উত্তরঃ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
‘হিজাব’
একটি আরবী শব্দ যার অর্থ ঢেকে রাখা অথবা গোপন রাখা। কোনো কিছুকে
হিজাব বলার অর্থ, ‘যার দ্বারা কোনো কিছুকে ঢেকে রাখা হয়’।
দুইটা
বস্তুর মাঝে পর্দা হিসেবে যাই আসে সেটাকেই হিজাব বলা হয়।
এমন
যেকোনো কিছুকেই হিজাব বলা হয় যার উদ্দেশ্য হলো ঢেকে রাখা এবং কাউকে এর কাছে পৌঁছতে
বাঁধা দেওয়া, যেমন – (দরজা/জানালার) পর্দা, দারোয়ান, কাপড় ইত্যাদি।
‘খিমার’
শব্দটির মূল উৎস
হচ্ছে খামর, যার অর্থ হচ্ছে ‘ঢেকে রাখা’।
উদাহরণ
স্বরূপঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“খামমিরু আনিয়াতাকুম” – তোমরা তোমাদের
পাত্রগুলো ঢেকে রাখো। এমন কোনো কিছু যা অন্য কোনো কিছুকে ঢেকে রাখে তাকে ‘খিমার’ বলে।
কিন্তু
বর্তমানে সাধারণভাবে ‘খিমার’ শব্দটি দিয়ে ঐ কাপড়টাকেই বুঝানো হয় যার
দ্বার একজন নারী তার মাথা ঢেকে রাখেন। কখনো কখনো, এই
অর্থের প্রয়োগ তার শাব্দিক অর্থের সাথে সামজস্যপূর্ণ।
কিছু
মুফতি খামরকে এই বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন,
“যে কাপড় মাথা, কপাল ও ঘাড় ঢেকে রাখে।”
হিজাব
ও খিমারের মাঝে পার্থক্য হলো,
হিজাব হলো এমন কাপড় যা নারীর সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখে আর সাধারণত
খিমার দ্বারা এমন কাপড়কে বোঝানো হয়, যার দ্বারা তার মাথা
ঢেকে রাখা হয়।
‘নিকাব’
হচ্ছে এমন কাপড় যা একজন নারীর মুখ ঢেকে রাখে (তানতাকিব)।
হিজাব
ও নেকাবের মাঝে পার্থক্য হচ্ছেনঃ হিজাব দ্বারা একজন নারীর সম্পূর্ণ শরীর ঢাকা হয়।
অপরদিকে নেকাব দিয়ে একজন নারীর শুধুমাত্র মুখ ঢাকা হয়।
শরীয়ত
সম্মত একজন নারীর পোশাক হচ্ছে,
যা তার মাথা, মুখ ও সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে
রাখে।
কিন্তু
নেকাব ও বোরখা – যা কিনা একজন নারীর শুধু চোখ দেখা যায় – নারীদের
মধ্যে ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। অবশ্য তাদের মাঝে অনেকেই এটা ঠিকমতো পড়েন না। বোরখা
ও নেকাবকে ইসলামিক উৎস
থেকে নেওয়া এমন কিছু মনে করে কিছু আলেম একে পড়তে নিষেধ করেছেন। এর কারণ অনেকে এটা ঠিকভাবে
পড়েন না যার ফলে মানুষ একে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে করেনা এবং এর প্রতি অবহেলা করে।
অনেকেই এমন নেকাব আবিষ্কার করছে যা শরীয়ত অনুমোদন দেয়না। এই সমস্ত নেকাবে চোখ খোলা
রাখতে গিয়ে গাল, মুখ ও কপালের অংশ উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে।
নারীদের
নেকাব ও বোরখা যদি এমন হয় যা শুধুমাত্র তার দুই চোখ উন্মুক্ত রাখে, আর শুধুমাত্র বাঁ চোখের
সমানই উন্মুক্ত রাখা হয় – যেইরকম সাহাবাদের কাছ থেকে
বর্ণিত হয়েছে, তাহলে সেটা ব্যবহার করার অনুমতি আছে। আর
যদি এইরকম না হয়, তাহলে নারীকে এমন কোনো কিছু পড়তে হবে যা
তার পুরো মুখ ঢেকে রাখে।
শায়খ
মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন (রহঃ) বলেনঃ
শরীয়ত
সম্মত হিজাবের অর্থ হচ্ছেঃ একজন নারী তার সম্পূর্ণ আওরাহ (দেহের এমন অংশ যা
প্রদর্শন করা তার জন্য হারাম) ঢেকে রাখবেন। একজন নারীর উচিত হচ্ছে তার জন্য যা
ঢেকে রাখা ফরয তা ঢেকে রাখে,
এর মধ্যে প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার চেহারা। কারণ
একজন নারীর চেহারাই হচ্ছে তার প্রতি কামনা বাসনার মূলবিন্দু।
একজন
নারীর জন্য ওয়াজিব হচ্ছে সে তার চেহারা এমন কোনো পুরুষের সামনে প্রকাশ করবেনা, যে তার গায়ের মাহরাম।
এথেকে আমরা জানতে পারি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চেহারা
ঢেকে রাখা। এর অনেক দলীল রয়েছে কুরানুল কারীমে, রাসুল্লাহ
(সাঃ) এর সুন্নাতে ও সাহাবা, পূর্ববর্তী ইমাম ও আলেমদের
ফতওয়াতে। এইগুলোর উপর ভিত্তি করে বুঝা যায়, একজন নারীর
