায় মোজা পরিধান করে অতঃপর নিজ শহরে থাকাবস্থাতেই তার ওযু ভঙ্গ হয়, এরপর সফর করে এবং সফরের স্থানে গিয়ে ওযু করে মাসেহ করে, তবে তাঁরা বলেন, সে মুসাফিরের সময়সীমা পূর্ণ করবে। এ দ্বারা বুঝা যায় যারা বলেন, মোজা পরিধান  করে প্রথমবার ওযু ভঙ্গ হওয়ার পর থেকে সময় গণনা শুরু হবে, তাদের এই কথা দুর্বল।
কখন মোজার উপর মাসেহ বাতিল হবে? ১) সময় অতিবাহিত হলে এবং ২) মোজা খুলে ফেললে। অর্থাৎ- মোজা খুলে ফেললে আর মাসেহ করা যাবে না, কিন্তু সে পবিত্র অবস্থাতেই থাকবে যতক্ষণ তার ওযু ভঙ্গ না হয়। একথার দলীল হচ্ছে ছাফ্ওয়ান বিন আস্সালের পূর্ববর্তী হাদীছ। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন মোজা না খোলার।’ এ থেকে বুঝা যায়, মোজা খুলে ফেললে মাসেহ বাতিল হয়ে যাবে। অর্থাৎ- একবার মাসেহ করার পর যদি মোজা খুলে ফেলে, তবে পুনরায় তা পরিধান করে তাতে মাসেহ করতে পারবে না- যতক্ষণ না সে নতুন করে পূর্ণ ওযুর মাধ্যমে পা ধৌত করে মোজা পরিধান করবে।
কিন্তু মোজা খুলে ফেললে পবিত্রতা অবশিষ্ট থাকবে। কেননা মাসেহ করার মাধ্যমে যখন কোন ব্যক্তি ওযু করবে তখন শরঈ দলীলের ভিত্তিতেই সে পবিত্রতা অর্জন করে থাকে, সুতরাং তার এই পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে একথা বলার জন্য শরঈ দীলল দরকার। আর মাসেহ করে ওযু করার পর মোজা খুলে ফেললে ওযু বিনষ্ট হয়ে যাবে একথার পক্ষে কোন দলীল নেই। কিন্তু একথার দলীল আছে যে, একবার মাসেহ করার পর মোজা খুলে ফেললে পুনরায় পরিধান করে আবার তাতে মাসেহ করা যাবে না। যেমনটি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। (আল্লাহ্ তাওফীক্ব দাতা)
প্রশ্নঃ (১৪৫) পাতলা বা ছেঁড়া মোজাতে মাসেহ করার বিধান কি?
উত্তরঃ বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, ছেঁড়া মোজা এবং বাইরে থেকে চামড়া দেখা যায় এমন পাতলা মোজার উপর মাসেহ করা জায়েয। যে অঙ্গের উপর মাসেহ হবে তাকে পরিপূর্ণরূপে ঢেকে রাখতে হবে এটা উদ্দেশ্য নয়। কেননা পা তো আর সতর নয়। মাসেহ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে ওযুকারী ব্যক্তির উপর সহজতা ও হাল্কা করা। অর্থাৎ- আমরা প্রত্যেক ওযুর সময় মোজা পরিধানকারীকে মোজা খুলে পা ধৌত করতে বাধ্য করব না। বরং বলব, এর উপর মাসেহ করাই আপনার জন্য যথেষ্ট। আর এই সহজতার উদ্দেশ্যেই মোজার উপর মাসেহ শরীয়ত সম্মত করা হয়েছে। অতএব কোন পার্থক্য নেই চাই মোজা ছেঁড়া হোক বা ভাল হোক, পাতলা হোক বা মোটা হোক।
প্রশ্নঃ (১৪৬) পট্টির উপর মাসেহ করার বিধান কি?
উত্তরঃ প্রথমত আমাদের জানা উচিত যে, পট্টি কি?
