Friday 22 August 2014

একটি শিক্ষনীয় ঘটনাঃ


জনৈক আলেম একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তা হচ্ছে কোন একজন ছাত্র দীর্ঘ দিন তার উস্তাদের কাছে ইলম অর্জন করার পর যখন বিদায় নিয়ে দেশে চলে যাচ্ছিল তখন উস্তাদ ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কত বছর তুমি আমার কাছে অবস্থান করেছ? ছাত্র বললঃ ৩৩ বছর!!!

উস্তাদ বললেনঃ এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তুমি আমার কাছ থেকে কতটুকু উপকৃত হয়েছো?
ছাত্র বললঃ আমি আপনার নিকট থেকে মাত্র ছয়টি মাসআলা শিখেছি।
উস্তাদ বললেনঃ এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে মাত্র ছয়টি মাসআলা শিখেছো? ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমি মনে করি তোমার মধ্যে আল্লাহর ভয় বলতে কিছু নেই?
ছাত্র বললঃ আমি সত্য বলছি, মিথ্যা নয়।
উস্তাদ এবার বললেনঃ আচ্ছা বলো তো কী সেই মাসআলা ছয়টি?
এবার ছাত্র বলতে লাগলঃ
১. আমি দেখলাম দুনিয়ার মানুষের মধ্যে শুধু হিংসা আর হিংসা। একজন আরেকজনের সাথে হিংসা করে। কেউ কাউকে ভালবাসেনা। আর আমি যখন আল্লাহর এই বাণী পাঠ করলামঃ
﴿وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَىٰ سُرُرٍ مُّتَقَابِلِينَ
“আমি জান্নাতীদের অন্তর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ ও মনোমালিন্য সম্পূর্ণরূপে বের করে দেবো, তারা পরস্পর ভাই ভাইয়ে পরিণত হয়ে মুখোমুখি আসনে বসবে৷ (সূরা হিজরঃ ৪৭)
তখন দুনিয়ার সুখ-সামগ্রী বর্জন করে আমি জান্নাত যাওয়াকেই প্রাধান্য দিলাম। উস্তাদ তখন জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোন আমলের বিনিময়ে জান্নাতে যেতে চাও? ছাত্র বললঃ আমি আল্লাহ্ তাআলার এই বাণী পাঠ করেছি,
وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ
“আর যারা তাদের প্রভুর সামনে হাজির হওয়ার ব্যাপারে ভয় পায় তাদের প্রত্যেকের জন্য আছে দু’টি করে জান্নাত৷ আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ
وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى (৪০) فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى (سورة النازعات)
“আর যে ব্যক্তি নিজের রবের সামনে এসে দাঁড়াবার ব্যাপারে ভীত হলো এবং নফসকে খারাপ কামনা থেকে বিরত রাখলো তার ঠিকানা হবে জান্নাত।
সুতরাং আমি আল্লাহকে ভয় করি। সেই সাথে জান্নাতের আশা নিয়ে আল্লাহর ভয়েই আমি আমল করি। আর আমি আমার নফস থেকে খারাপ চিন্তা ও কুপ্রবৃত্তি বের করে ফেলেছি এবং নফসকে একদম সোজা করে ফেলেছি।
২. আমি দেখলামঃ দুনিয়ার প্রত্যেকেই একজন করে খাস বন্ধু গ্রহণ করে। আমিও একজন বন্ধু খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু দেখলাম সেই বন্ধুও এক সময় আলাদা হয়ে যাবে। কারণ মৃত্যুর সময় কারো বন্ধুই সাথে যায়না। একমাত্র তার আমলই সাথে যায়। তাই আমি দুনিয়ার কোন মানুষকে বন্ধু না বানিয়ে শুধু আখেরাতের আমলকেই বন্ধু বানালাম। উস্তাদ বললেনঃ তুমি খুব ভাল করেছ।
