15 Şubat 2019 Cuma

মুসলিম হবে মৌমাছির মতো..



মৌমাছি বা মধুমক্ষিকা মধুকর হিসাবে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে এবং তারই নামে একটি সূরার নামকরণ হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, 
{وَأَوْحَى رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ أَنْ اتَّخِذِي مِنْ الْجِبَالِ بُيُوتاً وَمِنْ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُونَ (68) ثُمَّ كُلِي مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلاً يَخْرُجُ مِنْ بُطُونِهَا شَرَابٌ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ} (69) سورة النحل
“তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে প্রত্যাদেশ করেছেন যে, তুমি গৃহ নির্মাণ কর পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে। এরপর প্রত্যেক ফল হতে আহার কর, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ কর; ওর উদর হতে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়; যাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগমুক্তি। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।” (সুরা নাহলঃ৬৮-৬৯)
মৌমাছির কর্মব্যস্ততার উদাহরণ দেওয়া হয় এবং তার নিকট থেকে মানুষ এ বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
“মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি দাড়াও না একবার ভাই,
ওই ফুল ফোটে বনে যাই মধু আহরণে দাঁড়াবার সময় যে নাই।“
মৌমাছির একতা ও এক সাথে মিলেমিশে বসবাস ও পরস্পরের স্বার্থে কাজ করার সুন্দর উপমা রয়েছে। উপাদেয় খায়, উপাদেয় উৎপাদন করে এবং মানুষের উপকার করে। কী সুন্দর ঘর বানায় এবং কী সুন্দর ভান্ডার তৈরি করে! অতঃপর বনে-বাগানে ছুটে গিয়ে ফুলে-ফুলে বসে মধু আহরণ করে। অতঃপর তা নিয়ে এসে সঞ্চয় করে মৌচাকে। সুন্দর কর্মের এই প্রাণীটির সাথে তুলনা করা হয়েছে মু’মিনকে। মহানবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “
((وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ إِنَّ مَثَلَ الْمُؤْمِنِ لَكَمَثَلِ النَّحْلَةِ أَكَلَتْ طَيِّبًا وَوَضَعَتْ طَيِّبًا وَوَقَعَتْ فَلَمْ تَكْسِرْ وَلَمْ تُفْسِدْ)).
সে সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ আছে, নিশ্চয় মু’মিনের উপমা মৌমাছির মতো। যে উত্তম খায় এবং উত্তম উৎপাদন করে। আর (যাতে বসে তা) ভাঙ্গে না এবং নষ্টও করে না।” (আহমাদ ৬৮৭২, হাকেম ২৫৩, সিঃ সহীহাহ ২২৮৮নং)
কী সুন্দর মু’মিনের উপমা! মু’মিন হয় মৌমাছির মতো বিচক্ষণ কর্মক্ষম। মুমিন হয় উপকারী। সে নিজের কর্ম দ্বারা অপরকে উপকৃত করে।
মু’মিন মৌমাছির মতো দিবারাত্রি কাজ করে। মৌমাছির কাজে প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে অন্ধকার, মেঘ, বৃষ্টি, বাতাস, ধোয়া ও আগুন। অনুরূপ মু’মিনের আমলে প্রতিকূলতা আনে ঔদাস্যের অন্ধকার, সন্দেহের মেঘ, প্রাচুর্যের বৃষ্টি, ফিতনার বাতাস, হারামের ধোয়া ও কুপ্রবৃত্তির আগুন।
মু’মিন নিজের হাতের উপার্জন খায়। যেহেতু তা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ উপার্জন। সৌন্দর্য পছন্দ করে, হালাল রুযী উপার্জন করে। হারাম খাদ্য, অপরিচ্ছন্নতা ও অপবিত্রতা থেকে দুরে থাকে। সে তা হতে জীবিকা নির্বাহ করে এবং অপরকেও উপকৃত করে। প্রকৃত মু'মিন সত্যই মৌমাছির মতো। কতই সুন্দরই না তার উদাহরণ।
ফুলের ভিতর যে মধু আছে, তা হয়তো কেউ জানত না, যদি মৌমাছি তা আহরণ করে মৌচাকে সংগ্রহ না করত। মু’মিন যদি দ্বীনের মাহাত্ম প্রচার না করতো, তাহলে কত শত মানুষ সেই মধু থেকে চির বঞ্চিত থেকে যেত, যে মধু সুমহান স্রষ্টা দ্বীনের মধ্যে নিহিত রেখেছেন। 
“ভ্রামরী মিত্ৰতা” স্বার্থপরতার বন্ধুত্বকে বলা হয়। যে বন্ধু ভ্রমরের মতো মধু থাকলে ফুলের সাথে বন্ধুত্ব করতে আসে। আর মধু না থাকলে বা ফুরিয়ে গেলে আর বসে না অথবা বসলেও বেশিক্ষণ বসে না। তুমি গরীব ছিলে, তখন কেউ তোমার সাথে বন্ধুত্ব করেনি। যেমনি তুমি অর্থশালী, বিত্তশালী বা প্রভাবশালী হলে, অমনি বন্ধুত্বের অফার আসতে শুরু হল।