জন্য ওয়াজিব হচ্ছে তার সমস্ত শরীর একজন গায়ের মাহরামের সামনে ঢেকে রাখা।
ফাতাওয়া
আল-মার’আহ
আল-মুসলিমাহ, ১/৩৯১, ৩৯২।
শায়খ
সালিহ আল-ফওজান (হাফিঃ) বলেনঃ
দলীলের
উপর ভিত্তি করে সঠিক ফতওয়া হচ্ছে,
একজন নারীর চেহারা তার আওরাহ যা কিনা অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে। এটা
তার শরীরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংগ। কারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি একজন নারীর চেহারাকেই
দেখে, তাই একজন নারীর চেহার হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
আওরাহ। এই যুক্তি হলো শরীয়াতের দলীলগুলো ছাড়াই অন্য আরেকটা যুক্তি – একজন নারীর চেহারা ঢেকে রাখা তার জন্য ওয়াজিব এই কথা প্রমানের জন্য।
উদাহরণ
স্বরূপ আল্লাহ বলেন,
“(হে নবী
আপনি) ঈমানদার নারীদেরকে বলুনঃ তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন
অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা
ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না ‘জুয়ুবিহিন্নাহ’ (শরীর, চেহারা, ঘাড় ও বুকের) উপর ফেলে রাখে...”
সুরা
আন-নূর, আয়াত
৩১।
ওড়না
জুয়ুবের উপর ফেলে রাখার মাঝে মুখ ঢেকে রাখাও অন্তর্ভুক্ত।
আব্দুল্লাহ
ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে নিচের এই আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলোঃ
“হে নবী!
আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিন নারীদেরকে বলুনঃ তারা যেন তাদের
চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়।”
সুরা
আল-আহজাব, আয়াত
৫৯।
তখন
ইবনে আব্বাস (রাঃ) তিনি তার চেহারা ঢাকলেন, শুধুমাত্র এক চোখ ছাড়া।
তার মানে এই আয়াত থেকে বোঝা যাচ্ছে এই আয়াত দ্বারা ঢেকে রাখা দ্বারা চেহারাও ঢেকে
রাখতে আদেশ করা হয়েছে। এই তাফসীর বর্ণিত হয়েছে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে।
এই
ব্যপারে সুন্নাতে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ইহরামে
থাকা অবস্থায় নারীদের জন্য চেহারা ঢেকে রাখা (নেকাব পড়া) অথবা বোরখা পড়া নিষিদ্ধ।
তার
মানে এইনা যে একজন নারী ইহরাম অবস্থায় তার নেকাব বা বোরখা খুলে একজন গায়ের মাহরাম
পুরুষের সামনে তার চেহারা উন্মুক্ত রাখবেন। বরং তিনি নেকাব বা বোরখা ছাড়া অন্য
কোনো কিছু দিয়ে পর্দা করবেন,
যেমনটা আয়িশাহ (রাঃ) এর হাদীস থেকে বর্ণিত হয়েছে।
মা
আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে ইহরামে থাকা অবস্থায় ছিলাম।
পথচারীগণ আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করত। তারা আমাদের নিকট আসলে আমরা মাথার উপর
থেকে খিমার চেহারার উপর ফেলে দিতাম। তারা চলে গেলে সেটা উঠিয়ে নিতাম।
সুনানে
আবু দাউদঃ ১৮৩৩, ফাতহুল বারী ৩/৪৭৪।
নারীদের
জন্য ইহরামে থাকা অবস্থাতে বা অন্য সময়েও ওয়াজিব হচ্ছে গায়ের মাহরাম পুরুষের সামনে
তাদের চেহারা ঢেকে রাখা,
কারণ তাদের চেহারাই হচ্ছে পুরষদের জন্য আকর্ষণীয় এমন সৌন্দর্যের
কেন্দ্র...
ফাতাওয়া
আল-মার’আহ
আল-মুসলিমাহ, ১/৩৯৯।
শায়খ
ফওজান আরো বলেনঃ শুধুমাত্র দুই চোখ খোলা থাকে এমন বোরখা ও নেকাব দিয়ে নারীদের জন্য
চেহারা ঢেকে রাখা জায়েজ,
কারণ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে এর প্রচলন ছিলো বলে জানা যায়।
এছাড়া এটা (নেকাব+বোরখা) জরুরত (প্রয়োজনীয়তার) অন্তর্ভুক্ত। যদি এটা সমাজে বহুল
প্রচলিত থাকে এবং শুধুমাত্র দুই চোখ ছাড়া অন্য কোনো কিছু প্রদর্শিত না হয়, তাহলে এমন কোনো কিছু দিয়ে হিজাব পর্দা করতে কোনো বাঁধা নেই।
এ
ব্যপারেই আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।।।
ফাতাওয়া
আল-মার’আহ
আল-মুসলিমাহ, ১/৩৯৯।
Hiç yorum yok:
Yorum Gönder