৩. আমি দুনিয়ার মানুষের মধ্যে দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম, তাদের প্রত্যেকেরই এমন কিছু জিনিষ আছে, যা সে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু আমি দেখলামঃ সেই লুকায়িত জিনিষটিও কখনো দুনিয়ার চুর-ডাকাতেরা নিয়ে চলে যায়। তাই আমি যখন দেখলামঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য আমল করে, সেই আমল কখনো নষ্ট হয়না, কোন চুর-ডাকাত তা চুরি করতে পারেনা। আল্লাহ তাআলা তার বিনিময় পুরাপুরি দান করেন। তাই আল্লাহর জন্য আমল করাকেই সর্বাধিক প্রিয় মনে করলাম।
৪. আমি যখন দেখলাম দুনিয়ার মানুসেরা রিযিকের জন্য মারামারি, কাটাকাটি করছে এবং পরস্পর হিংসা করছে। আর আমি যখন আল্লাহর এই বাণী পেলামঃ
﴿أَهُمْ يَقْسِمُونَ رَحْمَتَ رَبِّكَ ۚ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُم مَّعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۚ وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ﴾
“তারা কি তোমার রবের রহমত (রিযিক) বণ্টন করে? দুনিয়ার জীবনে এদের মধ্যে জীবন যাপনের উপায় উপকরণ আমি বণ্টন করে দিয়েছি এবং এদের মধ্য থেকে কিছু লোককে অপর কিছু লোকের উপর অনেক বেশী মর্যাদা দিয়েছি”। (সূরা যখরুফঃ ৩২)
তখন থেকে রিযিকের জন্য বেশী হাহুতাশ করা এবং টেনশন করা সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দিয়েছি।
৫. আমি যখন দেখলাম দুনিয়ার মানুষেররা পরস্পরকে শত্রু মনে করে এবং তাদের কেউ অন্য কাউকে দেখতে পারেনা এবং যখন আল্লাহ তাআলার এই বাণী পাঠ করলামঃ
﴿إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا ۚ إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيرِ﴾
“আসলে শয়তান তোমাদের শত্র“, তাই তোমরাও তাকে নিজেদের শত্র“ ই মনে করো৷ সেতো নিজের অনুসারীদেরকে নিজের পথে এ জন্য ডাকছে যাতে তারা দোজখীদের অন্তরভুক্ত হয়ে যায়”। (সূরা ফাতিরঃ ৬)
আল্লাহর এই বাণী উপলব্ধি করার পর আমি মানুষের সাথে শত্রুতা পোষণ করা বাদ দিয়ে কেবল শয়তানকেই আমার একমাত্র শত্রু মনে করলাম।
৬. আমি দেখলাম দুনিয়ার মানুষেরা টাকা-পয়সা, গাড়ি-ঘোড়া, দুনিয়ার মানুষ ও অন্যান্য সম্পদের উপর নির্ভর করে এবং দুনিয়ার বিপদাপদকে ভয় করে। আর আমি যখন দেখলাম এগুলো চিরস্থায়ী নয় এবং যখন দেখলাম
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا (২) وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
“যে ব্যক্তিই আল্লাহকে ভয় করে চলবে আল্লাহ তার জন্য কঠিন অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দেবেন এবং এমন পন্থায় তাকে রিযিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না৷ যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট৷ আল্লাহ তাঁর কাজ স¤পূর্ণ করে থাকেন”। (সূরা তালাকঃ ২)
তখন আমি দুনিয়ার সব কিছু বাদ দিয়ে কেবল আল্লাহর উপর ভরসা করতে লাগলাম। তখন উস্তাদ বললেনঃ তুমি অত্যন্ত উত্তম শিক্ষা গ্রহণ করেছ।
আল্লাহই ভাল জানেন।
Collected from শায়খ আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানী, শায়খের আইডিঃ
https://www.facebook.com/abdullahshahed.almadani?fref=ts


No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...