সুসময়ে অনেক বন্ধু হয়। অতঃপর স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে কেটে পরে। বিতরণ করতে পারলে বন্ধুর অভাব হয় না। সৌজন্য সাক্ষাতের নামে এসে নিজেদের স্বার্থোদ্ধার করতে কুণ্ঠিত হয় না। যারা দূর-দূরান্ত থেকে দেখা করতে আসে, সাক্ষাৎ করতে আসে, নিশ্চয় তাদের একটা উদ্দেশ্য থাকে। তাদের মধ্যে বিরল সংখ্যক মানুষের সাক্ষাতে থাকে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য। আর যাদের কোনই স্বার্থ থাকে না, তারা প্রতিবেশী হয়েও সাক্ষাৎ করতে আসে না। তাদের মসজিদে ইমামতি করে কয়েক ওয়াক্তের নামায পড়লেও সাক্ষাৎ করে না। অতঃপর অযাচিতভাবে মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়েই গেলে বলে, ‘আস্-সালামু আলাইকুম! কখন আসলেন? আর প্রয়োজনে ও স্বার্থ থাকলে বারবার খোঁজ নেয়, “উনি কবে আসবেন?” বারবার ব্যাকুল হয়ে ভ্রমর গাছে গাছে জিজ্ঞাসা করে, “ফুল কবে ফুটবে?”
এমন বন্ধু হয়তো পাবেই না জীবনে, যে আল্লাহর ভালোবাসা লাভের জন্য তোমার সাথে কেউ সাক্ষাৎ করতে আসবে। মহানবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
((الَّذِينَ يَذْكُرُونَ مِنْ جَلَالِ اللَّهِ مِنْ تَسْبِيحِهِ وَتَحْمِيدِهِ وَتَكْبِيرِهِ وَتَهْلِيلِهِ يَتَعَاطَفْنَ حَوْلَ الْعَرْشِ لَهُنَّ دَوِيٌّ كَدَوِيِّ النَّحْلِ يُذَكِّرُونَ بِصَاحِبِهِنَّ، أَلَا يُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ لَا يَزَالَ لَهُ عِنْدَ اللَّهِ شَيْءٌ يُذَكِّرُ بِهِ؟)).
“এক ব্যক্তি অন্য কোন গ্রামে তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য বের হল। আল্লাহ তাআলা তার রাস্তায় এক ফিরিস্তাকে বসিয়ে দিলেন, তিনি তার অপেক্ষা করতে থাকলেন। যখন সে তাঁর কাছে পৌছল, তখন তিনি তাকে বললেন, 'তুমি কোথায় যাচ্ছ?’ সে বলল, “এ লোকালয়ে আমার এক ভাই আছে, আমি তার কাছে যাচ্ছি।” ফিরিস্তা জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার প্রতি কি তার কোন অনুগ্রহ রয়েছে, যার বিনিময় দেওয়ার জন্য তুমি যাচ্ছ?” সে বলল, 'না, আমি তার নিকট কেবলমাত্র এই জন্য যাচ্ছি যে, আমি তাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি।‘ ফিরিস্তা বললেন, (তাহলে শোনো) আমি তোমার নিকট আল্লাহর দূত হিসাবে (এ কথা জানাবার জন্য) এসেছি যে, আল্লাহ তাআলা তোমাকে ভালবাসেন; যেমন তুমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালবাস।” (মুসলিম ৬৭ ১৪নং)
জান্নাতের সুখ অর্জনের উদ্দেশ্যে তোমার সাক্ষাতে নিতান্ত কম লোকই এসে থাকবে। যে সাক্ষাতের ব্যাপারে মহানবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “
(( أنَّ رَجُلاً زَارَ أَخَاً لَهُ في قَريَة أُخْرَى ، فَأرْصَدَ الله تَعَالَى عَلَى مَدْرَجَتِهِ مَلَكاً ، فَلَمَّا أتَى عَلَيهِ ، قَالَ : أيْنَ تُريدُ ؟ قَالَ : أُريدُ أخاً لي في هذِهِ القَريَةِ . قَالَ : هَلْ لَكَ عَلَيهِ مِنْ نِعْمَة تَرُبُّهَا عَلَيهِ ؟ قَالَ : لا ، غَيْرَ أنِّي أحْبَبْتُهُ في الله تَعَالَى ، قَالَ : فإنِّي رَسُولُ الله إلَيْكَ بَأنَّ اللهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَمَا أحْبَبْتَهُ فِيهِ )).
যে ব্যক্তি কোন রোগীকে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসাবাদ করে অথবা তার কোন লিল্লাহী ভাইকে সাক্ষাৎ করে, সে ব্যক্তিকে এক (গায়বী) আহবানকারী আহবান করে বলে, ‘সুখী হও তুমি, সুখকর হোক তোমার ঐ যাত্রা (সাক্ষাতের জন্য যাওয়া)। আর তোমার স্থান হোক জান্নাতের প্রাসাদে।” (তিরমিযী ২০০৮নং)
আল্লাহু আকবার! কিন্তু সে তো ধারের খাতা। নগদ যা পায়, তা হাত পেতে নেওয়ার জন্য তারা আসে এবং বাকীর খাতা শূন্য রাখে। যেহেতু তাদের অনেকে বলে,
“শুনি মরিলে পাব বেহেশ্তানা, তা শুনে তো মন মানে না,
বাকির লোভে নগদ পাওনা কে ছাড়ে এই ভুবনে?”
হায়রে স্বার্থপর। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার স্বার্থ বুঝলি? আর অনন্ত কাল আখেরাতের কথা ভুলে গেলি? তুই দুনিয়াতেও কারো মিত্র হওয়ার যোগ্য নস্। তুই হয়তো পরকালে বিশ্বাসীই নস্।
সংগ্রহে : আব্দুল হামীদ আল-ফাইজী আল-মাদানী

Hiç yorum yok:

Yorum Gönder

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...