পট্টি বা ব্যান্ডেজ হচ্ছে এমন বস্তু যা ভাঙ্গা-মচকা জোড়া লাগানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। ফিক্বাহবিদদের ভাষায়ঃ “বিশেষ প্রয়োজনে পবিত্রতা অর্জনের অঙ্গে কোন কিছু লাগিয়ে রাখা।” ভেঙ্গে যাওয়া স্থানে বা ফোঁড়ার স্থানে বা পিঠের ব্যাথায় বা অন্য কোন কারণে যে পট্টি বা ব্যান্ডেজ লাগানো হয় এখানে সেটাই উদ্দেশ্য। ধৌত করার পরিবর্তে সেখানে মাসেহ করলেই যথেষ্ট হবে।
যেমন কোন লোকের হাতে ফোঁড়ার কারণে যদি পট্টি বাধা থাকে, তখন ওযু করার সময় অন্যান্য স্থান ধৌত করে পট্টির উপর শুধু মাসেহ করবে। তাহলেই তার পবিত্রতা পূর্ণ হয়ে যাবে। যদি তার ওযু ভঙ্গ না হয়ে থাকে, তবে পট্টি বা ব্যান্ডেজ খুলে ফেলার কারণে তার পবিত্রতা নষ্ট হবে না। কেননা শরঈ দীললের ভিত্তিতে সে পবিত্রতা অর্জন করেছে, সুতরাং পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে একথা বলার জন্য শরঈ দলীল দরকার। আর পট্টি বা ব্যান্ডেজ খুলে ফেললে ওযু বা পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে একথার পক্ষে কোন দীলল নেই।
পট্টির উপর মাসেহ করার অনুমতি সংক্রান্ত হাদীছ সমূহ সবগুলোই ভেজালপূর্ণ। সবগুলোই যঈফ বা দুর্বল। একদল বিদ্বান বলেন, তবে সবগুলো হাদীছের সমম্বয়ে তা দলীল হিসেবে যোগ্য হতে পারে।
আরেক দল বিদ্বান বলেন, হাদীছগুলো যঈফ হওয়ার কারণে তার উপর ভিত্তি করা চলবে না। এদের মধ্যে মতভেদ আছে। কেউ বলেন, যেহেতু মাসেহ করার দলীল নেই তাই পট্টি বা ব্যান্ডেজ বাধা স্থানের পবিত্রতা রহিত হয়ে যাবে। সেখানে কিছুই করতে হবে না। কেননা সে অপারগ। আবার কেউ বলেন, উক্ত স্থানে মাসেহ করবে না বরং তায়াম্মুম করবে।
কিন্তু হাদীছের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে শরঈ মূলনীতির ভিত্তিতে দেখা যায় নিকটতম মত হচ্ছে মাসেহ করা। মাসেহ করলে তায়াম্মুমের কোন দরকার নেই। এই অবস্থায় আমরা বলবঃ ওযু গোসলের কোন অঙ্গে যদি যখম বা ফোঁড়া বা এরকম কিছু থাকে, তবে তা কয়েকটি স্তরে বিভক্তঃ
প্রথম স্তরঃ যখম বা ফোঁড়ার স্থানটি উম্মুক্ত। ধৌত করলে কোন অসুবিধা হবে না। সুতরাং উহা ধৌত করা ওয়াজিব।
দ্বিতীয় স্তরঃ স্থানটি উম্মুক্ত কিন্তু ধৌত করলে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। তখন সেখানে মাসেহ করা ওয়াজিব।
তৃতীয় স্তরঃ স্থানটি উম্মুক্ত কিন্তু ধৌত বা মাসেহ করলে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। তখন সেখানে তায়াম্মুম করা ওয়াজিব।
চতুর্থ স্তরঃ স্থানটি পট্টি বা ব্যান্ডেজ জাতীয় বস্তু দ্বারা ঢাকা আছে। তখন সেই বস্তুর উপর মাসেহ করবে। ধৌত বা তায়ম্মুম করার দরকার হবে না।
(ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম থেকে)
মূল: আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উছাইমীন (রাহ:)
অনুবাদক: শাইখ মুহা: আব্দুল্লাহ আল কাফী

Hiç yorum yok:

Yorum Gönder

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...